Advertisment

Kali Puja 2024: মুঘল সেনাপতির দৌরাত্ম্যে মাটির নীচে অষ্টধাতুর বিগ্রহ, মৃন্ময়ী মূর্তিতেই শ্যামার আরাধনা ঘোষালবাড়িতে

Kali Puja 2024: প্রাচীন এই কালীপুজোর নেপথ্যে অবাক করা নানা কাহিনী রয়েছে। আজও পুরনো রীতি মেনে কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের বিশেষ দিনে শ্যামা মায়ের আরাধনা হয় এই বাড়িতে।

author-image
Joyprakash Das
আপডেট করা হয়েছে
New Update
kali puja 2024,murshidabad bazarsau ghoshalbari puja,murshidabad,bazarsau ghoshalbari kali puja,Murshidabad News, কালী পুজো ২০২৪, মুর্শিদাবাদ বাজারসৌ ঘোষালবাড়ি কালীপুজো,বাজারসৌ ঘোষালবাড়ি কালী পুজো, মুর্শিদাবাদের খবর

ঘোষাল বাড়ির কালী মূর্তি।

Kali Puja 2024: তখন মুঘল যুগ। গৌড়ের শাসক সুলায়মান খান কররানি। কররানি আমলে সেনাপতি ছিলেন কালাপাহাড়। সুবে বাংলা, ওড়িশা জুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কালাপাহাড়। জগন্নাথ মন্দিরে হামলা চালিয়ে লুঠতরাজ চালায় কালাপাহাড়। বাংলার একাধিক মন্দিরে হানা দেয় কালাপাহাড়ের দলবল। চলে লুঠপাট। অত্যাচার থেকে মন্দির রক্ষা করতে মুর্শিদাবাদের বাজারসৌ ঘোষালবাড়ির অষ্টধাতুর বিগ্রহ মাটির তলায় রেখে দেওয়া হয়। তারপর থেকেই ঘোষালবাড়ির কালী মায়ের মৃন্ময়ী রূপ। কালের নিয়মে ঘোষালবাড়ি এখন ঘোষালপাড়ায় পরিণত হয়েছে। পুরানো ঐতিহ্য মেনেই কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের বিশেষ দিনে জাঁকজমকপূর্ণভাবে পুজো হয়ে আসছে।

Advertisment

ঘোষালবাড়ির কালী পুজোর ইতিহাস:

প্রয়াত চণ্ডীদাস ঘোষাল, সুর্নিমল ঘোষাল, উদয় ঘোষালের কাছে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাজারসৌ ঘোষালদের আদি ভিটে ছিল দক্ষিণেশ্বরের পাশে আড়িয়াদহে। সেখান থেকে আট পুরুষ আগে রাম যাদব ঘোষাল বাজারসৌ আসেন। কান্দির জেমোর জমিদারের অধীনে ছিল এই এলাকা। ওই জমিদারদের আমলেই মোড়পতলার দুর্গামন্দির, দুটি শিব মন্দির, বর্তমান ঘোষালপাড়ার পাশে শিবপুকুর পাড়ে তিনটি শিব মন্দির নির্মিত হয়েছিল। আর মন্দিরের সেবাইত ছিলেন রামযাদব। শিবপুকুরের পাড়ে শিব মন্দিরের আশপাশে ছিল বসতভিটে। বসতভিটের কাছেই একচালার মন্দির তৈরি করে শুরু হয়েছিল কালীপুজো। তবে, নির্দিষ্ট সময়কালের নথি আর নেই। ফলে, শিবমন্দিরের পাশাপাশি কালী মন্দিরে নিত্যপুজো হত। 

সেই সময় ঘোষালদের সঙ্গে বন্দ্যোপাধ্যায়, ভট্টাচার্য, আচার্য্যরা সামিল হতেন। সেই সময় এই পুজোকে ঘিরে গোটা গ্রামের মানুষের উন্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মতো। আদি বড় মায়ের নতুন মন্দির তৈরিতে সহদেব ঘোষাল অন্যতম ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। সেই নতুন মন্দির এখনও বর্তমান রয়েছে। অন্যদিকে, পুজো সংক্রান্ত বিষয়ে মতবিরোধের জেরে ১৯৬৬ সালে পুজো ভাগ হয়ে যায়। শিবনারায়ণ ঘোষালের ফাঁকা জমিতে মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়। গৌরী-কান্তি-অনিল তিন ভাই মিলে নিজেদের জমিতে নতুন করে কালীপুজো শুরু করেন।২০১১ সালে নতুন করে মন্দির তৈরির কাজ শুরু হয়। মন্দির তৈরিতে সুনীল বন্দ্যোপাধ্যায়, করুণাসিন্ধু, দ্বিজত্তোম, দিলীপ, প্রয়াত চণ্ডী ঘোষাল, উদয় ঘোষাল, সুভাষ ঘোষাল, সুর্নিমল ঘোষালদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। পরিবারের আত্মীয়রা নতুন মন্দির তৈরিতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। 

