Mamata North Bengal Visit: বিধানসভা নির্বাচনের এক বছরও দেরি নেই। ইতিমধ্যে ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনকে লক্ষ্য রেখে জেলা চেয়ারম্যান ও সভাপতির নাম ঘোষণা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু উত্তরবঙ্গ তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে এখনও গলার কাঁটা হয়েই রয়েছে। সোমবার তিন দিনের উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই সফরে শিল্প সম্ভাবনা ও প্রশাসনিক বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজনৈতিক মহলের মতে, তারই মাঝে তিনি তৃণমূলের সাংগঠনিক অবস্থার খোঁজ নেবেন নিঃসন্দেহে।
২০২৪ লোকসভা নির্বাচন মালদায় গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জনসভাগুলিতে সেখানকার মানুষজনের কাছে অন্তত একটি আসনে তৃণমূল কংগ্রেসকে জয়ী করার আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কোনও সাড়া মেলেনি। জেলার দুটি আসনে একটিতে বিজেপি, অন্যটিতে কংগ্রেস জয়লাভ করে। খালি হাতে ফিরতে হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কোচবিহার লোকসভা আসনে জয় পেলেও দার্জিলিং, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, রায়গঞ্জ, মালদা উত্তর, বালুরঘাট লোকসভা আসনে বিজেপির কাছে পরাজিত হয় তৃণমূল কংগ্রেস। একটি আসনে পরাজিত হলেও ৮টি আসনের মধ্যে ৬টি আসনে জয় পেয়ে এরাজ্যে বিজেপির মুখ রেখেছিল উত্তরবঙ্গে। এমনকি ২০২১ বিধানসভা ভোটেও রাজ্যে বিজেপির কিছুটা মুখরক্ষা করেছিল সেই উত্তরবঙ্গই। স্বভাবতই এবারও বিজেপির ভিত উপড়ে ফেলতে চেষ্টার কসুর করছে না তৃণমূল কংগ্রেস।
ধূপগুড়ি পৃথক মহকুমা করেও ভোটের ময়দানে ফায়দা পায়নি তৃণমূল। আলিপুরদুয়ারের বিজেপি বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল তৃণমূল কংগ্রেসেও যোগ দেন। ভোটের ব্যবধান কমলেও আলিপুরদুয়ার লোকসভা আসনে জয় পায়নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। সামনে ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচন। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরবঙ্গে গিয়ে বলে এসেছেন মাঝে মধ্যেই তিনি সেখানে যাবেন। এবারও তৃণমূলের লক্ষ্য উত্তরবঙ্গের বিজেপির জয় পাওয়া আসনগুলি নিজেদের দখলে আনা। রাজনৈতিক মহলের মতে, উত্তরবঙ্গের জন্য় তৃণমূলের পৃথক নজর রয়েছে।
২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে উত্তরবঙ্গের ৫৪টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৩৭টিতে এগিয়ে ছিল বিজেপি। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনেও উত্তরবঙ্গই মুখ রেখেছিল বিজেপির। সম্প্রতি প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও আলিপুরদুয়ারের প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ জন বার্লা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। যদিও বিজেপির দাবি, বার্লার দলবদলে বিজেপির কোনও সাংগঠনিক ক্ষতি হবে না। সোমবার উত্তরবঙ্গে বেশ কিছু উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কথা আলোচনা হয়েছে শিল্প সম্মেলনে। বৈঠকের পোষাকি নাম ছিল নর্থ বেঙ্গল বিজনেস মিট। এর আগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বারে বারে বলেছিলেন নর্থবেঙ্গল শব্দেই তাঁর আপত্তি আছে।
উত্তরবঙ্গের জনমানসে কলকাতা কেন্দ্রীক উন্নয়ন নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। এমনকী এইমস উত্তরবঙ্গের রায়গঞ্জে হওয়ার কথা হয়েছিল। পরবর্তীতে তা নদীয়ার কল্যানীতে সরে যায়। তা নিয়েও ক্ষেভ উগরে দেন উত্তরবঙ্গের সাধারণ মানুষ। মোদ্দা কথা উন্নয়ন নিয়ে এখনও সেখানকার মানুষ সন্তুষ্ট নয়, তা তাঁদের সঙ্গে কথা বলললেই স্পষ্ট হয়ে যায়। যথারীতি এই ক্ষোভ প্রকাশ পায় ইভিএমে। রাজনৈতিক মহলের মতে, রাজনৈতিক পরিস্থিতি যাই হোক উত্তরবঙ্গের মানুষের স্বাভাবিক ক্ষোভ-বিক্ষোভ নিরসন না হলে, তা নির্বাচনে প্রভাব পড়তে বাধ্য। অতীত অভিজ্ঞতায় এমনই বাস্তব চিত্র দেখা গিয়েছে বলে মনে করেন অভিজ্ঞ মহল। সেক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরবঙ্গ সফর প্রশাসনের পাশাপাশি রাজনৈতিক ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। এখানে তৃণমূলের জেলা সংগঠনে একাধিক পরিবর্তনও করেছে ঘাসফুল শিবির। চা বাগানের শ্রমিকদের কাছে টানতে চাইছে সব পক্ষই।