Durga Puja 2024: পতিতা বাড়ির মাটির পূণ্যতাকে আঁকড়ে তৈরি হয় দেবী দুর্গার মূর্তি। সেকথা মাথায় রেখে দেহজীবী মায়েদের পূজার্ঘ্য নিবেদনের মধ্য দিয়ে উদ্বোধন গোপালপুর উল্লাসপুর সার্বজনীনের দুর্গাপুজোর। পুজো উদ্বোধনে নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত তৈরি করে কার্যত সাড়া ফেলে দিয়েছে পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম জঙ্গলমহল এলাকার এই দুর্গা পুজো কমিটি। যার সাক্ষী থেকে রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় নিজেও
অভিভূত হন। তিনি পুজো উদ্যোক্তাদের এমন মহতী ভাবনার ভূয়সী প্রশংসাও করেছেন ।
আউশগ্রামের জঙ্গলমহলে অজয় নদের তীরের প্রাচীন গ্রাম গোপালপুর ও উল্লাসপুর। গ্রামের বাসিন্দাদের অধিকাংশই গরিব। আগে এই গ্রামে দুর্গা পুজো (Durga Puja) হত না। দুর্গা মায়ের মুখ দর্শন করে প্রণাম জানানোর জন্য গ্রামবাসীদের যেতে হত দূরের জমিদার বাড়িতে। সেখানে গ্রামের নিরন্ন মানুষদের কোনও অংশগ্রহণ থাকত না। তা নিয়ে তাঁদের আক্ষেপের শেষ ছিল না। সেই আক্ষেপ কাটাতে গোপালপুর ও উল্লাসপুর গ্রামের মানুষজন একাট্টা হন। তাঁরা নিজেদের গ্রামে দুর্গাপুজো করার পাকাপাকি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। গড়ে তোলেন গোপালপুর উল্লাসপুর সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি।
দুই গ্রামের মানুষের সাহায্যে গ্রামের শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের মাঠে শুরু হয় দুর্গা পুজো। প্রথম বছর কৃষককে পুজো করে পুজোর উদ্বোধন হয়েছিল। দ্বিতীয় বছর পুজোর উদ্বোধন হয় বৃহন্নলাদের পুজো করে। আর এ বছর চতুর্থীর দিন দেহজীবীদের পুজার্ঘ্য নিবেদনের মধ্য দিয়ে পুজোর সূচনা হয়। অন্যান্য বিশিষ্টদের পাশাপাশি স্বয়ং রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় ওই দিন এই পুজোর উদ্বোধনে অংশ নিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন- Sandip-Asur: চশমাটাই শুধু নেই, মহিষাসুরের মুখটা অবিকল যেন আরজি করের সন্দীপ, দাবি নেটিজেনদের
গোপালপুর উল্লাসপুর দুর্গোৎসব কমিটির অন্যতম সদস্য এলাকার ভূমিপুত্র তথা বিশিষ্ঠ লেখক রাধামাধব মণ্ডল। তিনি বলেন,“অজয় নদের বন্যায় একাধিক বার ধ্বংস হয়েছে আমাদের ছোট দুটি গ্রাম। গ্রামের বহু মানুষ গ্রাম ছেড়ে গিয়েছেন। তাঁরা এখন বীরভূমের শ্রীচন্দ্রপুর,হালসিডাঙা,সেনকাপুর প্রভৃতি গ্রামের বাসিন্দা হয়ে গেছেন। বন্যা ছাড়াও একাধিকবার মহামারির কবলেও পড়েছে আমাদের গ্রাম দুটি। একসময় গ্রামে ১৮ টি পাড়া ছিল। কলেরার দাপটে বর্তমানে তা ৫টি পাড়ায় এসে ঠেকেছে। এখন মাত্র ৫৬ টি পরিবার নিয়ে অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে গোপালপুর ও উল্লাসপুর গ্রাম। যার বাসিন্দাদের অধিকাংশই দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে দিন গুজরান করেন। এমন এক গ্রামের দুর্গা পুজো ’জৌলুসে’ হয়তো শহর বা মফস্বলের বড় বাজেটের পুজোর সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে না। তবে আন্তরিকতায় গোপালপুর উল্লাসপুর সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির পুজো অনেক পুজোকেই টেক্কা দেবে।"
পুজো নিয়ে এ গ্রামের মহিলারাও যথেষ্ট আন্তরিক। পুজোর দায়িত্ব পালনে তাঁরা কোন অংশেই পিছিয়ে থাকেন না,থাকতেও চান না। গ্রামের বধূ রাখী ঘোষ ও তাপসী মণ্ডল’রা বলেন, “এ বছর আমাদের গ্রামের পুজোয় থিমের ছোঁয়া লেগেছে। 'গুহার মধ্যে দেবী দুর্গা’, এই থিম ভাবনাকে পাথেয় করে তৈরি হয়েছে আমাদের গ্রামের পুজোর মণ্ডপ ও প্রতিমা। প্রতিমা তৈরি করেছেন মল্লারপুরের আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মৃৎশিল্পী নিতাই সুত্রধর।
দেহজীবীদের দিয়ে ’গুহায় দেবী দুর্গা’ এই থিমের পুজোর উদ্বোধনের ভাবনা কী থেকে এল? এর উত্তরে রাধামাধব মণ্ডল বলেন, "হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে দেবী দুর্গার মূর্তি তৈরিতেসময় চারটি জিনিস অপরিহার্য্য। এই চারটি জিনিস হল গঙ্গামাটি,গোবর,গোমূত্র ও নিষিদ্ধপল্লীর মাটি।তাই এই মাটিকে পূণ্যমাটি হিসাবে ধরা হয়। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, নিষিদ্ধপল্লীতে যাঁরা গমন করেন তাঁরা তাঁদের যাবতীয় পূণ্য যৌনকর্মীর ঘরের দরজার বাইরে রেখে ভিতরের কামনা বাসনার জগতে প্রবেশ করেন। তার দরুন নিষিদ্ধপল্লীর মাটি মানুষের সব চারিত্রিক গুণে পুষ্ট হয়ে ’পূণ্য’ মাটিতে পরিণত হয়। শুধু তাই নয় ,’দেবীপক্ষে ’নবকন্যা’ নামে দেবী দুর্গার নয় রুপের পুজো হয়। সেই নয় রুপের মধ্যে নটী,ধোপানি,ব্রাহ্মণী,শুদ্রানী, গোয়ালিনী, কাপালিনি, নাপিতানি, মালিনী’র সাথে সাথে ’পতিতা’ রুপও রয়েছে।"