এমনিতে তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক সাপে-নেউলে। তবে, রাজ্যপাল ইস্যুতে তৃণমূলের দাবির সঙ্গে সহমত কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী। এমনকী আগ বাড়িয়ে পরামর্শও দিয়েছেন জোড়াফুলে সুপ্রিম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। যা রাজ্য রাজনীতিতে নয়া সমীকরণের ইঙ্গিত বলে মনে করা হচ্ছে।
রাজ্যপাল-রাজভবন দ্বৈরথ তুঙ্গে। রাজ্যপালের দাবি, সরকারের অন্ধ পৃষ্ঠপোষক নয়, সংবিধান রক্ষায় কাজ করবেন তিনি। পাল্টা, রাজ্য়ের শাসক শিবিরের দাবি, রীতিনীতির বাইরে গিয়ে অতিসক্রিয়তা দেখাচ্ছেন জগদীপ ধনকড়। বিজেপির মুখপাত্র করে এরাজ্যে তাঁকে নিযুক্ত করা হয়েছে। কখনও নাম করে, আবার কখনও ইঙ্গিতে একে অপকে দুষছেন মমতা ও ধনকড়। যাতে বাংলার রাজনৈতিক সংস্কৃতি সম্পর্কে বাজে বার্তা পৌঁছচ্ছে বলে মনে করেন বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ। এই পরিস্থিতিকে 'সার্কাসের' সঙ্গে তুলনা করেন অধীরবাবু। তাঁর কথায়, 'আমরা এখন রাজ্যে প্রতিদিন মুখ্যমন্ত্রী বনাম রাজ্যপালের সার্কাস দেখছি। এটা একেবারেই কাম্য নয়। তিনি (জগদীপ ধনকড়)যে ধরনের আচরণ করছেন তা অতীতের দেখা যায়নি। আসলে রাজ্যপাল পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির শক্তি বৃদ্ধি করতে এসেছেন।'
আরও পড়ুন: ‘আমাদের এখানে একজন ব্যাঁকা ও ন্যাকা লোক আছে!’ কাকে বললেন মমতা?
রাজ্যপাল ধনকড়ের বিরুদ্ধে সংসদে সরব হয়েছেন তৃণমূল সাংসদরা। এবার সেই ক্ষোভ রাষ্ট্রপতির কাছে তুলে ধরার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে পরামর্শ দিয়েছেন লোকসভার কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী। তিনি বলেন, 'এই রাজ্যপালের বিরুদ্ধে তৃণমূলের অপেক্ষাকৃত ছোট নেতারা কেন কথা বলছেন। এটা স্পষ্ট যে বর্তমান রাজ্যপাল বিজেপির হয়ে কাজ করছেন। তাহলে কেন তাঁকে প্রত্যাহারের জন্য খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতির কাছে দরবার করছেন না?' তাঁর আর্জি, 'এই রাজ্যপালের প্রত্যাহার হওয়া দরকার। তৃণমূলের সব বিধায়ক মিলে একসঙ্গে দিল্লিতে গিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে ডেপুটেশন দিক রাজ্যপালের বিরুদ্ধে।'
রাজনীতিক পরিমণ্ডলে ঘাসফুল শিবিরের প্রবল বিরোধী বলেই পরিচিত হাত শিবিরের নেতা অধীর চৌধুরী। কিন্তু, তাঁর মন্তব্যেই পরিষ্কার, রাজ্যপাল ইস্যুতে মমতা সরকারের প্রতি নরম বহরমপুরের সাংসদ। রাজনৈতিক মহল আবার বিষয়টির মধ্যে রাজনীতিতে নয়া সমীকরণের ইঙ্গিত পাচ্ছেন। দেশজুড়ে কংগ্রেস ও তৃণমূলের মূল প্রতিপক্ষ এখন বিজেপি। ফলে দেশের রাজনীতির প্রেক্ষিতে মমতার দলকে পাশে পেতে চাইছেন সোনিয়া, রাহুলরা। আগামী বছর রাজ্যের বহু পুরসভায় ভোট রয়েছে। সেখানে মূল লড়াই মূলত বিজেপি-তৃণমূলের। এই অবস্থায় বাম-কংগ্রেস জোট বাঁধলেও ইভিএমে বেগ দিতে পারবে কিনা তা স্পষ্ট নয়। তার পর ২০২১ সালের বিধানসভা ভোট। তাই বিজেপি বধে আপাতত ফাটল না বাড়িয়ে অধীর চৌধুরী সহাবস্থানেরই বার্তা দিচ্ছেন বলে মনে করা হচ্ছে।