/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/15/cats-2025-10-15-15-42-22.jpg)
উত্তরবঙ্গের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে রাজ্য সরকারের তরফে ত্রাণ ও পুনর্গঠন প্রক্রিয়া জোরকদমে চলছে।
উত্তরবঙ্গের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে রাজ্য সরকারের তরফে ত্রাণ ও পুনর্গঠন প্রক্রিয়া জোরকদমে চলছে। বুধবার (১৫ অক্টোবর, ২০২৫) দার্জিলিং পাহাড়ে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে বলেন, “শুধু সমালোচনা করে মানুষের দুর্দশা কমানো যায় না। যারা বিপদে পড়েছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।” তিনি আরও ঘোষণা করেন, বন্যা ও ভূমিধসে ঘর হারানো প্রতিটি পরিবারকে রাজ্য সরকারের ‘বাঙলার বাড়ি’ প্রকল্পের অধীনে ১.২ লাখ টাকা অর্থ সাহায্য করা হবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “উত্তরবঙ্গের মানুষের সাহস, দৃঢ়তা এবং আমাকে অনুপ্রাণিত করে। আমাদের রাজ্য সরকার আপনার পাশে থাকবে, প্রতিটি মুহূর্তে, প্রতিদিন, যতক্ষণ না সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে যায়।” একদিন আগে, সোমবার নাগরাকাটা পরিদর্শনকালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, উত্তরবঙ্গের বন্যার কারণ প্রতিবেশী ভুটান থেকে নদী জলের প্রবাহ। তিনি ভুটানের কাছে ক্ষতিপূরণের আবেদন জানান, “ভুটানের জল আমাদের এই অঞ্চলকে প্লাবিত করেছে। আমরা চাই ভুটান আমাদের ক্ষতিপূরণ দিক।”
আরও পড়ুন- প্যাকেট খুললেই গুঁড়ো হয়ে যাচ্ছে, রাসায়নিক মানও ঠিক নেই, ৩৪ রকম ওষুধ তুলে নেওয়ার নির্দেশ
মুখ্যমন্ত্রী ভারত-ভুটান যৌথ নদী কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তার উপরও জোর দেন। তিনি জানান, এই কমিশনের বৈঠক এই মাসের ১৬ তারিখে অনুষ্ঠিত হবে, এবং তাতে বাংলার কর্মকর্তারাও এতে অংশগ্রহণ করবেন।
গত কয়েকদিনে উত্তরবঙ্গে বন্যা ও ভূমিধসের ফলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জলপাইগুড়ির নাগরাকাটা এবং বামনডাঙ্গা এলাকা বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশ কয়েকটি নদীর জলস্তর বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ত্রাণ শিবির পরিদর্শন করেছেন এবং বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করে জানিয়েছেন, জল নেমে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলোর পুনর্নির্মাণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন- ভোটের আগেই 'খেলা ঘোরালেন' নীতীশ? NDA-তে ফাটল? তুঙ্গে জল্পনা রাজনৈতিক মহলে
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা কারও কাছে ভিক্ষা চাইছি না, নিজেরাই সামলাব। সাধারণ মানুষকে উত্তরবঙ্গের দুর্যোগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।” এদিন তিনি West Bengal State Disaster Management Authority-তে মানুষকে স্বেচ্ছায় অনুদানের জন্য আবেদনও জানান এবং সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্ট নম্বর ঘোষণা করেন।
কেন্দ্রের ভূমিকার অভাবের কথাও উল্লেখ করে তিনি বলেন, “দিল্লি এক পয়সাও সাহায্য দিচ্ছে না। কৃষকদের ফসল বিমার টাকা দ্রুত পৌঁছে দিতে রাজ্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে।” জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ক্ষতির বিস্তারিত রিপোর্ট কৃষি দপ্তরে পাঠানোর জন্য।
আরও পড়ুন- গণধর্ষণ নয়, ধর্ষণ করেছে একজনই, দুর্গাপুরকাণ্ডে গোপন জবানবন্দি নির্যাতিতার
উত্তরবঙ্গের কৃষিপণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ৪৬টি নতুন সুফল বাংলা আউটলেট খোলা হয়েছে, যেখানে কম দামে সবজি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি হচ্ছে। এই আউটলেটগুলিতে ইতিমধ্যেই ৫০০ কুইন্টাল আলু পাঠানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, উত্তরবঙ্গের উন্নয়নে রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই ৭,০০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে।
মুখ্যমন্ত্রী ভুটানের ভূমিকায় ফের ক্ষোভ উগরে দেন। তিনি বলেন, “ভুটানের ছাড়া জলের কারণে উত্তরবঙ্গে এত বড় বিপর্যয় ঘটেছে। ওদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত। ড্রেজিং না করলে ড্যামের কোনও প্রয়োজনীয়তা নেই, সব ড্যাম ভেঙে দিন।” তিনি আরও বলেন, “ড্যামের উদ্দেশ্য গ্রীষ্মকালে জলের সঙ্কটে থাকা এলাকায় জল সরবরাহ করা। কিন্তু গ্রীষ্মে যখন আমি জল চাই, পাই না; বর্ষা এলেই তারা জল ছেড়ে দেবে আমাদের বাংলায়—এটা চলতে পারে না।”
উত্তরবঙ্গে পুনর্গঠনে পাহাড়ি এলাকায় আরও বেশি করে ম্যানগ্রোভ গাছ লাগানোর পরামর্শ দেন তিনি। মমতা বলেন, “ম্যানগ্রোভ কংক্রিটের থেকেও শক্ত। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় এই গাছ লাগান। আমি টাকা জলে ঢালতে রাজি নই।”
আরও পড়ুন-'এক টাকাও দেবেন না', বিরাট বার্তা দিয়ে রাজ্য-রাজনীতিতে হুঙ্কার শুভেন্দুর
নাগরাকাটায় পরিদর্শনের সময় দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলেন, ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন এবং মৃতদের পরিবারের একজনকে চাকরির নিয়োগপত্রও দেন। তিনি বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলছি ইন্দো-ভুটান রিভার কমিশন গড়া হোক এবং বাংলাকেও তার সদস্য করা হোক। ভুটানের জলেই এত বড় ঘটনা ঘটেছে, তাই ওদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত।”
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “আমরা কারও কাছে ভিক্ষা চাইছি না। কেউ এক পয়সাও সাহায্য করেনি, আমরা নিজেদের সামর্থ্যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সমালোচনা করে লাভ নেই, মানুষের পাশে থাকতে হবে।” ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কমিউনিটি কিচেন চালু হয়েছে এবং পড়ুয়াদের হাতে বই-খাতা পৌঁছে দেওয়া হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা পাহাড়কে পুরনো সৌন্দর্যে ফিরিয়ে আনতে চাই। এই মুহূর্তে রাজনীতি নয়, মানবিকতার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।”
উল্লেখ্য, অক্টোবরের ৪ ও ৫ তারিখে ভারী বর্ষণ ও ভূমিধসের কারণে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও অন্যান্য উত্তরবঙ্গের জেলা বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১২ ঘণ্টার মধ্যে ২৬১ মিমি বৃষ্টি এলাকা প্লাবিত করে, যার ফলে প্রায় ৩০-এর বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
আরও পড়ুন- ভারতের দিকে চোখ তুলে তাকাতেই গুলিতে ঝাঁঝরা, সেনা-জঙ্গির এনকাউন্টারে নিকেশ ২ পাক জঙ্গি