প্রতি বছরই ২১ জুলাই তৃণমূলের শহীদ সভায় দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা শুনতে পাহাড় থেকে শুরু করে সমতলের হাজার-হাজার মানুষ কলকাতার ধর্মতলায় জড়ো হন। এবারও তার অন্যথা হয়নি। প্রতি বার কলকাতার পথে পূর্ব বর্ধমানের শক্তিগড়ে গাড়ি থামে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের একটি বড় অংশের। দেদার বিকোয় ল্যাংচা। এবার একুশেও ফাটাফাটি বিক্রি ছিল পূর্ব বর্ধমানের অতি পরিচিত এই মিষ্টির। শক্তিগড়ের ল্যাংচা ব্যবসায়ীরা তো সেই বিক্রিতে আহ্লাদে আটখানা।
বছরের পর বছর ধরে ২১ জুলাই দিনটিতে শহীদ স্মরণ দিবস পালন করে আসছে তৃণমূল কংগ্রেস। বছর ঘুরলেই ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোট। সেই নির্বাচনকে টার্গেট করে তৃণমূল সুপ্রিমো কী বার্তা দেন তাতে গতকাল নজর ছিল তৃণমূলের কর্মীদের। তা শোনার জন্য দুই বর্ধমান, বাঁকুড়া,বীরভূম, পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদ সহ উত্তরবঙ্গের তৃণমূল কর্মীরাও অজস্র বাস-গাড়িতে গতকাল ১৯ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে কলকাতার দিকে রওনা দিয়েছিলেন। নেত্রীর ভাষণ শুনে একই পথ ধরে তারা নিজের নিজের এলাকায় ফেরেন।
সভায় যাওয়ার আগে এবং গতকাল বিকালে সভা শেষে ফেরার পথে তৃণমূল কর্মী ও সমর্থকদের বাসগুলির স্টপেজ 'মাস্ট' থাকে শক্তিগড়ে ল্যাংচার দোকানের সামনে। ল্যাংচা ছাড়াও পূর্ব বর্ধমানের অপর দুই প্রসিদ্ধ মিষ্টি সীতাভোগ ও মিহিদানা কেনার জন্য তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা ভিড় করেন শক্তিগড়ের ল্যাংচার দোকানগুলির সামনে। ল্যাংচার দোকানগুলি যেন তৃণমূলের সমাবেশস্থলের রূপ পেয়ে যায়। ভিড় সামলাতে শক্তিগড়ের ল্যাংচা বাজার এলাকায় পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়।
আরও পড়ুন- West bengal News Live Updates:২১ জুলাই মিটতেই তৃণমূলের তারকা সাংসদকে নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য দিলীপ ঘোষের
সভা শেষে তৃণমূল কর্মীদের নিয়ে বাস ও অন্য যানবাহন গুলি ফেরে দুর্গাপুরমুখী জাতীয় সড়ক ধরে। তাই ওই সময়ে দুর্গাপুরমুখী সড়ক পথের ধারে থাকা ল্যাংচার দোকানগুলিতে বিক্রিবাটার জোয়ার বইতে শুরু করে দেয়। জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণ হওয়ার কারণে এর ঠিক উল্টো অবস্থা তখন থাকে কলকাতামুখী জাতীয় সড়কের ধারে থাকা ল্যাংচার দোকান গুলিতে।
আরও পড়ুন- Dwijendrallal Roy:উপেক্ষিত জাতীয়তাবাদী কবি দ্বিজেন্দ্রললাল রায়, যথাযোগ্য সম্মানের দাবিতে লড়াই জারি গুণমুগ্ধদের
এবার অবশ্য আর কোন ল্যাংচা ব্যবসায়ীকেই আর হাপিত্যেশ করতে হয়নি। জেলা পুলিশ ও প্রশাসন এবার শক্তিগড়ে দুর্গাপুরমুখী জাতীয় সড়কের ধারে খোলা মাঠে ল্যাংচা ব্যবসায়ীদের নিয়ে দু'দিনের মেলার আয়োজন করে। ২০ জুলাই
মেলা শুরু হয়। কলকাতামুখী জাতীয় সড়কের ধারে থাকা ল্যাংচা ব্যবসায়ীরা সেই মেলায় দোকান বসান। খদ্দেরকে নিজেদের দোকানে টানার জন্য আলাদা লোকও নিয়োগ করে রাখেন ল্যাংচা ব্যবসায়ীরা।
আরও পড়ুন- Kolkata weather Update:শ্রাবণের শুরুতেই 'খেল' শুরু বর্ষার! ফের নিম্নচাপের ভ্রুকুটি! আবহাওয়ায় বিরাট বদল কখন থেকে?
তারাই সারাটা দিন জাতীয় সড়কের ধারে দাঁড়িয়ে তৃণমূল কর্মীদের বাসগুলি তাঁদের দোকানের সামনে দাঁড় করানোর জন্যে আপ্যায়ন করে চলেন। বাস-সহ অন্য যানবাহন থেকে নেমে খদ্দেররা কেউ মেলার দোকান থেকে আবার কেউ জাতীয় সড়কের ধারের স্থায়ী দোকানে গিয়ে ল্যাংচা ও সীতাভোগ খেলেন। শুধু দোকানে বসে খাওয়াই নয় ,তাঁরা বাড়ির লোকেদের জন্যেও প্যাকেট প্যাকেট ল্যাংচা, সীতাভোগ ও মিহিদানা কিনেও নিয়ে গেলেন। পুলিশের দাবি প্রথম বছরেই ল্যাংচা মেলায় সুপার হিট বিক্রি হয়েছে। জাতীয় সড়কও যানজট মুক্ত রাখা গেছে।
শুধু ল্যাংচা, সীতাভোগ ও মিহিদানা খাওয়া ও কেনাই নয় ,অন্য নানা খাবারের পসার নিয়েও বিভিন্ন ব্যবাসায়ীদের এদিন শক্তিগড়ে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে ও ল্যাংচা মেলায় বিক্রিবাটা করতে দেখা যায়। শহীদ দীবসে ব্যবসা ভালো হওয়ায় তারা সকলেই খুশি। শক্তিগড়ের ল্যাংচা ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ দাস বলেন,’২১ জুলাইয়ের একমাস আগে থেকে আমরা সকল ল্যাংচা ব্যবসায়ীরা প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে দি ।মিষ্টির সমস্ত উপকরণ আগে থেকে রেডি করে ফেলা হয় ।এই একমাস কারিগর, কর্মচারি সবাইকে নিয়ে গমগম করে আমাদের দোকান।আর ২১ জুলাই তারিখে ল্যাংচার দোকানগুলির সামনে কার্যত মহাযজ্ঞ চলে।এবছরের ২১ শে জুলাই ল্যাংচা মেলাও সাড়া ফেলে দিয়েছে।
আরও পড়ুন- Fire:সাতসকালে জেলা পরিষদ ভবনে অগ্নিকাণ্ড! তুমুল চাঞ্চল্য, অন্তর্ঘাত না নিছকই দুর্ঘটনা?
অপর ল্যাংচা ব্যবসায়ী কৌশিক ঘোষ বলেন, "তৃণমূলের সমাবেশে যাওয়ার সময় শক্তিগড়ে গাড়ি থামিয়ে অনেক তৃণমূলের কর্মী সমর্থক টিফিন করেছেন।আবার সমাবেশ শেষে বাড়ি ফেরার পথেও তারা শক্তিগড়ে গাড়ি দাঁড় করিয়ে মিষ্টি খাওয়া দাওয়া তো করেছেন, পাশাপাশি তারা ল্যাংচা, সীতাভোগ, মিহিদানা কিনে নিয়েও গেছেন। শক্তিগড়ের ল্যাংচা ব্যবসায়ীদের কাছে ২১ শে জলুই সেরা ব্যবসার দিন হিসাবেই মান্যতা পেয়ে গিয়েছে।"