SSC Verdict News:যোগ্য এবং অযোগ্যদের বাছাই করা যায়নি। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তারই মাশুল গুণতে হল বহু যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকাকেও। তবে দু’বছর আগেই পূর্ব বর্ধমান জেলার দুটি স্কুলের দুই শিক্ষক ও শিক্ষিকাকে 'অযোগ্য' হিসাবে চিহ্নিত করে ফেলেছিল স্কুলেরই পড়ুয়ারা, এমনই দাবি অভিভাববকদের একাংশেরও। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে শেষ পর্যন্ত ওই দুই অযোগ্য শিক্ষক ও শিক্ষিকার চাকরিও বাতিল হয়ে গিয়েছে।
শিক্ষিকা হিসাবে ২০১৯ সালে পূর্ব বর্ধমান জেলার পূর্বস্থলীর রাজাপুর ভাতশালা ধীরেন্দ্রনাথ বিদ্যাপীঠে যোগদান করেছিলেন রিঙ্কু দেবনাথ। ইতিহাসের শিক্ষিকা রিঙ্কুকে নিয়ে পড়ুয়া মহলেও নানা অভিযোগ ছিল। তিনি ক্লাসে ঠিক মতো পড়া বোঝাতে পারেন না বলে দাবি ছিল ওই স্কুলেরই পড়ুয়াদেরই একাংশের।
এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে রাজ্যে যে ২৫ হাজার ৭৫৩ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অশিক্ষক কর্মচারীর চাকরি বাতিল হয়ে গেছে তার মধ্যে রয়েছে পূর্বস্থলীর এই শিক্ষিকার নামও। এমনকী জানা গিয়েছে, স্কুল সার্ভিস কমিশন বা SSC নবম-দশমের যে ৪০ জন “ভুয়ো’ শিক্ষক-শিক্ষিকার নামের তালিকা প্রকাশ করেছিল, তাতেও নাকি নাম ছিল এই শিক্ষিকার। সেই তালিকার পাঁচ নম্বরে নাম ছিল পূর্বস্থলীর রাজাপুর ভাতশালা ধীরেন্দ্রনাথ বিদ্যালয়ের ইতিহাসের শিক্ষকা রিঙ্কু দেবনাথের। এসব খবর জানাজানি হতেই পূর্বস্থলীর পারুলিয়ার রিঙ্কু দেবনাথ স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়ে কার্যত বেপাত্তা হয়ে গিয়েছেন।
আরও পড়ুন- West Bengal News Live: 'পার্থ জেলে থাকলে 'দিদি' কেন বাইরে?' সুপ্রিম-রায় তুলে ধরে তৃণমূলকে তুলোধনা BJP-র
পূর্বস্থলীর ওই স্কুলের অন্য শিক্ষিকাদের কথার জানা গিয়েছে, ওই শিক্ষিকার OMR শিট ছিল ব্ল্যাঙ্ক। অথচ রিঙ্কু স্কুলে শিক্ষকতা করছিলেন। এই ঘটনাও তাঁরাও বিস্মিত বলে জানিয়েছেন। ওই স্কুলের অভিভাবকরা একাংশের দাবি, “রিঙ্কু দেবনাথ নামে ওই শিক্ষিকা প্রকৃত অর্থেই ছিলেন অযোগ্য। তারপরেও কী করে উনি স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি পেয়েছিলেন সেটাই বড় আশ্চর্য্যের। এমন অযোগ্য শিক্ষকদের জন্যই রাজ্যের কোনায় কোনায় অনেক স্কুলের বহু যোগ্য শিক্ষকেরও সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরি চলে গিয়েছে। এটা কখনই কাম্য ছিল না।"
আরও পড়ুন- SSC Recruitment Case Verdict: সুপ্রিম নির্দেশে চাকরি হারিয়েছেন, ইতিহাসের 'দিদিমণি'র এমন কাণ্ডে গভীর উৎকণ্ঠায় পরিবার
২০১৬ সালের SSC-র নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতার অভিযোগে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করে। শুরু হয় আন্দোলন। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে ২০২২ সালের প্রথম দিক থেকে আন্দোলন জোরদার হতে শুরু করে। মামলা রুজু হয় কলকাতা হাইকোর্টে। আদালত CBI-কে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তের নির্দেশ দেয় ।
তদন্তে নেমে CBI দুর্নীতির একের পর এক পর্দা ফাঁস করা শুরু করে। সেই সঙ্গে নবম-দশমে ভুয়ো সুপারিশপত্র পাওয়া ১৮৩ জন অবৈধ শিক্ষকের নামের তালিকা কেন্দ্রীয় সংস্থা আদালতে জমা দেয়।
আরও পড়ুন- SSC Recruitment Case Verdict:'সরকার কিছু না বলা পর্যন্ত স্কুলে আসব, স্বামীরও তো চাকরি গেল', হতাশ বিজ্ঞানের 'দিদিমণি'
CBI-এর প্রকাশ করা সেই তালিকায় নাম থাকে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকের বাণী নিকেতন রঙ্কিনী মহল্লা বিদ্যালয়ের ইতিহাসের শিক্ষক শেখ ইনসান আলির নাম। এই শিক্ষককেও আগেই অযোগ্য হিসাবে নির্ধারণ করে ফেলে ছিল স্কুলেরই পড়ুয়ারা। তার উপর তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেন তৃণমূল ঘনিষ্ঠ শিক্ষক ইনসান আলি। শুধু স্কুলে যাওয়া বন্ধ করাই নয়, মেমারি পুরসভা এলাকার বাসিন্দা শিক্ষক ইনসান কার্যত আত্মগোপন করে ফেলেন। দু’বছরের বেশি সময় ধরে ইনসান আলি আর বাণী নিকেতন রঙ্কিনী মহল্লা বিদ্যালয়ের চৌকাঠ মাড়াননি।
আরও পড়ুন- SSC Case Verdict: সুপ্রিম রায়ে চাকরি যেতে বসেছে ৮ শিক্ষিকার, অন্ধকারে স্কুলের পঠনপাঠন, দিশেহারা প্রধান শিক্ষিকা
বিদ্যালয়ের প্রাধান শিক্ষক সুব্রত দাস বৃহস্পতিবার তাঁর স্কুলের দুই শিক্ষিকা সোনামনি ভাণ্ডারী ও বিপাশা মণ্ডলের চাকরি চলে যাওয়া নিয়ে ভীষণভাবে আক্ষেপ প্রকাশ করেন। তবে চাকরি চলে গেলেও ইনশান আলির নাম তিন মুখেও আনেননি। প্রধান শিক্ষক বলেন, "দুই শিক্ষিকা সোনামনি ও বিপাশা অন্যান্য দিনের মতো ওই দিনও যথা সময়ে স্কুলে পৌঁছেছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের রায় শোনার পর তাঁরা মুষড়ে পড়েন। চোখের জল ফেলেই দুই শিক্ষিকা এদিন স্কুল ছাড়েন। এই ঘটনা স্কুলের সবাইকেই মর্মাহত করেছে।"