Malda TMC Leader Murder Update: ১০ লক্ষ টাকার সুপারিতে খুন মালদার তৃমমূল নেতা দুলাল সরকার, ধৃতদের দফায়-দফায় জেরায় এমনই তথ্য হাতে এসেছে পুলিশের। মালদার তৃণমূল নেতা বাবলা সরকারের মৃতদেহ নিয়ে শোক মিছিলে সামিল ছিলেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim) এবং শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন জেলা তৃণমূলের পদস্থ নেতৃত্বরা। স্বর্গরথে বাবলা সরকারের মৃতদেহ মালদায় রাস্তার বের হতেই যেন স্তব্ধ হয়ে যায় ইংরেজবাজার শহর। শুক্রবার কার্যত শহরের ঝলঝলিয়া থেকে কানিমোড়, স্টেশন রোড থেকে রেল কলোনি এক প্রকার বনধের চেহারা নেয়। দুলাল সরকার ওরফে বাবলা সরকারের মৃতদেহ দেখতে কয়েক হাজার মানুষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বাবলা সরকার খুনের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের নাম মহম্মদ সামি (২০), আব্দুল গনি (২০)। এদের বাড়ি বিহারের কাটিহার জেলার আজমনগর এলাকায়। অপর ধৃতের নাম টিংকু ঘোষ (২২)। তার বাড়ি ইংরেজবাজার থানার যদুপুর ১ পঞ্চায়েতের গাবগাছি এলাকায়। শুক্রবার ধৃতদের মালদা আদালতে পেশ করা হলে তাদের ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে ধৃত তিনজনই দাগি অপরাধী। টাকার বিনিময়ে এরা এই ধরনের অপরাধ করে থাকে।
ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী বলেন, "বাবলা সরকারকে খুন করার জন্য সুপারি কিলারদের দশ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। কারা এই টাকা দিল, কী ষড়যন্ত্র ছিল তা পুলিশকে তদন্ত করে বের করতে হবে। পুলিশ মারফত সুপারি কিলারদের এই ১০ লক্ষ টাকা দেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছি। একজন ভালো মানুষকে দুষ্কৃতীরা দিনদুপুরে মেরে দেবে, তা কোনওভাবে বরদাস্ত করা যায় না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলে দিয়েছেন পুলিশ তদন্ত করছে, অপরাধীদের কঠিন শাস্তি হবে।"
রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, "বাবলা সরকার একেবারে মাটির মানুষ ছিলেন। দলের একজন প্রতিষ্ঠা সদস্য। যবে থেকে তৃণমূল দল হয়েছে, তবে থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এবং আমাদের সাথে রয়েছেন বাবলা সরকার। তাঁকে এভাবে খুন করার বিষয়টি কোনওভাবে মানা যায় না। ইতিমধ্যে পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। কোথায় একটা ষড়যন্ত্র রয়েছে, সেটিও পুলিশ তদন্ত করে দেখছে। তবে বাবলা সরকারের দেহরক্ষী দুই বছর আগে তুলে নেওয়া হয়েছিল, সেটা আমরা জানতাম না। এটা খুব অন্যায় হয়েছে। তবে রাজনীতির আঙ্গিনায় যেসব নেতারা নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন, পুলিশকে সেদিকেও রিভিউ করে দেখা উচিত।"
আরও পড়ুন- West Bengal News Live:দ্বিতীয় হুগলি সেতুতে হইহই কাণ্ড! কী ঘটালেন বাবুল আর অভিজিৎ?
শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব বলেন, "আমি যতবার মালদায় এসেছি বাবলার বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া করেছি। ওর স্ত্রী চৈতালির হাতের রান্না আমি অনেকবার খেয়েছি। বাবলা আমার রাজনৈতিক একজন সহকর্মী। ওর ব্যবহার অত্যন্ত ভালো। ওর যে কোনও শত্রু থাকতে পারে ভাবতে পারছি না। যারাই ওকে খুন করুক না কেন, কেউ রেহাই পাবে না। সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে।" তৃণমূল বিধায়ক নীহার ঘোষ বলেন, "বাবলাকে খুন করার পিছনে কী ষড়যন্ত্র রয়েছে সেটা পুলিশকে বলতে হবে। আমরা চাই অপরাধীদের কঠিন শাস্তি হোক। কারণ, প্রকাশ্যে একজন প্রবীণ তৃণমূল নেতাকে এভাবে গুলি করে খুন করা হল, তারপর তো ভয় লাগবেই। যদি অপরাধীদের কঠোর শাস্তি হয়। তাহলে মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে।"
আরও পড়ুন- West Bengal Weather: কনকনে শীতেই বৃষ্টির পূর্বাভাস জেলায়-জেলায়, ঠান্ডা স্থায়ী কতদিন?
তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক আব্দুর রহিম বক্সী বলেন, "বৃহস্পতিবার মহানন্দাপল্লী এলাকায় নিজের প্লাইবোর্ড ও পাইপের দোকানে যাওয়ার সময় সেখানেই আততায়ীরা গুলি করে খুন করে তৃণমূল নেতা বাবলা সরকারকে। তিনজন গ্রেফতার হয়েছে। যাদের মধ্যে দুইজনের বাড়ি বিহারে। একটা ষড়যন্ত্র তো হয়েছেই। এই ঘটনায় আরও যারা জড়িত রয়েছে, তাদেরকে অবিলম্বে গ্রেফতার করা হোক।"
আরও পড়ুন- West Bengal News Highlights: মিলল হিংস্র জন্তুর পায়ের ছাপ, পুরুলিয়া-ঝাড়খণ্ড সীমানায় ফের বাঘের আতঙ্ক
এদিকে পুলিশের ভূমিকায় অসন্তোষ তৈরি হয়েছে বিভিন্ন মহলে। বৃহস্পতিবার বাবলা সরকার যখন নিজের চার চাকার গাড়ি করে কানিমোড় থেকে মহানন্দা পল্লী যান, তখন একটি মোটর বাইকের চারজন যুবক মুখ বাধা অবস্থায় হেলমেট ছাড়া বাবলা সরকারের গাড়ি পিছু নেয়। সেই বাইকের কোনও নম্বরপ্লেটও ছিল না। যেখানে শহরের বিভিন্ন রাস্তায় সিসি ক্যামেরা বসিয়ে রেখেছে পুলিশ। মনিটরিং করা হয় ইংরেজবাজার থানা থেকে। এমনকি কানিমোড়, ঝলঝলিয়া, রেল কলোনি এলাকাগুলিতেও রাস্তায় দায়িত্বে রয়েছে সিভিক ভলেন্টিয়ার।
আরও পড়ুন- Kalyan Banerjee: শিল্পীদের বয়কট ইস্যুতে এবার কল্যাণকে পাশে পেলেন কুণাল, সাংসদের মন্তব্যে তোলপাড়
তারপরও কেন হেলমেটবিহীন এই চার যুবককে মোটরবাইক সমেত ধরা হল না। এরপরই এদিন সকাল দশটায় মহানন্দাপল্লী নিজের গোডাউনে ঢোকার সময় আততায়ীদের গুলিতে মৃত্যু হয় বাবলা সরকারের। তিনটি গুলি করে দুষ্কৃতীরা। পাশাপাশি আরও দুটি গুলি শূন্যে করে দুষ্কৃতীরা এলাকা থেকে পালিয়ে যায়। পুলিশ জানিয়েছে, ইংলিশবাজার পুরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল দলের কাউন্সিলর বাবলা সরকার খুনের ঘটনায় তিনজন গ্রেপ্তার হয়েছে। একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এই ঘটনার পিছনে মূল ষড়যন্ত্রের খোঁজ শুরু হয়েছে।