Police protection for three Tmc leaders of purba bardhaman: মালদায় তৃণমূল নেতাকে নৃশংস খুনের পর (Malda TMC Leader Murder) থেকে আর যেন 'রিস্ক' নিতে চাইছে না প্রশাসন। দিকে দিকে শাসক দলের নেতাদের নিরাপত্তা দেওয়া শুরু। সম্প্রতি পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের তিন তৃণমূল নেতা পেয়েছেন পুলিশি নিরাপত্তা। ওই তিন নেতার মধ্যে রয়েছেন আউশগ্রামের কোটা এলাকার বাসিন্দা পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সদস্য রামকৃষ্ণ ঘোষ, প্রতাপপুরের বাসিন্দা ভাল্কি অঞ্চল তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি অরূপ মির্ধা এবং গেরাই গ্রামের বাসিন্দা যুব তৃণমূল নেতা আফজল রহমান ওরফে সঞ্জু।
জানা গিয়েছে, গত মঙ্গলবার রাত থেকেই ওই তিনজনের জন্য সরকারিভাবে একজন করে সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে রামকৃষ্ণ ঘোষের জন্য পশ্চিম বর্ধমান জেলা পুলিশ কমিশনারেট থেকে সর্বক্ষণের জন্য নিরাপত্তারক্ষী পাঠানো হয়েছে। বাকি দু'জনকে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তারক্ষী দেওয়া হয়েছে।
বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal) গ্রেপ্তারের পর থেকেই আউশগ্রাম ২ নম্বর ব্লকে শাসকদলের গোষ্ঠী কোন্দল মাথাচাড়া দেয়। পাশাপাশি শাসকদলের ক্ষমতার হাতবদলও হয়। ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি রামকৃষ্ণ ঘোষেকে সরিয়ে আউশগ্রাম ২ নম্বর ব্লকে সভাপতি করা হয় সেখ আব্দুল লালনকে। এর কিছুদিন পর পদ যায় আউশগ্রামের প্রতাপপুরের বাসিন্দা ভাল্কি অঞ্চল তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি অরূপ মির্ধারও।
তারপরেই এলাকায় শাসকদলের গোষ্ঠীকোন্দল প্রকাশ্যে আসে। প্রাক্তন ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি রামকৃষ্ণ ঘোষের সঙ্গে অরূপ মির্ধার সখ্যতা বাড়ে। তাঁরা কার্যত একসঙ্গে জোট বাঁধেন। গত দেড় বছর ধরে বর্তমান ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি সেখ আব্দুল লালনের গোষ্ঠীর সঙ্গে কোন্দল দেখা যায় রামকৃষ্ণ ঘোষের গোষ্ঠীর। অন্যদিকে আউশগ্রামের বিধায়ক অভেদানন্দ থাণ্ডারও শিবির বদল করেন। বর্তমানে ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি সেখ আব্দুল লালনের গোষ্ঠীর সঙ্গ ছেড়ে বিধায়ক প্রাক্তন ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি রামকৃষ্ণ ঘোষের গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন- West Bengal News Live: কাঁটাতার লাগানো নিয়ে ফের উত্তেজনা বাংলাদেশ সীমান্তে, BGB-র বাধায় থমকে কাজ
ইদানিং ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি সেখ আব্দুল লালনের ডাকে বেশ কয়েকটি দলীয় অনুষ্ঠানে বিধায়ক অনুপস্থিত ছিলেন। অথচ বছর দুয়েক আগে রামকৃষ্ণ ঘোষের পরিবর্তে সেখ আব্দুল লালনের হাতে ক্ষমতা বদলের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন বিধায়ক অভেদানন্দ থাণ্ডার এমনই দাবি ব্লক তথা জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের।
আরও পড়ুন- Banglar Bari: বাংলার বাড়ি প্রকল্পে দুর্নীতি রুখতে বদ্ধপরিকর রাজ্য, বিরাট পদক্ষেপ নবান্নের
রামকৃষ্ণ ঘোষ আউশগ্রাম ২ ব্লক তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি। বর্তমানে পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সদস্য। তিনি বলেন, "আমি সম্প্রতি সরকারি নিরাপত্তারক্ষীর জন্য কোনও আবেদন করিনি। আগে নিরাপত্তারক্ষী বরাদ্দ ছিল। গত লোকসভা নির্বাচনের পরেই আমি ছেড়ে দিয়েছিলাম। আমি দলের কাজে দিনে রাতে একাই ঘুরি। আমি মনে করি আমার শত্রু কেউ নেই। তবে প্রশাসন কিছু বুঝে নিরাপত্তারক্ষী পাঠিয়েছে।"
আউশগ্রামে বিরোধী দলগুলির মধ্যে ততটা সক্রিয়তা না থাকলেও শাসকদলের অন্দরেই দীর্ঘদিন ধরে সংঘাত রয়েছে। উল্লেখ্য ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর আউশগ্রামের গেরাই গ্রামে একটি অনুষ্ঠানবাড়ি থেকে দেবশালায় বাড়ি ফেরার পথে দুস্কৃতীদের গুলিতে খুন হয়েছিলেন যুব তৃণমূল নেতা চঞ্চল বক্সি। ওই খুনের ঘটনায় কিছুদিনের মধ্যেই গ্রেপ্তার হয় শাসকদলেরই আর এক যুবনেতা আসানুল মণ্ডল। ধরা পড়েছিল চারজন সুপারি কিলারও।
আউশগ্রাম ২ নম্বর ব্লক তৃণমূল সভাপতি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী গেরাই গ্রামের বাসিন্দা আবদুল লালনের ছেলে আফজল রহমান ওরফে সঞ্জু। এমনিতেই আব্দুল লালনের আগে থেকেই সরকারিভাবে নিরাপত্তারক্ষী রয়েছে। মাস দুয়েক আগে গেরাই গ্রামের অদূরে ভুয়েরা এলাকা থেকে অস্ত্রসহ দুজন দুস্কৃতী ধরা পড়ে। সপ্তাহ খানেক আগে গেরাইয়ের পাশে বেলেমাঠ গ্রামে একটি কালভার্টের তলা থেকে কয়েকটি বোমা উদ্ধার হয়েছিল। মাস দেড়েক আগেই যুব তৃণমূল নেতা সঞ্জু সরকারি নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন জানিয়েছিলেন। তবে সঞ্জু এনিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, "প্রশাসন থেকে কিছু বুঝেই আমার জন্য নিরাপত্তারক্ষী পাঠানো হয়েছে। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।"
আরও পড়ুন- Kolkata Metro: পরপর দুই রবিবার এই রুটে চলবে না মেট্রো, কারণ জানাল কর্তৃপক্ষ
আউশগ্রামের প্রতাপপুর গ্রামের বাসিন্দা অরূপ মির্ধার জন্যও মঙ্গলবার রাত থেকে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে একজন সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হয়েছে। তবে অরূপ মির্ধার দাবি, "আমি নিজে সরকারি নিরাপত্তার জন্য আবেদন করিনি। তবে এলাকায় কিছু অসাধু কারবারি, বালি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে আমি সরব হই। সম্ভবত সেই কারণেই প্রশাসন থেকে মনে করেছে আমার প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।"