Purba Bardhaman News:প্রকাশ্য রাস্তায় আঙুল উঁচিয়ে পুলিশ অফিসারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় ফেলে দিয়েছিলেন অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal)। এবার খানিকটা সেই কায়দাতেই ফের এক শাসকনেতার ভয়ঙ্কর শাসানির মুখে পুলিশ। ঘটনাস্থল
অনুব্রতর গড় হিসেবেই পরিচিত পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোট।
মঙ্গলকোটের ক্ষীরগ্রাম অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি মাসুদুর রহমান দিনে-দুপুরে জনবহুল রাস্তায় দাঁড়িয়ে একেবারে অনুব্রতর কায়দাতেই আঙুল উঁচিয়ে পুলিশকে হুঁশিয়ারি দেন। পুলিশকে তাঁর হউঁশিয়ারি, “ফ্লেক্স ও ব্যানার পোড়ানোর ঘটনায় জড়িত দোষীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে। একটা পর্যন্ত সময় থাকল। না হলে আপনাদেরও হাতে চুড়ি পড়িয়ে দেব।" সামান্য একজন অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতির এভাবে পুলিশকে হুঁশিয়ারি দেওয়ার ঘটনা নতুন করে আলোড়ন ফেলেছে রাজনৈতিক মহলে ।
আগামী ১ জানুয়ারি তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা দিবস। পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা মঙ্গলকোটের পালিশগ্রামের তৃণমূল নেতা শ্যামাপ্রসন্ন লোহারের অনুগামীদের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা দলের প্রতিষ্ঠা দিবসের দিন রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেছে। ওই দিনে মঙ্গলকোট ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে কৈচরে দলীয় কার্যালয়ে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করার কথা ।সেই কারণে ক্ষীরগ্রাম অঞ্চলের কুড়ুম্বাগ্রাম সহ একাধিক গ্রামে রক্তদান শিবিরের ব্যানার টাঙানো হয়। ব্যানার টাঙানোর সময় এলাকার বিধায়ক গোষ্ঠীর লোকজনের বিরুদ্ধে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। তা নিয়ে বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী গোষ্ঠীর সঙ্গে সভাধীপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহারের গোষ্ঠীর মধ্যে চলা বিবাদ চরমে ওঠে।
আরও পড়ুন- West Bengal News Live:পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের জঙ্গলে 'রয়্যাল বেঙ্গল রহস্য', গ্রাম ঘেরা হল জালে
তারই মাঝে ক্ষীরগ্রাম অঞ্চলের কুড়ুম্বা গ্রামে টাঙানো থাকা রক্তদান শিবিরের ফ্লেক্স ও ব্যানার ছিড়ে দেওয়া ও পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই গোষ্ঠীর বিবাদে ঘৃতাহূতি পড়ে। যার বহিপ্রকাশ ঘটে মঙ্গলকোটের কৈচরে। রক্তদান শিবিরের ব্যানার পোড়ানোর ঘটানায় শ্যামাপ্রসন্ন লোহারের অনুগামীরা অভিযোগের আঙুল তুলেছেন বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরীর গোষ্ঠীর লোকজনের বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন- West Bengal Weather: ঝঞ্ঝায়-ঝঞ্ঝায় শীতের দফারফা, পৌষেও টানা বৃষ্টি? শীত নিয়ে বড় আপডেট!
