/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/10/tmc-2025-10-10-08-55-39.jpg)
Tripura TMC office attack: আগরতলায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল।
ত্রিপুরায় তৃণমূল কংগ্রেস দলের সদর দপ্তরের দলীয় পতাকা, ফ্লেক্স ব্যানার ও অন্যান্য প্রচারসজ্জা নষ্ট করার দুদিনের মধ্যে দলের ৬ সদস্যের এক প্রতিনিধিদল রাজ্যপাল ইন্দ্রসেনা রেড্ডি নাল্লুর সাথে দেখা করে ঘটনায় জড়িত ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বদের অবিলম্বে গ্রেফতার করার দাবি জানিয়েছেন, পাশাপাশি রাজভবন এবং রাজ্য মহাকরণ চত্বরে নিউ ক্যাপিটাল কমপ্লেক্স থানায় গোটা ঘটনাটি নিয়ে BJP নেতাদের বিরুদ্ধে এফআইআর দাখিল করেছেন।
পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলায় বন্যা ত্রাণ বিলির সময় বিজেপি বিধায়ক খগেন মুর্মু এবং শংকর ঘোষ আক্রান্ত হবার ঘটনা কিছুক্ষণের মধ্যেই মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আচমকাই ত্রিপুরার শাসকদল বিজেপির একটি মিছিল থেকে রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেস ভবনের সামনে ভাঙচুর চালিয়েছে একদল বিজেপি কর্মী। ঘটনার কিছুক্ষণ আগেই সেদিন পশ্চিমবাংলায় কুমারগ্রাম বিধানসভা এলাকায় বন্যা প্রাণ সামগ্রী বিলির সময়ে শাসক তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের হাতে বিজেপি বিধায়ক মনোজ কুমার ওরাও আক্রান্ত হন।
বিজেপি দলের পক্ষে ঘটনাকে স্বীকার করে বলা হয়েছিল, একটি প্রতীকী প্রতিবাদে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি দলীয় নেতৃত্বের উপর তৃণমূল কংগ্রেসের হিংসাত্মক আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এখানকার তৃণমূল কংগ্রেস অফিসের সামনে তাদের কিছু প্রচার সামগ্রী তুলে ফেলা হয়েছিল। বিজেপি মুখপাত্র অবশ্য দাবি করেছিলেন তাঁর দলের কেউ তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়ের ভেতরে ঢোকেনি, ভাঙচুর করা হয়নি কার্যালয়ের ভেতরে। তৃণমূল সাংসদ প্রতিমা মণ্ডল, সায়নী ঘোষ, মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা, সুদীপ রাহা, রাজ্যসভার সাংসদ সুস্মিতা দেব এবং কুণাল ঘোষদের নিয়ে মোট ৬ সদস্যের তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিনিধিদল আগরতলায় এসেছিলেন।
আগরতলায় মহারাজা বীর বিক্রম বিমানবন্দরে অবতরণ করার পর তাদের যাত্রার জন্যে নির্দিষ্ট গাড়ি না পাওয়ায় প্রায় তিনঘন্টা পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা এবং সবশেষে বিমানবন্দর চত্বরেই ধর্নায় বসার পর অবশেষে গাড়ি এলে তাঁরা গাড়িতে করে আগরতলার দিকে যাত্রা করেন। আক্রান্ত দলীয় কার্যালয় পরিদর্শনের পর গোটা ঘটনাক্রম নিয়ে রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অনুরাগ ধ্যানকরের সাথে এক বৈঠকে মিলিত হন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা। রাজনৈতিক হিংসার অভিযোগ তুলে বিজেপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনি ব্যবস্থা নেবার দাবি তুলে রাজ্যপাল ইন্দ্রসেনা রেড্ডি নাল্লুর সাথে দেখা করতে যান তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বরা। তবে জরুরি কাজে রাজ্যপাল দিল্লিতে থাকায় তাঁর সচিব উত্তম কুমার চাকমার কাছে ডেপুটেশনটি জমা করে আসেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিনিধিরা।
রাজ ভবনের বৈঠক সেরে বেরিয়ে আসার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে প্রতিনিধিদলের প্রধান কুণাল ঘোষ বলেন, "পশ্চিমবঙ্গে ভোটের সময় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসেন, ডেলি প্যাসেঞ্জারী করেন। আমরা আমাদের সংগঠন বিস্তার করার চেষ্টা করছি। আমাদের প্রাসঙ্গিকতা আছে বলেই আমাদের পার্টি অফিসে আক্রমণ করা হয়"।
