Kolkata ISKCON on Bangladesh Situatioan: অশান্তি সৃষ্টি করার অভিযোগে বাংলাদেশে সরকার গ্রেফতার করেছে চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে। ইসকনের ভক্ত চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে উগ্রপন্থী তকমা দিয়ে আদালতে পেশ করেছিল মহম্মদ ইউনুস সরকার। হিন্দু সন্ন্যাসীর গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে একযোগে পথে নামার কর্মসূচি নিতে চলেছে ISKCON। কলকাতা ইসকনের সহ সভাপতি রাধারমন দাস (Radharaman Das) ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার প্রতিনিধির মুখোমুখি হয়ে চিন্ময়কৃষ্ণ দাস সহ একাধিক প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন অকপটে।
প্রশ্ন- চিন্ময়কৃষ্ণ দাস নিয়ে বাংলাদেশ ইসকন কর্তার মন্তব্যে জনমানসে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। মূল বিষয়টা কী?
রাধারমন দাস- আমরা জানি একটা মামলা বাংলাদেশ হাইকোর্টে ফাইল হয়েছিল। সেখানে দাবি করা হয়েছিল ইসকনকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ঘোষণা করে দেওয়া হোক ও নিষিদ্ধ করা হোক। সেই পিটিশনে পিটিশনার দাবি করেছিলেন চিন্ময়কৃষ্ণ দাস ইসকনের পদাধিকারী। যত প্রতিবাদ হচ্ছে তিনি ইসকনের পদাধিকারী হিসাবে আয়োজন করছেন। ইসকনের হাত আছে। ইসকনের ইন্ধন আছে। তাই ইসকনকে নিষিদ্ধ করা হোক। কাল বাংলাদেশ ইসকনের সাধারণ সম্পাদক চারুচন্দ্র প্রভু বলেছেন তিনি ইসকনের কোনও পদে নেই। সেটাই ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। হাইকোর্টে মিথ্যাচার করা হয়েছে। তবে তিনি ইসকনের ভক্ত। ইসকন একটা ধর্মীয় সংগঠন। আমরা মানুষের সেবা করি। আমরা রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে গেলে সারা বিশ্বে ছড়ানো সম্ভব হবে না। এটা ঠিক নয়, কোনও ধর্মীয় সংগঠন রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে থাকবে। চিন্ময়কৃষ্ণ ভক্ত প্রভু হিসাবে সংখ্যালঘুদের নেতৃত্ব দিচ্ছে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সামনে কোনও রাস্তা ছিল না।
প্রশ্ন- ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশ ইস্যু নিয়ে বক্তব্য রেখেছেন সাংসদরা। কী বলবেন?
রাধারমন দাস- ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এই বিষয়টা উত্থাপিত হয়েছে। টুইটও করেছেন অনেকে। তাঁদের ধন্যবাদ জানাই। বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক নেতারা এই ইস্যুতে প্রতিবাদ জানাক। পাশাপাশি নিজের সরকারকে বলুক বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে কথা বলতে। বংলাদেশ যদি সমাধান করতে না পারে তা হলে রাষ্ট্রসংঘের শান্তি রক্ষা প্রতিনিধি দল সেখানে পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নিক।
প্রশ্ন- রাষ্ট্রসংঘে জানাবেন?
রাধারমন দাস- হাজার হাজার মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় রাষ্ট্রসংঘকে ট্যাগ করছেন। আমার তো সেই ইচ্ছাই চলে গিয়েছে। আমি ২০২১ সালে লিখেছিলাম।
প্রশ্ন- বাংলাদেশ ইসকনের অবস্থা কেমন?
