The Bengal Files: এটি উসকানিমূলক! তাই একজন বাঙালি হিসেবে আমি 'দ্য বেঙ্গল ফাইলস' দেখতে নারাজ: স্টেলা দে

The Bengal Files: ১৯৪৬ সালে বাংলায় যা ঘটেছিল তা দ্বিমাত্রিক নীতি। একে নাটকে পরিণত করা যায় না। এর জন্য সততা, সংবেদনশীলতা প্রয়োজন, বিবেক অগ্নিহোত্রীর তা নেই।

The Bengal Files: ১৯৪৬ সালে বাংলায় যা ঘটেছিল তা দ্বিমাত্রিক নীতি। একে নাটকে পরিণত করা যায় না। এর জন্য সততা, সংবেদনশীলতা প্রয়োজন, বিবেক অগ্নিহোত্রীর তা নেই।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
The Bengal Files

The Bengal Files: বিবেক অগ্নিহোত্রী অভিযোগ করেছেন যে কলকাতা পুলিশ দ্য বেঙ্গল ফাইলসের ট্রেলার লঞ্চ বন্ধ করে দিয়েছে (ক্রেডিট: X/@vivekagnihotri)

Vivek Agnihotri-The Bengal Files: আমি দ্য বেঙ্গল ফাইলস দেখব না। বিবেক অগ্নিহোত্রীর নতুন ছবিটা আমার পছন্দ হবে না। এটা বোঝার জন্য আমাকে টিকিট কিনতে হবে না। আমি মন থেকেই বলছি, এটা রক্তারক্তি, অভিযোগ, বাছাই ইতিহাস আর রাষ্ট্রীয় মদতপুষ্ট হাততালির মিশেল। এটি এমন একটি ছবি যা মুক্তির আগেই নিজেকে 'সিনেমাটিক মাস্টারপিস' বলে দাবি করেছে। ঠিক নির্বাচনী প্রচারপত্রের মত।

Advertisment

বাংলার ইতিহাস এলোমেলো। এর স্তরে স্তরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা বেদনা। আমি এটা মানি। ১৯৪৬-এর ঘটনা আমার শহর কলকাতার স্মৃতিতে একটি পুরোনো দাগের মত বেঁচে আছে। ১৯৪৬-এর ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে-তে রাস্তায় রক্তের স্রোত বয়ে গিয়েছিল। নোয়াখালির দাঙ্গায় গ্রামগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। দেশভাগে কয়েক লক্ষ মানুষ উৎখাত হয়েছিলেন। যার মধ্যে আমার পরিবারও আছে। আমরা বাঙালিরা অনেকেই বাস্তুচ্যুত, প্রতিবেশীদের একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর এবং পুড়ে যাওয়া ঘরবাড়ির গল্প শুনেই বড় হয়েছি। আমি এই সব গল্পকে ভয় পাই না। কিন্তু, যেভাবে বলা হচ্ছে, সেটাকে ভয় পাই।

আরও পড়ুন- শুঁড় থেকে কান, গণেশের প্রতিটি অংশের কিন্তু আলাদা রহস্য, জানেন সেটা?

Advertisment

অগ্নিহোত্রীর নতুন ছবিটা তাঁর তিনটি এই ধরনের ছবির মধ্যে তিন নম্বর। এই ছবিতে বাংলায় হিন্দুদের ওপর 'গণহত্যা' চালানোর কথা বলা হয়েছে। এনিয়ে ইতিহাসের নানা দাবি। এমন দাবি নিয়েই বিবেক নিজের কেরিয়ার বানাচ্ছেন। 'দ্য কাশ্মীর ফাইলস' চলচ্চিত্র ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক চেহারা নিয়েছে। ওই ছবিকে রাজনৈতিক নেতারা অনুমোদন করেছেন। ছবিটির জন্য কর ছাড় দেওয়া হয়েছিল। সমাবেশে দেখানো হয়েছে। জাতীয় সংহতির ওপর নির্মিত সেরা চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে। 'দ্য কেরালা স্টোরি' সেরা পরিচালনার পাশাপাশি দুটি জাতীয় পুরস্কারও জিতেছে। এবার, তিনি আমাদের জন্য 'দ্য বেঙ্গল ফাইলস' তৈরি করেছেন।

আরও পড়ুন- বাথরুমে স্নান করছিলেন যুবক! আচমকা জানালা দিয়ে হানা বাঘের! ভয় ধরানো ভিডিও মুহূর্তে ভাইরাল

তিন মিনিটের ট্রেলারে ব্যাখ্যার খুব একটা অবকাশ নেই। এটি দুটি ধর্মের মধ্যে বিভক্ত বাংলাকে তুলে ধরেছে। অতীত এবং বর্তমানকে ব্যঙ্গচিত্রের মত করে, তুষ্টি এবং হুমকির চিত্র তুলে ধরেছে। অবৈধ অভিবাসনকে আজকের নির্বাচনী বিপর্যয় এবং একটি অস্তিত্বগত বিপদ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ট্রেলারে 'খেলা' শব্দটির আহ্বান, বাংলার শাসক দলের যুদ্ধের স্লোগান, সিনেমাটির রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে স্পষ্ট করে তুলেছে।

