প্রায় পাঁচ বছর আগে অনুমোদন পায় জুনিয়র হাই স্কুল। স্কুল ভবন তৈরির কাজ শুরুও হয়। কিন্তু এত দিনেও সেই কাজ শেষ হয়নি। নিয়োগ হয়নি এক জন শিক্ষকও!
জয়নগরের গাববেড়িয়ায় তাই পাশের প্রাথমিক স্কুলেই কোনও রকমে ক্লাস চলছে উচ্চ প্রাথমিকের প্রায় ৮০ জন পড়ুয়ার। ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়াদের পড়াচ্ছেন প্রাথমিকের শিক্ষকেরাই।
স্থানীয় সূত্রের খবর, ২০১৯ সাল নাগাদ গাববেড়িয়া জুনিয়র হাই স্কুলের অনুমোদন মেলে। গাববেড়িয়া প্রাথমিক স্কুলের কাছেই জুনিয়র হাই স্কুলের ভবন তৈরির কাজ শুরু হয়। তবে সেই বছর থেকেই উচ্চ প্রাথমিকের পঠন-পাঠন শুরু করে দেওয়া হয়। যত দিন না নতুন ভবন তৈরি হচ্ছে, তত দিন প্রাথমিক স্কুলেই উচ্চ প্রাথমিকের ক্লাস চালানোর বন্দোবস্ত করে স্কুল শিক্ষা দফতর। সেই মতো, প্রাথমিক স্কুল ভবনেই অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো শুরু হয়। প্রাথমিক বিভাগের শিক্ষকেরাই উচ্চ প্রাথমিকের পড়ুয়াদের পড়ানো শুরু করেন। দ্রুত স্কুলভবন তৈরি করে শিক্ষক নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
তারপরে কেটে গিয়েছে পাঁচ বছরেরও বেশি সময়। অভিযোগ, নতুন স্কুলভবন তৈরির কাজ মাঝপথে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। নতুন করে এক জন শিক্ষকও নিয়োগ হয়নি। ফলে প্রাথমিক স্কুলেই ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণির ক্লাস চলছে। শিক্ষকের অভাবে বাধ্য হয়ে অষ্টম শ্রেণির পঠন পাঠন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। স্কুল সূত্রের খবর, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণি মিলিয়ে বর্তমানে প্রায় ৮০ পড়ুয়া রয়েছে। তাদের ভবিষ্যত কী হবে, সেই প্রশ্ন তুলছেন অভিভাবকেরা। দ্রুত ভবন তৈরি করে, শিক্ষক নিয়োগ করে স্কুল চালুর দাবি তুলেছেন বাসিন্দারা।
স্থানীয় বাসিন্দা রামচন্দ্র মণ্ডল বলেন, “এখান থেকে হাই স্কুল বেশ কিছুটা দূরে। এলাকার ছেলেমেয়েদের যাওয়া-আসায় সমস্যা হয়। এলাকায় স্কুলটা চালু হলে ছেলেমেয়েদের সুবিধা হবে। প্রশাসনকে বার বার জানিয়েও কাজ হচ্ছে না।” আরও এক বাসিন্দা মদন মণ্ডলের কথায়, “এই অঞ্চলে ছেলেমেয়েরা মূলত সরকারি স্কুলের উপরেই নির্ভরশীল। প্রাথমিকে প্রচুর পড়ুয়া। জুনিয়র হাই স্কুল অনুমোদন পাওয়ার পরে ভেবেছিলাম পড়ুয়া সংখ্যা বিচার করে স্কুলটি দ্রুত মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত করা হবে। কিন্তু কোথায় কী! আজ পর্যন্ত স্কুল ভবনটাই তৈরি হল না। একজন শিক্ষকও এল না।”
প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক অরিন্দম রায় বলেন, “প্রাথমিকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১৮৪ জন পড়ুয়া। স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে ৬ জন শিক্ষক। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত চালু হওয়ার পর অন্য প্রাথমিক স্কুল থেকে তিন জন শিক্ষককে এই স্কুলে পাঠানো হয়। কিন্তু তা দিয়েও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে অষ্ঠম শ্রেণি বন্ধ করে দিতে হয়েছে। স্কুলেরই একটি ঘরে কোনও রকমে ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণির ক্লাস চালানো হচ্ছে। দ্রুত নতুন ভবন চালু করে শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রশাসনকে জানিয়েছি।”
জয়নগর উত্তর চক্রের স্কুল পরিদর্শক কৃষ্ণেন্দু ঘোষ বলেন, “ঠিকাদার কাজ ছেড়ে চলে যাওয়ায় ভবন তৈরির কাজ আটকে আছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। শিক্ষক নিয়োগের বিষয়েও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আপাতত প্রাথমিক বিভাগের অতিরিক্ত শিক্ষক দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হচ্ছে। আশা করি, দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।”