রাধারমন দাস- বাংলাদেশে সনাতনী গ্রুপ, ইসকনের ভক্ত আছেন। সবাই ব্যাকফুটে ছিল। ইসকন যেমন একটা সোসাইটি, আবার ইসকনের অনেক ভক্ত আছে। সোসাইটি আধ্যাত্মিক ভাবনা নিয়ে কাজ করে। এছাড়াও ভক্তদেরও একটা ভাবনা আছে। আমরা অরাজনৈতিক সংগঠন। ভক্তরা প্রতিবাদ করছেন। ওদের ৮ দফা দাবি আছে। বাংলাদেশে সব মিলিয়ে ১০০-র বেশি শাখা আছে। বড় মন্দিরে সবাই এসে আশ্রয় নিয়েছে। কিছু শাখায় ঝামেলা করছে হামলাকারীরা। পুলিশ উদ্ধার করে তাঁদের বড় শাখায় নিয়ে গিয়েছে। অনেক জায়গা থেকেই এমন খবর পাচ্ছি।
আরও পড়ুন- এবার আর চাইলেই সান্দাকফু যেতে পারবেন না, বদলেছে নিয়ম, ছাড়পত্র কীভাবে? জানুন বিস্তারিত
প্রশ্ন- বাংলাদেশের ইসকনের সদস্যদের কী আশ্বাস দিচ্ছেন?
রাধারমন দাস- বাংলাদেশে ইসকনের লোকজন খুব ভয়ে আছে। ভবিষ্যতে কী হবে! সেটা নিশ্চিত করতে পারছেন না। ভয়ঙ্কর সব স্লোগান দিচ্ছে। এটা খুব আতঙ্কের স্লোগান। ওরা বলছে ধরে ধরে জবাই করব। ছড়া বানিয়ে ফেলছে। নানা স্লোগানে ভয় পাচ্ছে ইসকনের ভক্তরা। সারা বিশ্বে আমাদের ১৫০-র বেশি দেশে শাখা আছে।
প্রশ্ন- আন্তর্জাতিক-স্তরের সাহায্য চাইছেন?
রাধারমন দাস- বাংলাদেশে প্রায় ৩ কোটি হিন্দু রয়েছে। ইজরায়েলে ৯০ লক্ষ ইহুদি থাকে। তার ৩ গুন আছে। তাঁরা সঙ্কটে আছে। মহিলা, বাচ্চারা ভয়ে চিৎকার করছে। আতঙ্কে শুধু চিৎকার নয়, অনেক কিছু হয়ে গিয়েছে, প্রাণ হারিয়েছে বহু। এমন বিপন্ন পরিস্থিতিতে আমরা চাই সারা বিশ্ব নিদ্রা থেকে জেগে উঠুক। ২০২১ দুর্গাপুজোর সময় তাণ্ডব চলেছিল। আমি প্রথমবার ইউনাইটেড নেশনকে জানিয়েছিলাম। প্যান্ডেল ভাঙা হয়েছে, মূর্তি ভাঙা হয়েছে। দশমীর দিন যখন ইসকনেও হামলা হল তখন আমি রাষ্ট্রসংঘকে ট্যাগ করেছিলাম। তখন দাবি করেছিলাম, ইউনাইটেড নেশনের শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠানো হোক। ২০২১ সালে সেই দাবি মানা হলে ২০২৪-এর ঘটনা ঘটত না। এর আগেও ইউনাইটেড নেশন দাঁড়ায়নি। ইউনাইটেড নেশন, হিউম্যান রাইটস বিভিন্ন সংগঠন আছে। বড়-বড় অফিস আছে। তাঁরা কী করে? তাঁদের ভূমিকা কী? সেটাই আমাদের প্রশ্ন।
প্রশ্ন- চিন্ময়কৃষ্ণ দাস সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কী?
রাধারমন দাস- খুব সাহসী ব্যক্তি। এমন লোকেরই দরকার। যখন অত্যাচার হয় আমরা মুখ ঘুরিয়ে নিই। কিন্তু এই অত্যাচার প্রত্যেকের বাড়িতে পৌঁছে যাবে। বাংলাদেশে ৬০-৭০ লক্ষের ওপর ভক্ত রয়েছে। আমরা আচার, ব্যবহারে কাউকে আঘাত করি না। এমন সম্প্রদায়কেই বাংলাদেশে টার্গেট করা হয়েছে।
প্রশ্ন- চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কা করছেন?
রাধারমন দাস- জেলে অনেক অপরাধী থাকে। সবার ভয় আছে। আমরা দেখেছি পাকিস্তানে সরবজিতের সঙ্গে কী কাণ্ড হয়েছে! চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের সুরক্ষার জন্য আমরা প্রার্থনা করছি।