/indian-express-bangla/media/media_files/2024/10/27/CK3Krb1XBRqIMzEs1Frl.jpg)
ছবির বাঁদিক থেকে তাপস কুমার কার্ফা, দ্বিজেন্দ্রনাথ ঘোষ ও অরুণ কুমার দে।
great teachers: শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে থাকা সম্পর্ক আজও বিশেষ মর্যাদার স্থানে অধিষ্ঠিত আমাদের সমাজে। সেই মর্যাদাকে মান্যতা দিয়ে অবসর গ্রহণের পরেও নিঃস্বার্থভাবে পড়ুয়াদের লেখাপড়া শিখিয়ে চলেছেন পূর্ব বর্ধমান জেলার তিন শিক্ষক। মহতী এই তিন শিক্ষক দ্বিজেন্দ্রনাথ ঘোষ, তাপস কার্ফা এবং অরুণ দে। ছাত্র সমাজে গুরুদায়িত্ব পালনে আজও নিয়মিত এঁরা পৌঁছে যান স্কুলে। পড়ুয়াদের কাছে টেনে নিয়ে তাঁরা আন্তরিকতার সঙ্গে পাঠ দেন।
পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের পাড়াতল ১ গ্রাম পঞ্চায়েত। এই এলাকার বসন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক দ্বিজেন্দ্রনাথ ঘোষ। রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং ইংরেজিতে মাস্টার ডিগ্রি করা দ্বিজেন্দ্রনাথবাবু দীর্ঘ ২৮ বছর জামালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। ২০০৮ সালে তিনি শিক্ষকতার জীবন থেকে অবসর নেন। তিনি যখন শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসর নেন সেই সময়ে বসন্তপুর গ্রামের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার ভরসা বলতে ছিল একটি মাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়। আশপাশে ছিল না কোনও জুনিয়র হাই স্কুল বা হাইস্কুল। তাই লেখাপড়া শেখার জন্য বসন্তপুর ও তার সংলগ্ন বেত্রাগড়, সজিপুর সহ একাধিক গ্রামের ছেলেমেয়েদের পাঁচ কিলোমিটার দূরে জামালপুর অথবা সেলিমাবাদ হাই স্কুলে যেতে হত। এই দূরত্বই স্কুল বিমুখ করে তুলছিল এলাকার দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া শ্রেণির পরিবারের ছেলেমেয়েদের।
এই বিষয়টি ভাবিয়ে তোলে দ্বিজেন্দ্রনাথ ঘোষকে। তিনি তাঁর গ্রামে একটা জুনিয়র হাই স্কুল গড়ার ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা নেন । তার জন্যে ২০১০ সালের প্রথম থেকে শুরু হয় তাঁর লড়াই। সেই লড়াইয়ে তিনি পাশে পান গ্রামের মানুষজন এবং সেই সময়ের জামালপুর ব্লকের স্কুল পরিদর্শক (এস আই) সমরেশ দাসকে। ওই বছরের জুন মাসে শিক্ষা দফতর থেকে বসন্তপুর গ্রামে একটি জুনিয়র হাইস্কুল তৈরির ব্যাপারে সবুজ সংকেত মেলে। সরকারি টাকায় অনুমোদন করা জমিতে তৈরি হয় স্কুল ঘর। ছাত্র ছাত্রীদের পড়াশোনার জন্য চারজন গেস্ট টিচারও মেলে। তার সঙ্গে ছিলেন দ্বিজেন্দ্রনাথ ঘোষও। নিঃস্বার্থভাবে স্কুলের ছেলে মেয়েদের পাঠদান করে চলেন তিনি। ২০১৮ সালে বিদ্যালয়ের জন্য তিনজন স্থায়ী শিক্ষকের অনুমোদন হলেও স্থায়ী শিক্ষক আজও আসেননি।
আরও পড়ুন- Bhangar Incident: বীভৎস কাণ্ড ভাঙড়ে! বাড়ির দরজা খুলতেই রক্তের স্রোত....তারপর?
সময় গড়ানোর সাথে সাথে গেস্ট টিচাররাও একে একে অবসর নিয়ে স্কুল ছাড়েন। শিক্ষকের আকালের কারণে বছর চারেক আগে স্কুলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। এই অবস্থায় স্কুলে তালা পড়া আটকাতে দ্বিজেন্দ্রনাথ ঘোষের অনুরোধে বেতনের প্রত্যাশা না করেই সুমন মাঝি, স্বাগতা ঘোষ, শিল্পা সাহা, সহেলী মণ্ডল ও বিশ্বজিৎ মিত্র নামে পাঁচ উচ্চ শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতী স্কুলের পড়ুয়াদের পাঠদানের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। স্কুল বাঁচাতে আজও তাঁদের সঙ্গে পূর্ণ সঙ্গত দিয়ে চলেছেন আশি ছুঁই ছুঁই দ্বিজেন্দ্রনাথ ঘোষ।
আরও পড়ুন- Amit Shah: 'কেন্দ্রের পাঠানো টাকা তৃণমূল নেতাদের পকেটে যায়', ২০২৬-এ বাংলায় পরিবর্তনের ডাক শাহের
দ্বিজেন্দ্রনাথ ঘোষের মতোই অপর দুই দরদী শিক্ষক কালনার কাঁসারিপাড়ার বাসিন্দা তাপস কুমার কার্ফা এবং রায়নার বুলচন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা অরুণ কুমার দে। দু’জনেই কাগজে কলমে শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসর নিয়েছেন। কিন্তু দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবন কাটানোর পর স্কুল থেকে অবসর নিলেও তাঁরা পড়িয়ে চলেছেন এখনও। কালনার মহারাজা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন শিক্ষারত্ন পুরস্কার প্রাপ্ত শিক্ষক তাপস কার্ফা। জীববিজ্ঞানের শিক্ষক তাপসবাবু ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর অবসর নেন। তবু আজও তিনি নিয়ম করে স্কুলে পৌছে যান স্কুলের পড়ুয়াদের লেখাপড়া শেখাতে। পড়ুয়া অন্ত প্রাণ তাপস কার্ফা কালনা মহারাজা উচ্চ বিদ্যালয়ের উন্নতিকল্পে ২ লক্ষ টাকা দানও করেছেন। শুধু শিক্ষা দানই নয়, তাপস বাবু গ্রামে-গ্রামে গিয়ে ডাইন-প্রথা সহ কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সচেতনতায় প্রচারও চালান।
একইভাবে পড়ুয়া দরদী শিক্ষক হিসেবে রায়নার নাড়ুগ্রাম পঞ্চায়েতের দলুইদিঘি গ্রামের অরুণ দের নাম না করলেই নয়। দলুইদিঘি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০১০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা করে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। কিন্তু অবসর নিলেও স্কুল ও স্কুলের পড়ুয়াদের ছেড়ে থাকতে পারেননি তিনি। অবসরের পরেও পড়ুয়াদের লেখাপড়া শিখিয়ে চলেছেন তিনি।