/indian-express-bangla/media/media_files/2025/08/15/rashbehari-2025-08-15-08-42-48.jpg)
79th Independence Day: বীরবিপ্লবী রাসবিহারী বসুর মূর্তি ও তাঁর নামাঙ্কিত ফলক।
79th Independence Day-Rashbehari Bose:ভারতের স্বাধীনতার জন্য লড়াই আন্দোলনে নেমে ব্রিটিশদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিলেন বিপ্লবী রাসবিহারী বসু। ভারত থেকে ব্রিটিশদের উৎখাতের লক্ষ্যে তিনি তৈরি করে ছিলেন আজাদহিন্দ বাহিনী। দেশ বরেণ্য এহেন এক বিপ্লবী আজ নিজ ভূমেই যেন ব্রাত্য।
তার ছাপ বঙ্গের ভূমি দফতরের রেকর্ডেও প্রকটভাবে ধরা পড়েছে। পূর্ব বর্ধমানের রায়নার বড়বৈনান অঞ্চলের সুবলদহ গ্রামে রয়েছে বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর জন্ম ভিটে। কিন্তু ভূমি দফতরে থাকা ওই ভিটের বর্তমান ’রেকর্ডে’ রাহবিহারী বসুর নাম নিশানা টুকুও আর নেই।এমন ঘটনায় স্তম্ভিত বিপ্লবীর অনুরাগীরা।তারাই এখন বিপ্লবীর সম্পত্তি রক্ষার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
দেশের স্বাধীনতার লড়াইয়ে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে একই সারিতে উচ্চারিত হয় রাসবিহারী বসুর নাম।তিনি ১৮৮৬ সালের ২৫ মে রায়নার বড়বৈনান গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত সুবলদহ গ্রামে জন্মগ্রহন করেন।তাঁর পিতার নাম বিনোদ বিহারী বসু এবং মাতার নাম ভুবনেশ্বরী দেবী।রাহবিহারী বসুর পিতার কর্মক্ষেত্র ছিল হাগলীর চন্দননগর। সেই কারণে সেখানেই কাটে রাসবিহারী বসুর শিক্ষা জীবন ।
দেশের পরাধীনতা রাসবিহারী বসুকে ব্যাথিত করতো।সেই থেকেই তিনি নানা বিপ্লবী কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েন। ১৯০৮ সালে আলীপুর বোমা বিস্ফোরণ মামলায় তিনি অভিযুক্ত হন। কারাগার থেকে মুক্তিলাভের পর তিনি উত্তরাখণ্ড রাজ্যের দেরাদুনে চলেযান।সেখানে গিয়ে তিনি বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের হেডক্লার্ক হিসেবে কাজ শুরু করেন।তবে,এখানেও তিনি আন্দোলন বিমুখ থাকেন নি।দেরাদুনে থেকেই তিনি গোপনে বাংলা,উত্তর প্রদেশ ও পাঞ্জাবের বিপ্লবীদের সংস্পর্শে আসেন।
এখানেই থেমে থাকেনি রাসবিহারী বসুর বিপ্লবী আন্দোলনের কর্মকাণ্ড।তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের একজন বিপ্লবী নেতা এবং ’ইণ্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির’ সংগঠক হিসাবেও পরিচিতি লাভ করেন।দিল্লিতে গভর্নর জেনারেল ও ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ এর ওপর বোমা হামলায় নেতৃত্ব দানের কারণে তাঁকে গ্রেফতারের চেষ্টা করে ব্রিটিশ পুলিশ।
কিন্তু তারা তা পারে না।ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার নজর এড়িয়ে ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের ১২ মে তিনি কলকাতার খিদিরপুর বন্দর থেকে জাপানি জাহাজ 'সানুকি-মারু' সহযোগে ভারতবর্ষ ত্যাগ করেন। তার আগে তিনি নিজেই পাসপোর্ট অফিস থেকে রবীন্দ্রনাথের আত্মীয়,রাজা প্রিয়নাথ ঠাকুর ছদ্মনামে পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন।মূলত রাসবিহারী বসুর আবেদনেই জাপানি কর্তৃপক্ষ ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের পাশে দাঁড়ায় এবং ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় সমর্থন যোগায়।
রাসবিহারী বসু ১৯৪২ সালে জাপানে আজাদ হিন্দ বাহিনী গঠন করেছিলেন।যার উদ্দেশ্য ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করা। সেই লড়াইয়ে আজাদ হিন্দ ফৌজকে জাপান ভীষণভাবে সমর্থন করেছিল। ১৯৪৫ সালের ২১ জানুয়ারী রাসবিহারী বসুর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগে রাসবিহারী বসুকে জাপান সরকার সম্মানসূচক ‘Second Order of the Merit of the Rising Sun’ খেতাবে ভূষিত করে।
