/indian-express-bangla/media/media_files/2025/09/24/kolkata-heavy-rain-kumartuli-durga-idol-damage-2025-09-24-12-31-18.jpg)
পুজোর আগে 'অসুর বৃষ্টি' ঘুম কেড়েছে কুমোরটুলির শিল্পীদের।
IMD Forecast: গত চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বৃষ্টিপাতের জেরে কার্যত অচল হয়ে পড়ল শহর। সোমবার রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে থমকে জনজীবন। মাথায় হাত পুজো উদ্যোক্তাদের। পুজোর আগে 'অসুর বৃষ্টি' ঘুম কেড়েছে কুমোরটুলির শিল্পীদের।
“জানি না ভগবান কেন শাস্তি দিচ্ছেন”, বেদনে ভরা কণ্ঠে আক্ষেপের সুর ধরা পড়ল কুমোরটুলির প্রতিমাশিল্পী মালা পালের গলায়। সোমবার প্রবল বর্ষণের জেরে তাঁর স্টুডিওতে ঢুকে গিয়েছে জল, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুর্গা প্রতিমা। মঙ্গলবার সকাল থেকে জলমগ্ন কুমোরটুলির সরু অলিগলি।
হাতে গোনা মাত্র কয়েকটা ঘন্টা বাকি পুজোর। তার আগে প্রবল বৃষ্টি প্রতিমাশিল্পীদের আরও বিপাকে ফেলে দিয়েছে। মঙ্গলবার ভোরে এক ঘণ্টার মধ্যে ৯৮ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া দফতর (IMD)। যদিও সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়া অনেকেই একে মেঘ ভাঙা বৃষ্টি বলে উল্লেখ করলেও আদরে এই বৃষ্টিপাত ‘ক্লাউডবার্স্ট’-এর আওতায় পড়ে না।
কুমোরটুলির প্রতিমা শিল্পী মালা পাল জানিয়েছেন, “আজ কোনও প্রতিমা ডেলিভারি দেওয়া সম্ভব হয়নি। আমার স্টুডিওতে জল ঢুকে একটি প্রতিমা নষ্ট হয়ে গিয়েছে, সেটা আবার নতুন করে বানাতে হবে। আজই সেটা এক বাড়ির পুজোয় পাঠানোর কথা ছিল।” কাজের ফাঁকে ফাঁকেই তিনি প্রতিমা মেরামতির কাজ চলছে জোরকদমে। কলকাতার রাস্তায় যখন জল জমে যানচলাচল বিপর্যস্ত, তখন কুমোরটুলির গলিতে হাঁটাচলাই প্রায় অসম্ভব।
আরও পড়ুন- জমা জলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুমিছিল কলকাতায়! 'দায় ঝাড়ছেন মুখ্যমন্ত্রী', সোচ্চার সুকান্ত
কুমোরটুলির অপর এক মৃৎশিল্পী কার্তিক পাল বলেন, “আজ সকালে ডেলিভারি বন্ধ রাখতে হয়েছে। আমরা পুজো কমিটিগুলিকে আজ আসতে নিষেধ করেছি। প্রতিমা নিয়ে যাওয়ার জন্য কোন কুলিও পাওয়া যাচ্ছে না, চারপাশে শুধু জল।” সোমবার গভীর রাতে কিছু শিল্পী প্লাস্টিক মুড়ে প্রতিমা পাঠাতে পেরেছিলেন, কিন্তু একবার জল ঢুকে পড়ার পর থেকে আর কিছু করা সম্ভব হয়নি।
মঙ্গলবার ভোর ৩টের সময় প্রতিমাশিল্পী ঝন্টু পাল ফেসবুক লাইভে দেখান, তাঁর ওয়ার্কশপে হাঁটু সমান জল। তিনি জানান, “কিছু প্রতিমা ডেলিভারি করা হলেও, কিন্তু কয়েকটি এখনও ডেলিভারি করার বাকি। এখন কী হবে জানি না, শুধু আশা করি আমাদের সমস্যাটা পুজো কমিটিগুলি বুঝবেন।” দুপুর নাগাদ জল নেমে গেলেও রাস্তায় কাদা প্যাচপ্যাচ করছে। বিকেল ৪টার পর কিছু প্রতিমা ডেলিভারির কাজ শুরু হয়।
