Tips for good Health: শরীরের ওজন কমানো নিয়ে মানুষের মধ্যে দুশ্চিন্তার শেষ থাকে না। আবার আনেকে খুব রোগা হলে ওজন বৃদ্ধির প্রয়োজন হয়। স্থূলতা শরীরে নানা সমস্যার সৃষ্টি করে। আমাদের সনাতনী মশলা, রান্নাঘর ও দৈনন্দিন কাজের মধ্যেই রয়েছে প্রতিকার। এই বিষয় নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোকপাত করেছেন এএম মেডিক্যাল সেন্টারের ডায়েটিশিয়ান জয়তী। তিনি ডায়েট সংক্রান্ত একাধিক টিপস দিয়েছেন। কী বলছেন জয়তী?
বিশিষ্ট ডায়েটিশিয়ান জয়তীর কথায়, "আমরা অনেক সময় গুগল বা ইউটিউব দেখে বা জেনে না জেনে ডায়েট করে থাকি। তাতে দেখা যায় চুল পড়ে যাচ্ছে। স্ক্রিন রাফ হয়ে যাচ্ছে। সাময়িকভাবে ওয়েট কমে যাচ্ছে, রোগা হচ্ছি। কিন্তু আমরা ভাবতে পারি না বছর ৪-৫ পর আমাদের অর্গানগুলির কী অবস্থা হবে! এমন রোগীরাও আসেন আমার কাছে।"
ঘরের কাজেই লুকিয়ে 'ম্যাজিক'
তিনি বলেন, "আমাদের সনাতনী খাবার ও ঘরের কাজকর্ম আছে। সেগুলি করলে যেমন মশলা বাটা, রুটি বেলা, কাপড় কাঁচা, ঘর পোছা। ভুঁরি কমানো নিয়ে এতো টেনশন! কিন্তু খুব কম দিনের মধ্যে এটা সম্ভব। বেলি ফ্যাট সহজে কমে যায়। কোনও ফ্রোজেন সোল্ডার, হাত-পা ব্যথা হয় না। বিদেশিদের কপি না করে সনাতনী প্রথায় কাজকর্ম করি তাহলেই সমাধান হয়ে যাবে। যেমন বসে রান্না করার পদ্ধতি গ্রাভিটেশন ফোর্স কাজ করে, তাতে অনেক ধরনের সমস্যা থেকে দূরে থাকতে পারি।"
শরীর সুস্থ রাখতে মন চাঙ্গা রাখা প্রয়োজন
তাঁর কথায়, "সুস্বাস্থ্য কাকে বলতে পারি আমরা? সেটা চারটে পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও অধ্যাত্মিক স্বাস্থ্য। আমি মনে করি, আমরা কখনও মনকে বাদ দিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখতে পারব না। উদাহরণস্বরূপ বলতে পারি, আমরা বেড়াতে গিয়েছি। বাইরে গিয়েছি। প্রচণ্ড গরম সেখানে ৪৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা। আগে হয় তো ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম। সেই মুহুর্তে আমার কাছে একটা ফোন আসে। আমরা জবটা হয়ে গিয়েছে। যে স্যালারি পাব ভেবেছিলাম, তার থেকে বেশি পেয়েছি। সেই মুহুর্তে আর ক্লান্তি থাকবে না। তখন শরীরের ভালো হরমোনগুলো সিক্রেশন হল। সেটার জন্য আমি শারীরিকভাবে ক্লান্তি থেকে বেরিয়ে এলাম। এটাই মন ও শরীরের সম্পর্ক।"
আরও পড়ুন- Vastu For Bedroom: বিছানায় বসে খাচ্ছেন? সর্বনাশ! ভুলেও এই ৬টি কাজ করবেন না, নাহলে ফল মারাত্মক হবে
আরও পড়ুন- Season Change Health Tips: সিজন চেঞ্জ হচ্ছে, ধারেকাছে ঘেঁষবে না জ্বর-সর্দি-কাশি, শুধু করুন এই কাজটি
নিজের ডায়েটিশিয়ান নিজে হবেন না