আরও পড়ুন-Mahua Moitra:অসমের NRC চিঠি নদিয়ায়, 'BJP-র চক্রান্ত, ভোটের আগে আতঙ্ক ছড়ানোর খেলা', সোচ্চার মহুয়া
ত্রিপুরায় তৃণমূল কংগ্রেসের দুর্বল সাংগঠনিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, "তৃণমূল কংগ্রেস (এখানে) দুর্বল, মেনে নিচ্ছি আমরা দুর্বল। আমরা আরও শক্তিশালী হওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু আমাদের গুরুত্ব মানুষের কাছে একটি রকম আছে। সেটাকে আরও তীব্র সাংগঠনিক রূপ কিভাবে দেওয়া যায়, সেনিয়ে মমতা বন্দোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দোপাধ্যায় সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু আমাদের প্রাসঙ্গিকতা আছে বলেই আমাদের পার্টি অফিসটা আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়। ত্রিপুরার মানুষ চান মমতা বন্দোপাধ্যায়ের উন্নয়নের মডেল - কন্যাশ্রী, লক্ষীর ভাণ্ডার, সাস্থ্য সাথী ইত্যাদি এখানেও হোক"।
তিনি আরও বলেন, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ড. মানিক সাহা দুর্গাপূজার প্রতিমা বিসর্জনের কার্নিভাল মমতা বন্দোপাধ্যায়ের রেড রোডের অনুকরণে তৈরি করেছেন। ত্রিপুরায় জেরক্স কপি নেবেন কেন, অরিজিনাল কপি নিন, বলেন কুণাল। ১৯৯৯ সালে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সুধীর রঞ্জন মজুমদারের হাত ধরে ত্রিপুরায় তৃণমূল কংগ্রেস দলের যাত্রা শুরু হয়। ২০১৮ সালের আগে কংগ্রেস দল থেকে ছয় জন বিধায়কের নেতৃত্বে একটি বড় রাজনৈতিক গোষ্ঠী তৃণমূল কংগ্রেসের যোগ দিয়েছিল। তবে অনতিবিলম্বে এরা আবারো দল বদল করে বিজেপিতে যোগ দেয়। ২০২১ সালের পুরভোটের আগে তৃণমূল কংগ্রেস দলের বিভিন্ন নেতারা মাঠ সরগরম করে আবারো ত্রিপুরা রাজনীতি নিয়ে সরব হয়ে ওঠেন। আগরতলা পুর নিগমে ভোটের ফলাফলে প্রধান বিরোধী সিপিআইএমকে টপকে দ্বিতীয় স্থানে জায়গা করে নিয়েছিল তৃণমূল।
২০২৩ বিধানসভা নির্বাচনের আগেও তৃণমূল কংগ্রেসকে ত্রিপুরায় সক্রিয় হয়ে উঠতে দেখা গিয়েছিল। তবে ভোটের অন্তর্বর্তী সময় এবং বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রভাব এ রাজ্যে ক্রমশ ক্ষীন হয়ে আসছিল। ২০২৩ সালের জুলাই মাসেই তৃণমূল কংগ্রেস দলের রাজ্য সভাপতি পীযূষ কান্তি বিশ্বাস পদত্যাগ করেন। তখন থেকেই নেতৃত্ব বিহীনভাবে কাজ করছিল দলটি।
আরও পড়ুন-বাংলায় SIR তোড়জোড় তুঙ্গে! জেলায়-জেলায় শুরু কমিশনের বৈঠক
এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কুণাল ঘোষ বলেন, "এ নিয়ে মন্তব্য করার সময় এখনো আসেনি তবে ভবিষ্যতে ত্রিপুরা তৃণমূল কংগ্রেসকে পুরোদস্তুর পাশে পাবে। যারা ভাঙচুর করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য, অতীতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যান্য নেতা কর্মীদের ওপর আক্রমণের ঘটনা থানা ভাঙচুর ইত্যাদি বিষয়ে যেসব মামলা করা হয়েছিল সেই দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হলো তার সর্বশেষ তথ্য জানাবার জন্য এবং দলীয় কর্মী ও সমর্থকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য রাজ্যপালের কাছে দাবী জানানো হয়েছে। যদি যথোপযুক্ত ব্যবস্থা না নেয়া হয় তাহলে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।"
তবে বৈঠকে রাজ ভবন থেকে তাদের কী বলে আশ্বস্ত করেছেন এ নিয়ে কিছু খোলসা করেননি তারা। এরপর নিউ ক্যাপিটাল কমপ্লেক্স থানায় বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণ সহ বিজেপির বিভিন্ন নেতাদের বিরুদ্ধে তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়ে আক্রমণ করার ঘটনা নিয়ে একটি মামলা দায়ের করেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে আগত প্রতিনিধিরা। পুলিশকর্তাদের সাথে বিস্তৃত আলোচনাও হয় তাদের।
