/indian-express-bangla/media/media_files/2025/08/14/gopalpur-school-2025-08-14-19-22-49.jpg)
Gopalpur Muktakeshi School: শতাব্দী প্রাচীন এই স্কুলকে কেন্দ্র করে আজও জোর চর্চায় দেশের স্বাধীনতার লড়াইয়ের নানা গল্প!
79th Independence Day:দেশ সেই সময়ে ছিল পরাধীন। বিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতায় দেশ জুড়ে তখন চলছে গান্ধীজীর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন। দেশ স্বাধীন করার সংকল্প নিয়ে জীবন বাজি রেখে সেই আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন বিপ্লবীরা।ওই আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ তখন আছড়ে পড়েছিল পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার গোপালপুর গ্রামে।সেই বৈপ্লবিক যুগ সন্ধিক্ষনে অসহযোগ আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে ১৯২২ সালে প্রতিষ্ঠা লাভকরে গোপালপুর মুক্তকেশী বিদ্যালয়।বিদেশী সংস্কৃতি ও ভাবধারা পরিহার করে স্বদেশী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার শপথ নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়া বিদ্যালয়ে আজও রবিবার চালু থাকে পঠনপাঠন।সোমবার থাকে পূর্ণ দিবস ছুটি।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর স্বাধীনতার ৭৮ তম বর্ষ অতিক্রান্ত হয়েছে।শুক্রবার দেশজুড়ে পালিত হবে ৭৯তম স্বাধীনতা দিবস।কিন্তু তাতে কি!প্রতিষ্ঠাতার দেশ প্রীতির ভাবনাকে মান্যতা দিয়ে আজও প্রতিষ্ঠা কালের নিয়ম মেনেই চলছে গোপালপুর মুক্তকেশী বিদ্যালয়।প্রতিষ্ঠার পর থেকে শতবর্ষ পার হয়ে যাবার পরেও প্রতিষ্ঠাতার সম্মানার্থে এই নিয়মের কোন পরিবর্তন আনতে চান না বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নিজস্ব স্বকীয়তায় গোপালপুর মুক্তকেশী বিদ্যালয় এই রাজ্যের ’হেরিটেজ’ বিদ্যালয় হিসাবেই নিজের পরিচিতি গড়ে নিয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র সমীর কুমার ঘোষাল বর্তমানে এই বিদ্যালয়েরই শিক্ষক। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাস উল্লেখ করে তিনি বলেন, “গোপালপুর গ্রাম প্রাক স্বাধীনতা যুগে অশিক্ষা এবং অনুন্নয়নের অন্ধকারে ঢাকা ছিল। শিক্ষা লাভের জন্য তখন গ্রামে নুন্যতম একটা পাঠাশালা পর্যন্ত ছিলনা।গোপালপুর গ্রাম নিবাসি দেশপ্রেমিক অবিনাশ চন্দ্র হালদার দেশীয় ভাষায় নিজের গ্রামের মানুষজনকে শিক্ষার আলোকে আনার সংকল্প গ্রহন করেন।
তিনি নিজের জমিতেই বিদ্যালয় গড়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেইমত খেজুর গাছের কাটা গোড়া,বাঁশ ও খড় দিয়ে অবিনাশ বাবু তৈরি করে ফেলেন একটি আটচালা। ১৯২২ সালের ৫ জানুয়ারী সেখানেই শুরু হয় পঠন পাঠন। নিজের আরাধ্য দেবী মুক্তকেশী স্মরনে রেখে অবিনাশ হালদার তাঁর প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ের নাম রাখেন গোপালপুর মুক্তকেশী বিদ্যালয়।
সমীর ঘোষাল আরও জানান,“দীর্ঘ প্রচেষ্টায় বিদ্যালয় গড়ে উঠলেও ইংরেজী পঠনপাঠন না থাকায় তদানিন্তন সময়ে এই বিদ্যালয়টিকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় স্বীকৃতি দেয়নি।তবে তাতে দমে জাননি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতা। প্রথম দিকে বিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের উপস্থিতি ছিলনা বললেই চলে।তবুও হাল ছাড়েননি অবিনাশ বাবু। এই সময় তাঁর মহতি উদ্যোগ সফল করতে পাশে দাঁড়ান গ্রামেরই রাজবল্লত কুমার,বিজয় কৃষ্ণ কুমার, ভূষন চন্দ্র হালদার প্রমুখরা। এই সকল ব্যক্তিদের সম্মিলিত আহ্বানে সাড়া দিয়ে কিছু কিছু অভিবাবক তাঁদের সন্তানদের এই বিদ্যালয়ে পড়াতে পাঠানো শুরু করেন। হালদার মহাশয় নিজের হাতে রান্না করে বিদ্যালয়ে পড়তে আসা পড়ুয়াদের খাওয়াতেন।
আরও পড়ুন- ISKCON:শিয়ালদহ থেকে AC লোকাল ট্রেনে সরাসরি মায়াপুর ISKCON-এ? স্বপ্নের সফর নিয়ে চর্চা তুঙ্গে