তৃণমূল কংগ্রেসের রক্তদান শিবিরের ফ্লেক্স ও ব্যানার পোড়ানোর ঘটনা নিয়ে মঙ্গলবার মঙ্গলকোটের কৈচরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় ক্ষীরগ্রাম অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি মাসুদূর রহমান ওরফে মুকুলের নেতৃত্বে ওই দিন কৈচর পুলিশ ফাঁড়ির সামনের বর্ধমান-কাটোয়া রাজ্যসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানো শুরু করে তৃণমূল কংগ্রেসের লোকজন। পুলিশ সেই অবরোধ তুলতে গেলে বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরীর অনুগামী হিসাবে পরিচিত অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি মাসুদূর রহমান পুলিশকে উদ্দেশ্য করে চুড়ান্ত হুঁশিয়ারি দেন। তিনি পুলিশকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন,“মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সহযোগে তৈরি ফ্লেক্স পোড়ানোর ঘটনায় জড়িত দোষীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে। একটা পর্যন্ত সময় থাকল। না হলে আপনাদেরকেও হাতে চুড়ি পড়িয়ে দেব।"
যদিও কিছুক্ষণ অবরোধ চলার পর বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী এসে দলীয় কর্মীদের সরিয়ে নিয়ে গেলে ওই সড়ক পথে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। ওই সময়ে ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী আবার পশ্চিমবঙ্গ পুলিশকে, 'নপুংসক পুলিশ' বলে কটাক্ষ ছুঁড়ে দেন।
আরও পড়ুন- India-Bangladesh Relation: পায়ের তলায় ভারতের জাতীয় পতাকা, এবার বাংলাদেশ বয়কটের ডাক দিল দিল্লি
বিষয়টি নিয়ে বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী বলেন,“আমরা সবসময়ই দল নেত্রীর আদর্শ মেনে উন্নয়ন ও শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার পক্ষে কিন্তু। মুখ্যমন্ত্রীর ছবি পুড়িয়ে দিলে দেলের কেই বা মাথা ঠিক রাখতে পারে। যাঁরা এলাকা অশান্ত করতে চাইছে ,পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক। আমরা তো সেটাই চাইছি।" জেলাপরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার বলেন, “যাঁরা ব্যানার ছিঁড়ে দিয়েছে ,পুড়িয়ে দিয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নিক। সেটাই তো আমরা চাই। তবে এই দাবির কথাটা নিয়ে কেউ পুলিশকে হুঁশিয়ারি দিয়ে থাকলে বা অনৈতিক কথা বলে থাকলে ঠিক কাজ কর করেনি।"
এদিকে তৃণমূল নেতাদের পুলিশেকে হুঁশিয়িয়ারি দেওয়ার ঘটনা নিয়ে পুলিশের কেউ মুখ না খুললেও বিষয়টি নিয়ে বিরোধীরা অবশ্য চুপ থাকতে নারাজ। জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, “বাংলার পুলিশ অনেকদিন আগেই রাজ্যের শাসক দলের দলদাসে পরিণত হয়েছে।পুলিশের বড় অফিসারকে আঙুল উঁচিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে অনুব্রত মণ্ডল সেটা অনেকদিন আগেই প্রমাণ করে দিয়েছেন । সেই হুঁশিয়ারির ঘটনা নিয়ে পুলিশ আজ অবধি তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এখন তৃণমূলের সামান্য একজন অঞ্চল সভাপতিও প্রকশ্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে অনুব্রতর কায়দায় আঙুল উঁচিয়ে সময় বেঁধে দিয়ে পুলিশকে হুঁশিয়ারি দিচ্ছে। তৃণমূলের রাজত্বে বাংলার পুলিশের ভবিতব্য এখন এটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে।"
এদিকে পুলিশকে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় তৃণমূলের ওই অঞ্চল সভাপতির বিরুদ্ধে স্বতপ্রণোদিত মামলা হয়েছে। তবে পুলিশকে 'নপুংসক' বললেও বিধায়কের বিরুদ্ধে এখনও কোনও মামলা রুজু হয়নি। বিষয়টি নিয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, পুলিশের কাজে হস্তক্ষেপ না করা এবং পুলিশ সম্পর্কে কোনও বিরূপ মন্তব্য না করার কথা মুখ্যমন্ত্রী আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন। তারপরেও কেউ যদি মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ না মানেন, তাহলে তার ফল তাকেই ভুগতে হবে।