teachers are appealing to the parents to admit the students to the school: শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি (Teacher Recruitment Scam) কাণ্ডে জেরবার রাজ্য। তারই মধ্যে নিয়োগের দাবিতে পথে নেমে হবু শিক্ষকদের
আন্দোলন চালিয়ে যাওয়াও অব্যাহত রয়েছে। এমন আবহের মধ্যেই পড়ুয়ার আকাল দেখা দেওয়ায় পূর্ব বর্ধমান জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কপালে পড়ে গিয়েছে চিন্তার ভাঁজ। তাই নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগে পড়ুয়ার সন্ধান পেতে টোটোয় চেপে গ্রামে-গ্রামে ঘুরে হাঁক পাড়া শুরু করেছেন শিক্ষকরাই। সেই সঙ্গে
তাঁরা তুলে ধরছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হলে পড়ুয়াদের প্রাপ্তি যোগের ফিরিস্তিও।
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ড সামনে আসার পর তার প্রভাব পড়ে রাজ্যের শিক্ষাঙ্গণগুলিতেও। কোনও স্কুলে তালা পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয় শিক্ষকের অভাবে, আবার শিক্ষকের আকালে তালা পড়ে যেতে বসা কোনও স্কুলের হাল ধরতে দেখা যায় সেখানকার শিক্ষিত যুবক-যুবতীদের। একজন বা দু’জন শিক্ষক মিলে একটা গোটা স্কুল চালাচ্ছেন, এমন নিদর্শনও ভুড়ি-ভুড়ি রয়েছে। তবে শিক্ষক থাকতেও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়ার আকাল দেখা দেওয়ার ঘটনা কার্যতই নজিরবিহীন। তবে হ্যাঁ, সেটাই ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের মেমারি ২ ব্লকের বোহার পঞ্চায়েত এলাকার ১৪ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পড়ুয়ার ঘাটতি মেটাতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সম্প্রতি যে কায়দায় গ্রামে গ্রামে ঘুরে প্রচারে চালান সেটা আরও নজিরবিহীন।
ভাড়া করা টোটোর মাথায় লাগানো হয় মাইক। সেই টোটোর পিছনে ঝোলানো থাকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হলে পড়ুয়াদের কী কী প্রাপ্তি-লাভ হবে, তার ফিরিস্তি সংক্রান্ত ফ্লেক্স। সেই সব টোটোয় চড়ে শিক্ষকরা বিভিন্ন গ্রামে-গ্রামে ঘোরেন। এলাকার প্রতিটি বাড়ির ছেলে-মেয়েকে সরকারি প্রাথমিক স্কুলে ভর্তির জন্য অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে চলে আবেদন। পড়ুয়ার আকাল কাটাতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এভাবে পথে নামতে দেখ বোহার ২ পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেই হতবাক হন। আবার কেউ-কেউ শিক্ষকদের এমন ভূমিকায় দেখে প্রশংসাও করেন। তবে শিক্ষকদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে নতুন শিক্ষাবর্ষে বোহারের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে পড়ুয়া ভর্তির হিড়িক পড়বে, এমন কোনও আভাস অবশ্য এখনও পর্যন্ত মেলেনি।
আরও পড়ুন- West Bengal News: মারাত্মক 'প্ল্যান' ছিল কাশ্মীরের জঙ্গি জাভেদের, ক্যানিংয়ে বসেই সাংঘাতিক পরিকল্পনা
পড়ুয়া পেতে এভাবে পথে নামার কারণ ব্যাখ্যা করে বোহারের সিতাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজকুমার চট্টোপাধ্যায় জানান, তাঁরা লক্ষ্য করছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়ার সংখ্যা ক্রমশ কমছে। প্রাথমিক বিদ্যালয় সম্পর্কে সঠিক বার্তা অভিভাবকদের কাছে না পৌঁছানোয় তারা তাদের ছেলে মেয়েদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। অথচ বেশির ভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষক রয়েছেন। শিশুবান্ধব পরিবেশে ছেলে-মেয়েদের পড়ানো হয়। তারই সঙ্গে বিনামূল্যে বই, স্কুলের পোশাক ও জুতো পড়ুয়াদের দেওয়া হয়। রয়েছে মিড-ডে মিলের ব্যবস্থা এবং বৃত্তিসহ নামান সরকারি সুবিধা।
আরও পড়ুন- West Bengal News Live:হাইকোর্টে ফের মুখ পুড়ল রাজ্যের, ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চিকিৎসকদের অবস্থানে বাধা নেই
এই সব বিষয়ে অভিভাবকদের জানাতে শিক্ষকরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে প্রচার চালিয়েছেন। ওই শিক্ষক আরও বলেন, "প্রয়োজনে এমন প্রচার আগামীদিনে আরও চালাব।" অন্যদিকে, শিক্ষকদের পাশে দাঁড়িয়ে বোহার ২ পঞ্চায়েতের প্রধান মৌসুমী মাঝিও এলাকার অভিভাবকদের কাছে একই আবেদন রাখেন।
আরও পড়ুন- Agartala News: সীমান্ত পেরিয়ে আগরতলায় ৩ বাংলাদেশি, কলকাতায় আসার পথেই গ্রেপ্তার
পড়ুয়ার আকাল কাটাতে বোহারের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান মধুসূদন ভট্টাচার্য। তবে এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার নেপথ্য কারণ যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের ঘাটতি তা স্বীকার করে নেন মুধসূদন ভট্টাচার্য। একই সঙ্গে তিনি বলেন, "আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলিতে শিক্ষক ঘাটতি পূরণ করতে না পারাটাই উদ্ভূত পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার মুখ্য কারণ।" মামলার নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত উদ্ভূত এই পরিস্থিতি থেকে যে রেহাই পাওয়া যাবে না তা জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানের কথাতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন- Mandarmani Murder Case: প্রেমঘটিত কারণেই মন্দারমণির হোটেলে খুন বিবাহিত তৃণমূল নেতা, তদন্তে নয়া মোড়
তবে চেয়ারম্যান এমনটা বললেও বিরোধী রাজনৈতিক দলের শিক্ষক সংগঠনের সদস্য শিক্ষকরা এ নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েন নি। RSS পন্থী শিক্ষক সংগঠন ABRSM এর জেলার সদস্য মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, “ছিপের কাঁটায় টোপ লাগিয়ে পকুর থেকে মাছ ধরা যায়। কিন্তু শিক্ষকের অভাবে শিক্ষা দানের পরিকাঠামো ভেঙে পড়া স্কুলগুলি প্রাপ্তির টোপ দিয়ে যতই পড়ুয়া টানার চেষ্টা করুক না কেন, তাতে সচেতন অভিভাবকরা কখনই সাড়া দেবেন না।"