এত কিছুর পরেও এলাকায় শিক্ষিত লোক কম থাকায় তদানিন্তন সময়ে বিদ্যালয়ে পড়ানোর জন্য শিক্ষক খুঁজে পাওয়া দুরহ হয়ে উঠেছিল। অবশেষে স্থানীয় নুদীপুর গ্রাম নিবাসি শিক্ষাবিদ ভূপেন্দ্রনাথ নায়েক এই বিদ্যালয়ের ছাত্রদের পড়ানোর ভার নিজের কাঁধে তুলে নেন। নিষ্ঠার সঙ্গে তিনি আমৃত্যু এই কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। ধীরেধীরে বিদ্যালয়ে পড়ুয়া সংখ্যা বাড়তে থাকে।তারপর থেকে বিদ্যালয় চালানোর জন্য অর্থ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে শুরু করেন গ্রামেরই অনেক মানুষজন“।
বিদ্যালয়ের পরিচালন কমিটির সদস্য পূর্ণেন্দু দাস জানিয়েছেন,“খড়ের ছাউনির আটচালায় শুরু হওয়া বিদ্যালয় এখন আকার আকৃতিতে নজরকাড়া বিদ্যালয়ের রূপ পেয়েছে।দ্বিতল পাকা বাড়ির বিদ্যালয়ে এখন শ্রেণী কক্ষ সংখ্যা চল্লিশেরও বেশী। প্রতিষ্ঠা লগ্নে পড়ুয়া জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হলেও এখন উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে উন্নিত হওয়া এই বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রী সংখ্যা প্রায় ৯ শোর কাছাকাছি।
আরও পড়ুন- Independence Day 2025:বর্ধমানের বিপ্লবীদের অম্লান গৌরব: আজও শিহরণ জাগায় ঐতিহাসিক কীর্তি
বিদ্যালয়ের পঠন পাঠন ভার সামলাচ্ছেন ২৫ জন শিক্ষক।সরকারি অর্থানুকূলো বিদ্যালয়ের পরিকাঠামোগত উন্নয়নও ঘটেছে।রাজ্যে প্রতিটি বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রী ও শিক্ষকরা রবিবার ছুটি উপোভোগ করেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠাতার ভাবনা কে মান্যতা দিয়ে স্বাধীনতার ৭৮ বছর অতিক্রান্ত হবার পরেও ঐতিহ্যশালী এই বিদ্যালয় রবিবার ছাত্র ছাত্রী কোলাহলে মুখর থাকে। নাসিরুল হক গর্বের সঙ্গে বলেন,“ব্যতিক্রমি এই ঐতিহ্য বজায় রেখেই এরাজ্যে গোপালপুর মুক্তকেশী বিদ্যালয় এক কিংবদন্তি বিদ্যালয় হিসাবে পরিচিতি পেয়ে আসছে“।
এই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী কোয়েল বারিক এবং দ্বাদশ শ্রণীর ছাত্র রবিলাল পাল জানায়, “ইতিহাস বই পড়ে তাঁরা স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস জেনে থাকে। কিন্তু অসহযোগ আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে প্রতিষ্ঠিত তাঁদের গোপালপুর মুক্তকেশী বিদ্যালয় নিজেই ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।এই বিদ্যালয়ের সকল ছাত্র ছাত্রী,শিক্ষক শিক্ষিকারা এখনও স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস কে জিইয়ে রেখেছেন“।সৌম্যদীপ ও পায়েল এও জানায়,“অন্য স্কুলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাঁদের স্কুল রবিবার ছুটি না হয় নাই থাকুক। তাঁরা সকল ছাত্র ছাত্রীরা চায় সবার আগে বিদ্যালয়ের ঐতিহ্যকেই গুরুত্ব দিতে ।কেননা তাঁদের বিদ্যালয় শুধু মাত্র জেলার ঐতিহ্যশালী বিদ্যালয়ই নয়,রাজ্যের অন্যতম ঐতিহ্যশালী বিদ্যালয়ও বটে“।
আরও পড়ুন- Jammu kashmir Cloudburst: প্রকৃতির তান্ডবলীলা, মৃত্যুমিছিল...! উপত্যকা জুড়ে শোকের ছায়া
বিদ্যলয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ড. সুমন্ত ঘোষ জানিয়েছেন,“অসহযোগ আন্দোলন কে সমর্থন জানিয়ে ইংরেজ সংস্কৃতির বিরোধীতায় এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯২২ সালে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা কালীন প্রথম ’রেজিলিউশনে’ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল,’রবিবার বিদ্যালয়ে পঠন পাঠন চালু রাখতে হবে। সোমবার থাকবে পূর্ণ দিবস ছুটি’। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতাদের এই সিদ্ধান্ত কে আজও লঙ্ঘন করা হয়নি।বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক, ছাত্র ছাত্রী, অভিবাবক এবং সর্বোপরি গোপালপুর গ্রামের সকল বাসিন্দা এই ঐতিহ্য কে ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর।এমন এক ঐতিহ্যশালী বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে পেরে নিজে গর্ববোধ করেন বলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুমন্ত ঘোষ জানিয়েছেন।