এ নিয়ে কলকাতায় ফিরে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে প্রতিনিধিদল কি জানাবে, এ নিয়ে কুনাল ঘোষ বলেন, "আমরা কি জানাব, সেটা এখানে এভাবে বলতে পারি না, আমাদের এক্তিয়ার নেই। ত্রিপুরা সম্পর্কে যা নজর রাখার, তা সম্পূর্ণভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দোপাধ্যায় রেখেছেন। কাল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, দরকার হলে তিনি সরাসরি চলে আসবেন। তাঁরা সমস্তটাই নজর রাখছেন। পরবর্তী সিদ্ধান্ত শীর্ষ নেতৃত্ব যথাসময় নেবেন"।
মোট কতজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হলে, এ নিয়েও প্রতিনিধিদল বিস্তারিত কিছু জানাতে অস্বীকার করে। তবে তারা বলেছেন, "কতজনের বিরুদ্ধে নয়, যাদের যাদের দেখা গেছে, তাদের সবার বিরুদ্ধেই মামলা করা হচ্ছে। ভিডিও জমা দিয়েছি। ত্রিপুরার অনেকেই ক্রমশ আরও নাম পরিচয় এবং ভিডিও আমাদের দিচ্ছেন। ফলে আমাদের ডকুমেন্টটি তৈরি করতে একটু সময় লাগছিল। আমরা ডকুমেন্টসহ পুলিশের কাছে জমা করেছি"।
আরও পড়ুন-'বৈধ ভোটারদের নাম বাদ দিলে BJP নেতাদের ধরে রাখুন', TMC সাংসদের নিদান ঘিরে বিতর্ক
এদিকে ত্রিপুরায় তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয় আক্রমণের ঘটনাটির নিন্দা জানিয়ে সিপিআইএম পলিটব্যুরো সদস্য জিতেন্দ্র চৌধুরী বলেছেন, "পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি জনপ্রতিনিধিদের উপর আক্রমণ এবং ত্রিপুরায় তার পাল্টা হিসেবে তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয় আক্রমণ দুটোই গণতন্ত্রের উপর সরাসরি আঘাত। পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেসের হাতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির গণতান্ত্রিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।"
এনিয়ে প্রশ্ন করা হলে আজ কুণাল ঘোষ বলেন, "সিপিআইএমের কথা ত্রিপুরায় এক, তো পশ্চিমবঙ্গে আরেক। ত্রিপুরায় কমিউনিস্ট পার্টির সমর্থকদের কমরেড বলে আখ্যায়িত করলেও পশ্চিমবঙ্গে এদের সহকর্মীরা বিজেপির বি-টিম অথবা "রামরেড" এ পরিণত হয়েছে।"
আগে ২০২৩ রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন এবং ২০২১ পুরসভা নির্বাচনের আগে সাংসদ সুস্মিতা দেবের কনভয়ে আক্রমণ তৃণমূল নেতা সুদীপ রাহার ওপর শারীরিক আঘাত এবং দলীয় কর্মীদের ওপর হামলা হুজ্জুতির স্মৃতি মনে করিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস দলের নেতৃত্বরা বলেছেন, "পশ্চিমবাংলায় নাগরাকাটায় বিজেপি সাংসদ এবং বিধায়কদের ওপর যে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে সেগুলো নিন্দনীয় এবং তৃণমূল কংগ্রেস দলের পক্ষে তার সমালোচনাও জানানো হয়েছে।"
তৃণমূল কংগ্রেসের সকল অভিযোগ খণ্ডন করে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ড. মানিক সাহা
বলেছেন, "সুযোগ পেয়েছি, সুযোগ পেয়েছি বলে কিছু রাজনৈতিক নেতা কলকাতা থেকে আগরতলা এসেছেন। আমি বলেছি, তারা আসুক, যা করবে করুক। এতে আমাদের কোনও আপত্তি নেই।" এদিকে, ত্রিপুরার দলীয় সদর দপ্তর চত্বরে প্রচারসজ্জা নষ্টের ঘটনায় মুখ খুলেছেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। আগরতলায় এমবিবি বিমানবন্দরে দলের প্রতিনিধিরা প্রায় তিন ঘন্টা ধরনায় বসেছিলেন এ কথা জানতে পেরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, "সেরকম হলে আমিও যাব। দেখি কার কত দম!"
/indian-express-bangla/media/agency_attachments/2024-07-23t122310686z-short.webp)
Follow Us