কাশ্মীর ফাইলস

'দ্য কাশ্মীর ফাইলস'ও একই কায়দায় তৈরি হয়েছে। ওই ছবিতেও এক সম্প্রদায়ের ওপর আঘাতকে অভিযোগ হিসেবে, অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। অন্য সম্প্রদায়কে খলনায়কের আসনে বসানো হয়েছে। তার যে সূক্ষ্ম দিকগুলো, সেটাকে মুছে ফেলা হয়েছে। এভাবেই ইতিহাসকে বর্তমান রাজনীতির একটি ভোঁতা হাতিয়ারে পরিণত করা হয়েছে। 'দ্য বেঙ্গল ফাইলস' সেই কায়দাটিই ধার করে, কাশ্মীর উপত্যকা থেকে বাংলার ভূখণ্ডে এসেছে। ফল হল- এটি চলচ্চিত্র কম এবং আর এতে অভিযোগ এবং সমাবেশের সংখ্যা বেশি। যা তথ্য দেওয়ার জন্য নয়, জ্বালিয়ে দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে।

আরও পড়ুন- দেখতে স্বাস্থ্যকর, কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এই খাবারগুলো থেকে দূরে থাকুন

বাংলায় আমরা এমন প্রতিবেশীদের গল্পও জানি, যাঁরা ধর্মীয় পরিচয়ের বাইরে গিয়ে একে অপরের জন্য নিজেদের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছিলেন। অগ্নিহোত্রীর এ ব্যাপারে আগ্রহ নেই। তিনি আয়নার চেয়ে মেগাফোন পছন্দ করেন। তিনি আপনাকে 'হিন্দু গণহত্যা' বিক্রি করবেন, যা 'অকথিত গল্প' হিসেবে প্যাক করা হয়েছে। মানে যেন জটিলতার মধ্যে কেন ঢুকবেন, এটা তো নীতিগত নাটকই হয়ে গিয়েছে! এখানে খলনায়ক আছে, ভুক্তভোগী আছে। কাজ বলতে শুধু ক্যামেরা ঘোরানো আর পুরস্কার নেওয়া।

স্বাধীনতা, পরিণতি

আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। আমি একজন পরিচালকের ছবি তৈরির অধিকারকে সমর্থন করি, এমনকী যদি তা আমার কাছে অপ্রীতিকর মনে হয়, তাহলেও করি। আমি এমন একটি দেশে বাস করতে চাই যেখানে খারাপ ছবিরও স্বাধীন স্বর থাকবে। যেখানে প্রতিটি ফ্রেমই পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা হবে।

আরও পড়ুন- মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধ! বিশ্ব মশা দিবসে জানুন ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া থেকে সুরক্ষার সহজ উপায়

কিন্তু বাকস্বাধীনতা মানে, ভিড় থিয়েটারে শুধু গল্প বলা নয়। চলচ্চিত্র কোনও প্রচারপুস্তিকা না। এর আলাদা গুরুত্ব আছে। এটা আবেগ উসকে দেয়। কুসংস্কারকেও বৈধতা দিতে পারে। আর, সেই জন্যই সাবধানতার সঙ্গে একে ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে এমন সময়ে সাবধানতা দরকার, যখন ধর্মীয় দিক থেকে হিংসাকে ন্যায্য বলে চালানো হচ্ছে! এর ফলাফল ভয়াবহ হতে পারে।

সময়টা সন্দেহজনক

আর তারপর এখন সময়টা। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে, ৫ সেপ্টেম্বর 'দ্য বেঙ্গল ফাইলস' মুক্তি পাবে। আমি এই ছবিটিকে স্রেফ শিল্প হিসেবে দেখতে নারাজ। কারণ, আমি জানি যে একে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে। আমার সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের বিষয় হল প্রচারের আড়ালে সংস্কৃতির ঝাপসা হয়ে যাওয়াটা। এখানে ইতিহাসকে নির্বাচনী লাভের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। 

১৯৪৬ সালে বাংলায় যা ঘটেছিল তা দ্বিমাত্রিক নীতি। এটা কোনও অনুষ্ঠান নয়। এই নীতি বোঝার জন্য সততা, সংবেদনশীলতা দরকার। বক্স-অফিসের সাফল্যের জন্য ক্ষতকে কাজে লাগানোটা ঠিক না। অথচ, এই ছবিটি ঠিক তাই।

আমি জানি আমার 'দ্য বেঙ্গল ফাইলস' পছন্দ হবে না। কারণ, আমি জানি এটি আমার কাছে কী চাইছে। এটি আমাকে ঘৃণা করতে শেখাবে। আংশিক সত্য দেখতে বলবে, পুরো ছবি দেখতে দেবে না। ইতিহাস যখন আমাদের উভয়ের রক্তক্ষরণের কথা বলে, তখন এক সম্প্রদায়ের ব্যথার চেয়ে অন্য সম্প্রদায়ের ব্যথাকে এখানে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এটি আমাকে একে অপরকে আশ্রয় দেওয়া প্রতিবেশীদের, দেশভাগের সময় সহ্য করা বন্ধুত্বের, বাংলার আত্মার জটিলতাকে ভুলে যেতে বলবে।

একজন বাঙালি হিসেবে, আমি এমন সিনেমা চাই যা আমার বোধকে জটিল করে তুলবে, সরলীকরণ করবে না। যা সম্পূর্ণরূপে দুঃখকে তুলে ধরবে, বর্ণনার সুবিধার্থে তা কেটে টুকরো টুকরো করবে না। আমি চাই, এটি আমাকে আমাদের মিলিত মানবতার কথা মনে করিয়ে দিক। কেবল আমাদের বিভাজনের কথা নয়। অগ্নিহোত্রীর ছবি তৈরির অধিকার আছে। আর আমার বলার অধিকার আছে। যে সিনেমা বিরোধের ওপর ভর করে তৈরি, আমি সেই সিনেমাকে মেনে নেব না।

(লেখিকা স্টেলা দে, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ডিজিটালের ডেপুটি নিউজ এডিটর, stela.dey@ indianexpress.com)  

Vivek Agnihotri The Bengal Files