/indian-express-bangla/media/media_files/2025/09/13/rg-kar-medical-student-death-2025-09-13-17-39-55.jpg)
পরিবারের বিস্ফোরক অভিযোগে ঘনাচ্ছে রহস্য
ফের শিরোনামে আরজি কর। চিকিৎসক তরুণীকে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনা এখনও টাটকা। আর মাঝেই এবারে আরজিকরের চিকিৎসক পড়ুয়ার রহস্যমৃত্যু মালদায়।
মৃতার পরিবারের অভিযোগ, মেয়েকে খাওয়ারে বিষ মিশিয়ে খুন করেছে চিকিৎসক পড়ুয়া প্রেমিক। শুক্রবার গভীর রাতে মালদা মেডিকেল কলেজ থেকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় ওই তরুণী চিকিৎসকের। এরপর শনিবার দুপুরে মৃত ছাত্রীর পরিবার প্রেমিক উজ্জ্বল সোরেনের বিরুদ্ধে মালদার ইংরেজবাজার থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুরো বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
পোস্টম্যান: চিঠির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক অমলিন স্মৃতির আখ্যান
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে,মৃত ছাত্রীর নাম অনিন্দিতা সোরেন (২৪)। তাঁর বাড়ি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাটে। অনিন্দিতা কলকাতার আরজিকর মেডিকেল কলেজের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী। বাবা জোসেফ সোরেন বালুরঘাট গ্রামীণ ব্যাংকের ম্যানেজার। মা আলপনা সোরেন গৃহবধূ। অনিন্দিতারা এক ভাই এক বোন। সে ছিল বাড়ির ছোট।
পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে ,যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই উজ্জ্বল সোরেন মালদা মেডিকেল কলেজের ফাইনাল ইয়ারে পাঠরত। তার বাড়ি পুরুলিয়াতে। দুজনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মাঝে সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয় বলে অভিযোগ।
গত সোমবার অনিন্দিতা কলকাতা থেকে মালদায় আসে প্রেমিক উজ্জলের সঙ্গে দেখা করতে। এরপর ওরা ইংরেজবাজার শহরের একটি হোটেল ভাড়া নিয়ে চার দিন ধরে ছিল। বৃহস্পতিবার সকালে হঠাৎই অনিন্দিতাকে অচৈতন্য অবস্থায় সেই হোটেল থেকেই সরাসরি মালদা মেডিকেল কলেজে নিয়ে এনে ভর্তি করে প্রেমিক উজ্জ্বল সোরেন। এরপর থেকেই মেডিকেল কলেজের ওই চিকিৎসক পড়ুয়া উধাও হয়ে যায় বলে অভিযোগ।
এদিকে মালদা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার পর ওই ছাত্রীর পরিবারকে ফোন করে জানায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বালুরঘাট থেকে ওই ছাত্রীর পরিবার মালদায় আসে। শুক্রবার বিকেল থেকেই ওই চিকিৎসক পড়ুয়া ছাত্রীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তড়িঘড়ি রাতে অ্যাম্বুলেন্সে করে অনিন্দিতাকে কলকাতায় চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হলে, মাঝপথের মৃত্যু হয় তাঁর।
মৃত ছাত্রীর মা আলপনা সোরেন বলেন, প্রায় দেড় বছর ধরে আমার মেয়ের সঙ্গে মালদা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক পড়ুয়া উজ্জ্বল সোরেনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এমন কি ওরা চার মাস আগে পুরীতে গিয়ে বিয়েও করেছিল, সেটা পরে জানতে পারি। সম্প্রতি মেয়ে অন্তঃসত্তা হয়ে পড়ে। এরপর ওদের সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়। হয়তো মেয়ে তার প্রেমিকের সঙ্গে বিয়ের দাবিতেই মালদা এসেছিল। খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারি গত সোমবার থেকে চার দিন ধরে ইংরেজবাজার শহরের একটি হোটেলে ওরা ছিল। আমার মেয়েকে খাওয়ারের সঙ্গে বিষ জাতীয় কিছু মিশিয়ে খাওয়ানো হয়েছে। আর তাতেই মৃত্যু হয়েছে অনিন্দিতার। এই ঘটনায় ওই চিকিৎসক পড়ুয়া উজ্জ্বলের বিরুদ্ধে ইংরেজবাজার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। অবিলম্বে ওই যুবকের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছি আমরা।
মৃতের বাবা জোসেফ সোরেন বলেন, বড় আদরের মেয়ে ছিল অনিন্দিতা। তবে ও কথা কম বলতো। ভাবতেই পারছি না হঠাৎ করে মেয়ের মৃত্যু হবে। আমার মেয়ে কোনভাবে আত্মহত্যা করতে পারে না। ওকে বিষ খাইয়ে মারা হয়েছে। আর এই ঘটনার পিছনে মেয়ের প্রেমিক উজ্জ্বল যুক্ত রয়েছে। পুলিশের কাছে অভিযুক্তের গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছি।
মালদা মেডিকেল কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল ডাঃ প্রসেনজিৎ বর জানিয়েছেন, প্রথম থেকেই ওই ছাত্রীর সংকটজনক অবস্থায় মেডিকেল কলেজে ভর্তি ছিল। বৃহস্পতিবার ওই ছাত্রীকে তার এক বন্ধু উজ্জ্বল এনে ভর্তি করিয়েছিলেন। তবে বিষক্রিয়ায় ওই ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে কিনা সেটা এখনই বলতে পারব না। ময়নাতদন্তের রিপোর্টের পরেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে বলা সম্ভব।
ইংরেজবাজার থানার পুলিশ জানিয়েছে, চিকিৎসক পড়ুয়া এক ছাত্রীর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছে। ঘটনার পর থেকে উজ্জ্বল সোরেন নামে ওই যুবক গা ঢাকা দিয়েছে। মোবাইলেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি। পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।