"কোভিড আমাদের অনেক খারাপ-খারাপ জিনিস দিয়ে গিয়েছে। বাচ্ছাদের মধ্যে অদ্ভুতভাবে ডিপ্রেশন এসেছে। আমাদের মধ্যে অ্যাংজাইটি, ডিপ্রেশন এগুলি কাজ করে কোনওটা বুঝতে পারি কোনওটা বুঝতে পারি না। মোটা হলে অনেকে ট্রিপিক্যাল কথা বলে। দেখে মনে হচ্ছে তুই দুই প্যাকেট বিরিয়ানি খেয়েছিস। থাইরয়েড টেষ্ট করেছিস? খেলেই মোটা না খেলেই রোগা হব তা কিন্তু নয়। এর মধ্যে অনেক কারণ আছে। একজনকে ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা সময় দিয়ে মূল উৎস খোঁজার চেষ্টা করি। উৎস খুঁজে পেলে ওজন বেড়ে যাওয়া নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিছু লাইফস্টাইল পরিবর্তন করে, পাশাপাশি ডায়েট করে। তবে নিজের ডায়েটিশিয়ান নিজে হবেন না। নিজের সাইকোলজিস্ট নিজে হবেন না। প্রতিটি মানুষের পৃথক পৃথক ডায়েট চার্ট হয়। প্রপার গাইডেন্স নিলে ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যে ওভার ওয়েট নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।"
রান্নাঘরেই লুকিয়ে সুস্থতার চাবিকাঠি
"Spieces are the medicines when kitchen is the clinic.। মশলাপাতি ও আমাদের রান্নাঘরই এবিষয়ে সব থেকে বেশি ভরসা যোগ্য। আমাদের মশলার ভাণ্ডার ব্যাবহার করতে পারি। রান্নার বাইরেও তা ব্যাবহার করা যায়। মুখে, চুলেও দিতে পারি। অনেক ক্ষেত্রে ঘুমও ভালো হবে। ডিপ্রেশন কমবে। সুগার রিভার্স হবে। ক্যানসারকে কিছুটা হলেও আটকানো যাবে। ওজন কম থাকলে বাড়ানো যাবে। চুল পড়া বন্ধ হবে। জন্ম থেকে ৬ মাসের বাচ্ছা যেমন মায়ের দুধের ওপর ডিপেন্ড করে তেমনি পরবর্তীতে প্রপার ডায়েট মেইনটেন করে লাইফস্টাইল করা যায় তাহলে সুস্থ সুন্দর শরীর ও মন পাওয়া যাবে। প্রেগটেন্ট মাদারদের ডায়েট চার্ট মেইনটেন করা উচিত। ভবিষ্যতে সন্তান যাতে সুস্থ সবল থাকে। একইসঙ্গে তিনিও ভালো থাকবেন।"
আরও পড়ুন- Heart Attack: ভোরে বেশিরভাগ হার্ট অ্যাটাক! হাঁটাতেই কী মুক্তি?
সঠিক ডায়েটচার্ট মেনে চটজলদি কমেছে ৩৭ কেজি ওজন
"আমার কাছে একজন রোগী এসেছিলেন। তাঁর ওজন ছিল ১৯০ কিলো। এই ওজন নিয়ে আমার কাছে এসেছিল। এখন হয়েছে ১৫৩ কেজি। তাঁর বয়স মাত্র ৩২ বছর। মন খুলে তাঁর সমস্যার কথা আমাকে বলে। তাঁকে মানসিকভাবে সমর্থন করি।। কিছু মশলাপাতি দিই। খাওয়া কম করে, নেশা ছেড়ে সে এখন সুস্থ। লাইফস্টাইল পরিবর্তন যদি নিজেরাও করি তাহলেও কিছুটা সুস্থ থাকব।"
সুস্থ থাকতে আজ থেকেই মানুন এই নিয়ম
"আমাদের জীবন থেকে সাদা ময়দা,চাল, চিনি, দুধ, সাদা নুন বাদ দিতে হবে। মুখ বন্ধ করে খাবার চিবিয়ে চিবিয়ে ভালো করে খেতে হবে। সাধারণভাবে খাওয়ার আধ ঘন্টা আগে ও খাওয়ার একঘন্টা পরে জল খেতে হবে। নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী জল খেতে হবে। সাধারণভাবে উষ্ণ গরম জল হলে ভাল। বায়োলজিক্যাল ক্লক মেইনটেন করতে হবে। ঘরের খাবার খাব। রোদে হাঁটতে হবে। অল্প যোগা, প্রাণায়াম ও মেডিটেশন। এসব মনকে শান্ত করবে। এগুলি মানলে ৬-৮ মাসের মধ্যে সুস্থ, সুন্দর মন ও শরীরের মানুষে রূপান্তরিত হওয়া খুবই সহজ।"
আরও পড়ুন- Water For Blood Pressure : দীর্ঘ দিন উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা? স্রেফ জলেই লুকিয়ে সমস্যার সমাধান!