/indian-express-bangla/media/media_files/2025/07/03/samik-2025-07-03-10-39-54.jpg)
Samik Bhattacharya: বিজেপির নতুন রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য।
Samik Bhattacharya: প্রত্যাশিতভাবেই বঙ্গ BJP-র রাজ্য সভাপতি হয়েছেন শমীক ভট্টাচার্য। মাস কয়েক ধরেই তাঁর নাম চর্চায় ছিল। শুধু ছিল সময়ের অপেক্ষা। দিল্লি গেলেন, নাড্ডার সঙ্গে আলোচনা হল, কলকাতায় ফ্লাইট ধরে এলেন, আর সভাপতি পদে বসে গেলেন এমনটা একেবারেই নয়। কিন্তু কেন ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে এত বড় দায়িত্ব দেওয়া হল রাজ্যসভার সাংসদকে? তাঁকে সেনাপতি করেই লড়াই করতে হবে রাজ্য বিজেপির নেতা-কর্মীদের।
রাজনৈতিক মহলের মতে, প্রথমত আদ্যেপান্ত বাঙালি শমীক ভট্টাচার্য। ভাষাজ্ঞানেও অনেক রাজনীতিককে ছাপিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রয়েছে শমীক ভট্টাচার্যের। যে কোনও পরিস্থিতিতে ভাষার ব্যবহারে সংবাদ মাধ্যমকে সামলাতে পারেন অনায়াসে। সভাপতি হওয়ার পর প্রথম ভাষণে যার প্রমাণ মিলেছে। সংখ্যালঘু নিয়ে একেবারে স্পষ্ট রাজনৈতিক বার্তা দিয়েছেন শমীক ভট্টাচার্য। প্রথিতযশা সাহিত্যিকদের সহচর্য তাঁকে আরও কাব্যিক প্রতিষ্ঠা দিয়েছে।
দিলীপ ঘোষের পর রাজ্য বিজেপির সভাপতি হয়েছিলেন সুকান্ত মজুমদার। সেই কমিটিতে তাবড় BJP-র পুরনো নেতৃত্ব বাদ পড়েছিল। এমনকী ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে আদি বিজেপি নেতৃত্বের বড় অংশকে প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। তা নিয়ে পার্টির অভ্যন্তর তোলপাড় হয়েছিল। অর্ধেক প্রার্থী করা হয়েছিল তৃণমূল থেকে আসা নেতাদের। তাতে কার্যত কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বরং তৃণমূল ক্ষমতায় আসতেই তাঁরা ফের নিজের ঘরে ফিরে গিয়েছিল।
শমীক ভট্টাচার্য বিজেপির প্রথম দিন থেকেই দলের সঙ্গে আছেন। হাওড়ায় যুব মোর্চার সভাপতি ছিলেন। পুরনোদের বঞ্চিত করার প্রশ্ন এক ধাক্কায় হঠিয়ে দিল বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। প্রথম বক্তব্যে তিনি বিজেপির আশির দশকের নেতা-কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতার কথা স্বীকারও করে নিয়েছেন বাংলার দলের প্রথম বিধায়ক।
পুরনোদের অনেককেই ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে বিজেপির কার্যক্রমে দেখা যাচ্ছে না। তাঁরা কিন্তু বিজেপিতেই থেকে গিয়েছেন, কিন্তু ঘরে বসে গিয়েছেন। দল ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেননি। বিগত বছরে দলের কর্মসূচিও সেভাবে ধাক্কা দিতে পারেনি তৃণমূল কংগ্রেসকে। আন্দোলনও দানা বাঁধেনি। দলের পুরনো ও নতুনদের মেলবন্ধন ঘটাতে তৎপর শমীক ভট্টাচার্য। একতাবদ্ধ না হলে তৃণমূলের মতো শক্তিতে টলানো যে সম্ভব নয়, তা ভালো করে জানেন পোড়খাওয়া রাজনীতিক। একইসঙ্গে রয়েছে আরএসএস সংসর্গ।
দলের প্রতি শমীক ভট্টাচার্যের আনুগত্য নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। যখন পুরনোরা অবহেলিত বলে দলের অন্দরমহলে চর্চা চলছিল তখনই তাঁকে রাজ্যসভার সাংসদ করা হয়। তিনি কখনও কোনও পরিস্থিতিতে বিদ্রোহী হয়ে দলের বিরুদ্ধে মুখ খোলেননি। একেবারে একনিষ্ঠ বিজেপি হয়েই থেকেছেন। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গেও তাঁর ইকুয়েশন পজিটিভ। ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁকে সভাপতি করায় শুভেন্দুই খুশি। তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূল ব্যক্তিগতস্তরে প্রচার করলেও বিজেপি নেতৃত্ব গায়ে মাখতে নারাজ। বরং তাঁদের মত, তৃণমূল যত এমন প্রচার করবে তাতে লাভ হবে বিজেপিরই।
তবে রাজনৈতিক নিন্দুকদের একাংশ বলতে শুরু করেছে, আপাত নরম মেজাজের সভাপতি কতটা লড়াই দিতে পারবে তৃণমূলের সঙ্গে। তাতে আবার তৃণমূলের সুবিধা হবে না তো? সেই প্রশ্নও কিন্তু ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে। তবে বিজেপি মনে করছে, ভাষার মারপ্যাঁচে রাজনৈতিক তড়জা অনায়াসে সামলে নেবেন শমীক ভট্টাচার্য। তাছাড়া বিজেপি পরিবারতান্ত্রিক দল, সংগঠিত ভাবে লড়াই করে। রেজিমেন্টেড পার্টিতে এই সমস্যা হবে না বলে তাঁদের ধারণা। পাশাপাশিই কোনও দুর্নীতির অভিযোগও নেই তাঁর বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন- Dilip-Samik:দৌড়ে নাম ছিল তাঁরও, বঙ্গ BJP সভাপতি পদে শমীকের অভিষেকের দিন কী বললেন দিলীপ?
বাঙালি অবাঙালি তথা তৃণমূল কংগ্রেসের বহিরাগত ইস্যুতে উপযুক্ত জবাব দেবেন শমীক ভট্টাচার্য, রাজনৈতিক মহলের মত। মোদ্দা কথা ২০২৬-এ এই বঙ্গে বিজেপির মরন বাঁচন লড়াই। ২০২১-এ অশ্বমেধের ঘোড়া থেমে গিয়েছিল ৭৭-এ। তাই এবার আর ২০০ আসনের ডাক নয়, তৃণমূলকে বিসর্জনের ডাক দিয়েছেন শমীক। নরমপন্থী শমীক তবে প্রথম ভাষণে যুদ্ধংদেহী মনোভাব ব্যক্ত করে নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করাতে চেষ্টার কসুর করেননি। নতুন ও পুরনোদের লড়াইতে একসঙ্গে সামিল করাই এখন নতুন সভাপতির কাছে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ।