Nolen Gur is being made in Khejuri of Purba Medinipur: শীতের নলেন গুড়ের এক অপরূপ দৃশ্যপট। সত্যিই, শীতকাল এবং নলেন গুড়ের সাথে সেই বিশেষ সম্পর্কের কথা ভাবলে মনেই হয় যেন এক স্বর্গীয় অনুভূতি।
খেজুরির প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষদের জীবনের সাথে এই গুড়ের কারবার একান্তভাবে জড়িত। তাদের পরিশ্রম আর ঐতিহ্য মিলে যে গুড় তৈরি হয়, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। শীতকাল যেন এই নলেন গুড়ের সুগন্ধে এবং স্বাদে পূর্ণ হয়ে ওঠে, যা বাঙালির শীতকালীন উৎসবের এক অঙ্গ।
তাদের এই জীবনযাত্রা একদিকে যেমন সংগ্রামমুখর, অন্যদিকে তেমনি সৌন্দর্য্যমণ্ডিত। শীতের সময় অস্থায়ী তাঁবুতে গুড় তৈরির প্রক্রিয়ায় সামিল হওয়া, প্রকৃতির সাথে মিশে থাকা, এবং পরিশ্রমের ফলাফল সরাসরি উপভোগ করা—সবমিলিয়ে এক অনন্য অভিজ্ঞতা। খেজুর গাছের রস সংগ্রহ এবং সেই রস থেকে খাঁটি নলেন গুড় তৈরির ধারা যেন বাংলার গ্রামীণ সংস্কৃতিরই এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি।
শীতের সময় গ্রামীণ মেঠো পথ দিয়ে হাঁটতে গেলে এই গুড়ের সুগন্ধ এবং মানুষের মুখের হাসি দেখতে পাওয়া সত্যিই এক অসাধারণ অনুভূতি। এ যেন গ্রামবাংলার এক অনন্য ছোঁয়া, যা প্রতি শীতেই আমাদের মনে নতুন করে জীবন্ত হয়ে ওঠে।
এই খেজুর গুড়ের কারবার যেন বাংলার গ্রামীণ সংস্কৃতির এক জ্বলন্ত উদাহরণ। প্রথমে গাছ প্রস্তুত করে, রস সংগ্রহ করে, এবং তারপর সেই রস থেকে খাঁটি গুড় তৈরি করা—এ প্রক্রিয়াটির মধ্যে এক অনন্য সৌন্দর্য এবং পরিশ্রম নিহিত রয়েছে। শীতকালে খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করে খাঁটি গুড় তৈরির মাধ্যমে যে সুগন্ধ এবং স্বাদ তৈরি হয়, তা সত্যিই অতুলনীয়।
গ্রামীণ মানুষেরা এই গুড় কারবারের মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্বাহ করেন এবং সারা বছরের খোরাক জোগান। তাদের পরিশ্রমের ফসল এই গুড় শুধু খেজুরীর মানুষের নয়, অন্যদেরও দারুণ আনন্দের কারণ হয়ে ওঠে।এই কঠিন পরিশ্রমের মাধ্যমে যে গুড় তৈরি হয়, তা শুধুমাত্র খাদ্য নয়, বরং বাংলার ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির এক অপরিহার্য অংশ হয়ে ওঠে।
গৌরহরি মণ্ডল এবং তার পরিবারের গুড় তৈরির দীর্ঘ ইতিহাস সত্যিই বিস্ময়কর। বংশ-পরম্পরায় এই কাজ করে আসা এবং সারা বছরের আয়-ইনকামের প্রধান উৎস হিসেবে এই গুড় ব্যবসা করে তারা যে কঠিন পরিশ্রম এবং ঐতিহ্যের মিশ্রণ, তা সত্যিই প্রশংসনীয়।
গুরুত্বপূর্ণ হল, এমন কঠিন পরিশ্রম এবং ঐতিহ্য ধরে রাখা, যা আমাদের গ্রামের মানুষদের জীবনের সাথে মিশে রয়েছে। গৌরহরি মণ্ডলের মত মানুষরা নিজেদের পরিশ্রম এবং দক্ষতার মাধ্যমে আমাদের কাছে সেরা খাঁটি নলেন গুড় পৌঁছে দিচ্ছেন। শীতকাল হলেই এই ধরনের পরিবারের মানুষজন গ্রাম ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে গিয়ে গুড় তৈরির কাজ শুরু করেন, যা তাদের সারা বছরের আয়ের উৎস হয়ে ওঠে।
দিঘার কাছে ১১৬ বি জাতীয় সড়কের ধারে এই গুড়শালগুলো যেন শহুরে পর্যটকদের জন্য এক বিশেষ আকর্ষণ। এখানকার গুড়ের সুগন্ধ এবং স্বাদ তাদের জন্য সত্যিই চিত্তাকর্ষক। রাম মান্নার মতো খেজুরীর মানুষদের এই গুড়ের কারবারে যুক্ত থাকা দেখে বোঝা যায় যে বংশ পরম্পরায় এই শিল্পের সাথে তাদের কত গভীর সম্পর্ক রয়েছে। গাছ লিজ নিয়ে এবং পারিশ্রমিক সাশ্রয়ের জন্য পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়ে এই কারবার চালানো—সবকিছুই তাদের ঐতিহ্য এবং পরিশ্রমের পরিচয় দেয়।
আরও পড়ুন- Mamata Banerjee: 'কেন এত কথা বলো?', বিধানসভায় হুমায়ুনকে ধমক মুখ্যমন্ত্রীর!
যদিও নতুন প্রজন্মের এই গুড় শিল্পের প্রতি তেমন আগ্রহ নেই, তবুও এ শিল্পের গুরুত্ব এবং এর মধ্যে নিহিত ঐতিহ্য প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বেঁচে আছে। খেজুর গুড় এবং খেজুরি অঞ্চলের মানুষের এই সম্পর্ক সত্যিই অপূর্ব এবং মহামূল্যবান। এই গুড় তাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা শুধু তাদের আর্থিক লাভের মাধ্যম নয়, বরং তাদের সংস্কৃতির এক অমূল্য ধারা। "খেজুর গাছে হাঁড়ি বাঁধো মন, ও মন রে..." এই গানটি সত্যিই তাদের আত্মার সুর তুলে ধরে, যা আমাদের সকলের মন ছুঁয়ে যায়।