আরও পড়ুন- Cyclone Dana News Live Updates: অসীম শক্তিতে এগোচ্ছে দানা, শেষ মুহূর্তে ল্যান্ডফলের জায়গা বদল? জানুন টাটকা আপডেট

আরও পড়ুন- Cyclone Dana Updates-Digha: ঘূর্ণিঝড়ের রুদ্র রূপ দিঘায় থেকেই দেখবেন, আজব বায়না পর্যটকদের! সমুদ্রের দিকে যেতেই...

পরিবারের সদস্য কল্যাণী ঘোষাল বলেন, "নতুন মন্দিরে সেই ঐতিহ্য মেনেই পুজো হয়ে আসছে। পুজোর দিন পরিবারের অধিকাংশ সদস্যও সারাদিন উপোস করে থাকেন। বিকেলের পর থেকে রাত পর্যন্ত চলে ভোগ রান্না। দুটি কালী মন্দিরে এখনও বলিপ্রথা অব্যাহত। তবে, মোষ বলি বহু বছর আগেই উঠে গিয়েছে।" এখন শুধু ঘোষাল পরিবারের সদস্যরা ছাগ বলি দেন।  

আরও পড়ুন- Cyclone Dana Update: রাক্ষুসে শক্তিতে এগোচ্ছে ঘূর্ণিঝড় দানা! বাংলার কোন জেলায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব?

বর্তমান প্রজন্মের আমলে কেমন হয় কালীপুজো:

ঘোষালবাড়ির বর্তমান প্রজন্মের বেশির ভাগই কর্মসংস্থানের জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকেন। পুজোর ক'দিন সকলেরই বাড়ি ফিরে আসেন। পরিবারের আত্মীয়স্বজনরাও সকলেই পুজোর ক'দিন চলে আসেন। আগের দিন থেকেই ঘোষালপাড়াকে আলোয় সাজানো হয়। প্রতিটি বাড়িতে জ্বলে ওঠে টুনি। আগে ছাদের উপর বাঁশ বেঁধে নাইট ল্যাম্প লাগিয়ে রঙিন কাগজ দিয়ে ঘিরে দেওয়া হত। সমগ্র এই উদ্যোগটাকে বলা হত 'ফনাস'। সেই সময় ঘোষালপাড়া জুড়ে 'ফনাস' টাঙানোর রেওয়াজ ছিল। সুতলির দড়িতে রঙিন কাগজ লাগিয়ে গোটা রাস্তা সাজিয়ে তোলা হত। এখন সেই রীতি উঠে গিয়েছে। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত কালীপুজোর আগের দিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হত। এছাড়া অর্কেষ্টা, বাউল গান, সাঁওতালি নাচ, ম্যাজিক শো হত। কোভিডের পর এখন আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় না।

আরও পড়ুন- Cyclone Dana Update: আমফানের থেকেও ভয়ানক শক্তিধর দানা? ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা নিয়ে কী বলল আবহাওয়া দফতর?

তবে, পুজোর আগের দিন মণ্ডপে বসে সান্ধ্যকালীন আড্ডা যা কার্যত মিলন উৎসবে পরিণত হয়। পুজোর আগের দিন ঢাক-ঢোলের আওয়াজে মন্দির চত্বর মুখরিত হয়ে ওঠে। পুজোর দিন সন্ধ্যায় গোটা ঘোষালবাড়ির ছাদ মোমবাতি জ্বালিয়ে সাজানো হয়। দুই কালী মন্দিরের সামনে ঢাক-ঢোল, সাউন্ড বক্সের আওয়াজে আর ছাদে থরে থরে সাজানো মোমবাতির আলোর রোশনায় গোটা ঘোষালপাড়া গমগম করে।

পরিবারের নবীন সদস্য সোমনাথ ঘোষাল বলেন, "পুজোর সময় সারা রাত পুজো দেখা, ভোরের দিকে মন্দিরে বসে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার আলাদা উন্মাদনা। পুজোর পরদিন প্রত্যেকের বাড়িতে পাত পেরে খাওয়া-দাওয়া হয়। পুজোর কদিন কার্যত ঘোষালপাড়া আদতে একটি  ঘোষালবাড়ির আকার নেয়। গোটা পাড়া হয়ে ওঠে একটি পরিবার। আলোর উৎসবে আদিশক্তির আরাধনায় মেতে ওঠে।"

Murshidabad Kali Puja Kali Puja 2024 bazarsau ghoshalbari kali puja
Advertisment