আরও পড়ুন- কেন গাড়ির স্টিয়ারিং ডান দিকে থাকে? ৯৯% মানুষের কাছেই উত্তরটা অজানা
শুধু ওয়ার্কশপ নয়, কুমোরটুলি সার্বজনীনের পুজোর প্যান্ডেলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বৃষ্টিতে। জল ঢুকে নষ্ট হয়েছে প্লাইউডের মেঝে। ষষ্ঠী আসতে আর মাত্র কয়েকদিন বাকি, সময়মতো প্রতিটি প্রতিমা যাতে গন্তব্যে পৌঁছোয়, সেই মরিয়া লড়াই চালাচ্ছেন শিল্পীরা। তবে ফের বৃষ্টির পূর্বাভাসে উদ্বেগ আরও বেড়েছে কুমোরটুলির কারিগরদের মধ্যে। শিল্পী চায়না পাল জানান, “ওয়ার্কশপের ভেতরে রাখা সারি সারি প্রতিমা। জলের কারণে বেশ কিছু প্রতিমার ক্ষতি হয়েছে। রাস্তায় জমে থাকা জল ভেতরে ঢুকে পড়ায় প্রতিমাগুলির ক্ষতি গিয়েছে।” কুমোরটুলিতে প্রায় ১৪০টি স্টুডিওতে ৪০০-রও বেশি শিল্পী দুর্গা প্রতিমা তৈরির সঙ্গে যুক্ত। মঙ্গলের ভোরের ব্যাপক বৃষ্টিতে বেশিরভাগ শিল্পীর রাতের ঘুম উড়েছে। এখন আবহাওয়ার সঙ্গে লড়াইয়ে জেতাটাই যেন তাদের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আবহাওয়া দফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে শহরে বৃষ্টির পরিমাণ ২৫১.৪ মিমি, যা ১৯৮৬ সালের পর সর্বাধিক এবং গত ১৩৭ বছরের মধ্যে ষষ্ঠ সর্বোচ্চ। এর আগে ১৯৭৮ সালে রেকর্ড হয়েছিল ৩৬৯.৬ মিমি বৃষ্টি। এদিন দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়ার কামডহরিতে সবচেয়ে বেশি ৩৩২ মিলিমিটার এলাকায় ৩৩২ মিমি, যোধপুর পার্কে ২৮৫ মিমি বৃষ্টি রেকর্ড হয়। উত্তর কলকাতার ঠনঠনিয়ায় এলাকায় বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ১৯৫ মিমি। কালীঘাট (২৮০ মিমি) এবং বালিগঞ্জ এলাকায় বৃষ্টির পরিমাণ ছিল (২৯৫ মিমি)।
আরও পড়ুন- দেবীপক্ষে নিম্নচাপের প্রবল গর্জনে ভাসল কলকাতা, জলের তোড়ে ভাঙল শহরের বিখ্যাত পুজোমণ্ডপ
আবহাওয়া দফতর সূত্রে প্রবল বৃষ্টির কারণ হিসেবে উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপকেই দায়ি করা হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা এই সিস্টেম সক্রিয় থাকবে বলেও আবহাওয়া দফতরের তরফে জানানো হয়েছে। এর ফলে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, ঝাড়গ্রাম ও বাঁকুড়ায় আরও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ২৫ সেপ্টেম্বর আবারও বঙ্গোপসাগরে নতুন নিম্নচাপ সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। ফলে পুজোর ফের ঘনাচ্ছে আশঙ্কার কালো মেঘ।