Chanchal Kali Dour: অন্ধকার মাঠে হাতে মশাল নিয়ে এবং বাঁশের মাচানের ওপর দেবী মূর্তি বসিয়েই শুরু হয় কালী দৌড় উৎসব। কাঁধে কালী ঠাকুর নিয়ে দৌড় দিলেই সমস্ত মনস্কামনা পূরণ হয় ভক্তদের। এমনকী রোগব্যাধিও কালী মায়ের আশীর্বাদে নির্মূল হয়ে যায়, এমনই বিশ্বাস ভক্তদের। প্রায় ৩৫০ বছরের পুরনো চাঁচোল রাজার ঐতিহ্য মেনে আজও কালী দৌড় হয়ে আসছে চাঁচোল মহকুমার মালতীপুরে।
কালী পুজোর পরের দিন শুক্রবার গভীর রাতে মালতীপুরের চণ্ডী মণ্ডপ সংলগ্ন ফাঁকা মাঠে পুরনো এই ঐতিহ্য মেনে আটটি কালী ঠাকুরকে মাচানের ওপর উঠিয়ে অসংখ্য ভক্তরা ঘাড়ে নিয়ে দৌড়োন। এরপর নিকটবর্তী নদীতেই কালীমূর্তিগুলো বিসর্জন দেওয়া হয়। একপ্রকার কালী দৌড় প্রতিযোগিতাও বলা হয় এটিকে। শ্যামা কালী, দক্ষিণা কালী, বুড়ো কালী, হ্যানটা কালী, চানকা কালী এরকমই আটটি কালী মূর্তিকে গ্রামবাসীরা পৃথকভাবে বাঁশের মাচানের উঠিয়ে দৌড় করেন।
এক একটি কালী মূর্তিকে নিয়ে পাঁচবার করে খোলা মাঠে দৌড়ে ঘোরানো হয়। আর যাঁরাই এই কালী দৌড়ে সামিল হন, তাঁদের সারা বছরই সমস্ত মনস্কামনা পূর্ণ হয় এমনই বিশ্বাস স্থানীয়দের। পাশাপাশি এই কালী দৌড় উপলক্ষে চলে আতসবাজি পোড়ানো। যতক্ষণ মাঠে কালী দৌড় চলে ততক্ষণ একনাগাড়ে ঢাকঢোল, কাঁসর, ঘন্টায় ভরে ওঠে মালতীপুরের মাঠটি। এই কালী দৌড় উৎসব দেখতে অসংখ্য ভক্তেরা দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন। ভক্তদের সুবিধার্থে প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকেও বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন- Digha: কলকাতা থেকে দিঘা যাওয়ার 'নতুন রুট', দুরন্ত প্ল্যান! নিমেষে পৌঁছোতে পারেন সৈকতনগরীতে
কালী দৌড় কমিটির কর্মকর্তাদের বক্তব্য, প্রায় ৩৫০ বছর আগে চাঁচোল রাজার চণ্ডীমন্ডপে কালী পুজো দিয়ে পরের দিন গ্রামবাসীরা প্রতিমা ঘাড়ে নিয়ে দৌড়ে স্থানীয় পুকুরে বিসর্জন দিতেন। কারণ, সেই সময় ঘন জঙ্গলে ভরা ছিল এলাকা। অন্ধকারে গ্রামবাসীদের হাতে মশাল নিয়ে যেতে হতো। বিভিন্ন বন্যজন্তুর হাত থেকে বাঁচার ক্ষেত্রে গভীর রাতে হাতে মশাল নিয়েই নিকটবর্তী পুকুরে কালী মূর্তির বিসর্জন দেওয়া হতো। আর সেই থেকে এই কালি দৌড়ের এই রীতি চলে আসছে।
আরও পড়ুন- Central referral system: আম আদমির জন্য সুখবর! কোন হাসপাতালে কত বেড খালি? এবার জানুন আগেভাগেই
যদিও অনেকেই বলেন, চাঁচোল রাজা একসময় রানির সুস্থতা কামনায় তাঁর মন্দিরের কালীকে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ঘাড়ে নিয়েই দৌড়ে বিসর্জন দিতে গিয়েছিলেন। কালী মূর্তি বিসর্জন দিতেই অদ্ভুতভাবেই নাকি চাঁচোলের রানিমা'র সমস্ত ব্যাধি দূর হয়ে যায়। আর সেই বিশ্বাস থেকেই আজও মালতীপুরে হয়ে আসছে এই কালী দৌড়।
আরও পড়ুন- Holidays: সরকার চাইলেই আগামী বছরের কালীপুজোয় টানা ৬ দিনের ছুটি! কীভাবে? জানুন ঝটপট
কালী দৌড় কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা তথা স্থানীয় বিধায়ক আব্দুর রহিম বক্সী বলেন, "সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষ এই কালী দৌড় উৎসবে সামিল হন। বর্তমানে আটটি পুজো কমিটির কর্মকর্তারা কালী মূর্তি নিয়ে দৌড় প্রতিযোগিতায় সামিল হন। চাঁচোল রাজার আমল থেকেই এই উৎসব চলে আসছে। আগে বিদ্যুৎ ছিল না বলে, ভক্তেরা হাতে মশাল নিয়ে কালী দৌড়ে সামিল হতেন। এখন বিদ্যুৎ রয়েছে। তারপরেও ভক্তেরা প্রাচীন নিয়ম মেনেই হাতে মশাল রাখেন। এছাড়াও এই কালী দোড় উৎসবকে ঘিরে ভক্তদের খিচুড়ি খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়। চাঁচোল মহকুমা পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সমস্ত রকম সহযোগিতা করা হয়ে থাকে।"