আরও পড়ুন-Independence Day 2025:বর্ধমানের বিপ্লবীদের অম্লান গৌরব: আজও শিহরণ জাগায় ঐতিহাসিক কীর্তি
দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর নাম । দেশ ও জাতি আজও এই বেরেণ্য বিপ্লবীকে স্মরণ করে । কিন্তু এত সবের মধ্যেও নিজ ভূমেই ব্রাত্য রাসবিহারী বসু। জন্মভূমি সুবলদহ গ্রামে থাকা পৈত্রিক ভিটের সরকারি রেকর্ড ( মৌজা- সুবলদহ/জে,এল নম্বর-১৯৪ / দাগ নম্বর-৩১৫৭) থেকেও তাঁর নাম কাটা গিয়েছে। সেই কারণে ওই ভিটেতে রাসবিহারী বসুর স্মৃতি ধরে রাখার মতো কিছু করা যাচ্ছে না।
তাই দেশের স্বাধীনতার ৭৮টা বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর জন্মভিটে অবহেলা ও অনাদরে পড়ে আছে। স্থানীয় বাসিন্দারা চান বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর সম্মান রক্ষার জন্য এগিয়ে আসুক সরকার। এমন ঘটনা যথেষ্টই হতাশ করেছে সুবলদহ গ্রামের বাসিন্দাদের ।
এমনটা মেনে নিতে না পরে সুবলদহ গ্রামের বেশ কিছু বাসিন্দা ব্লকের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন।গ্রামবাসী তথা রাসবিহারী বসু ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের সদস্য মনসুর রহমান সাহানা জানান ,“RS এবং CS রেকর্ডে সুবলদহ মৌজায় ৩১৫৭ দাগ নম্বরের সম্পত্তির মালিক হিসাবে রাসবিহারী বসু, বিজনবিহারী বসু এবং বিপিনবিহারী বসুর নাম নথিভুক্ত ছিল। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে LR রেকর্ডে একই দাগের সম্পত্তিতে এঁনাদের পরিবর্তে অন্য দু“জনের নাম রেকর্ড ভুক্ত হয়েছে।এটা কোন জাদুতে হল সেটাই বুঝে উঠতে পারা যাচ্ছে না।রেকর্ড সংশোধন করে বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর ১০ শতক সম্পত্তি যাতে তাঁর নামেই ফিরে আসে তারজন্য ব্লকের ভূমি দফতরে আর্জি জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা। একই আর্জি প্রশাসন এবং এলাকার জনপ্রতিনিধিদের কাছেও রেখেছেন গ্রামবাসীরা’।
গ্রামবাসীদের আনা অভিযোগ যথার্থ বলে বলে দাবি করেছেন,রায়নার বিধায়ক শম্পা ধারা। তিনি বলেন,এমন ঘটনা সত্যি লজ্জার।যে বিপ্লবী দেশের স্বাধীনতার জন্য এত লড়াই করলেন তাঁরই জন্ম ভিটের দাগ নম্বরের সরকারি রেকর্ডে আজ আর তাঁর নাম নেই। এমন ঘটনা দেশ বরেণ্য বিপ্লবীর প্রতি অবমাননারই সামিল।
আরও পড়ুন- Congress:কংগ্রেসে ভাঙনের সুর, সভাপতি পদে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি-পুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের নিয়োগে ক্ষোভ
শম্পা ধারা আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন ,“সুবলদহ গ্রামে থাকা বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর জন্ম ভিটায় একটা মিউজিয়াম গড়ে তোলা সহ নানা উন্নয়ন মূলক কাজ করার উদ্যোগ আমি নিয়েছিলাম। কিন্তু ভূমি দফতরের সরকারি LR রেকর্ডে রাসবিহারী বসুর নাম উধাও হয়ে থাকার করণে তা করা যাচ্ছে না ।এই বিষয়টি নিয়ে আমিও প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। আমি চাই যত দ্রুত সম্ভব ভূমি দফতর রেকর্ড সংশোধন করে রাসবিহারী বসুর নাম সরকারি রেকর্ডে ফিরিয়ে আনুক।"
মনসুর রহমান সাহানা বৃহস্পতিবার বলেন, “ব্লকের বিডিও এবং মহকুমা শাসক বিষয়টি দেখছেন। আমরা আশাবাদী প্রশাসন গোটা বিষয়টি অনুসন্ধান করে দেখে বিপ্লবীর জন্ম ভিটের সরকারী রেকর্ডে ফের বিপ্লবীর নাম নথিভুক্ত করার ব্যবস্থা করবেন।"