প্রবল বাম-জমানায় সিপিএম প্রার্থীকে হারিয়ে ২০০১ সালে বিধায়ক হয়েছিলেন। তখন তৃণমূল কংগ্রেসে টলিউড থেকে প্রার্থী হওয়ার মত কলিজা খুব একটা কারও ছিল না। পরবর্তীতে সেই তাপস পালই রাজনীতিতে বঞ্চিত হয়ে পড়েন। বরং দলের ভাল সময়ে একঝাঁক তারকা সাংসদ হয়েছেন। প্রচারের সার্চ লাইট তাঁদের মুখে। রাজনৈতিক মহলের মতে, রাজনীতির মারপ্যাঁচ আয়ত্ত করতে পারেননি 'দাদার কীর্তি'র নায়ক। রাজনীতি শুধু নয়, অভিনয় জগৎ থেকেও প্রায় হারিয়েই গিয়েছিলেন তিনি।
দেখুন: তাপস পালের উত্থান-পতন! কেমন ছিল রাজনৈতিক কেরিয়ার?
রাজনৈতিক লড়াইতে তাপস পাল বিপুল ভোটে পরাজিত করেছিলেন অভিনেতা 'প্রতিপক্ষ ভিলেন' বিল্পব চট্টোপাধ্যায়কে। ২০০৬ সালে, কলকাতার আলিপুর বিধানসভা কেন্দ্রে। টানা দু’বার ওই কেন্দ্র থেকে বিধায়ক, ২০০৯ থেকে কৃষ্ণনগর থেকে ২০১৯ পর্যন্ত সাংসদ। তবে এরই মধ্যে তিনি জড়িয়ে গেলেন রোজভ্যালি চিটফান্ড মামলায়। একইসঙ্গে চৌমুহা গ্রামে আলটপকা মন্তব্য করে নিজেকে বিতর্কিত করে তুললেন টলিউডের এই সুপারস্টার।
আরও পড়ুন: বিস্ফোরক অভিযোগ: তাপস পাল যাঁদের সঙ্গে ছিলেন, তাঁদের জন্যই এই পরিণতি
রোজভ্যালি তদন্তে ৩১, ডিসেম্বর ২০১৬-তে তৃণমূল সাংসদ তাপস পালকে গ্রেফতার করে সিবিআই। কলকাতা থেকে সোজা নিয়ে যাওয়া হয় ভুবনেশ্বরে। সিবিআই হেফাজত ও জেল হেফাজতে থাকার সময় তৃণমূল নেতৃত্ব বেমালুম ভুলে যায় এই সাংসদকে। জামিন পাওয়ার পর আর সেভাবে রাজনৈতিক মঞ্চে দেখা যায়নি বাংলা সিনেমার এই নায়ককে। ২০১৯ পর্যন্ত কৃষ্ণনগরের সাংসদ থাকলেও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অস্পৃশ্য থেকে যান তাপস পাল। প্রত্যাশামতো ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে তিনি আর দলের টিকিট পাননি। অভিজ্ঞ মহলের বক্তব্য, সারদা, রোজভ্যালিকাণ্ডে একের পর এক তৃণমূল সাংসদ-মন্ত্রীর নাম জড়িয়ে পড়ছিল। অনেকের গায়ে টোকা পর্যন্ত লাগেনি।
আরও পড়ুন: ‘আবার আমায় রাজনীতিতে ফেরাও’, মমতার মন্ত্রীকে একথাই বলেছিলেন তাপস পাল
শুধু রোজভ্যালি নয়, ২০১৪-এর মার্চে চৌমুহা গ্রামে তাঁর সেই বিতর্কিত মন্তব্য বাংলার রাজনীতি ও সমাজ জীবনে সমালোচনার ঝড় তোলে। একদিকে রাজনীতিতে ইতি, অন্যদিকে অভিনয়ে ফেরার ইচ্ছা থাকলেও তা আর হয়ে ওঠেনি। সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার ও বিতর্কিত মন্তব্যে রাজনৈতিক জীবনের ইতি হয়ে যায় তাপস পালের। রাজনৈতিক কারবারিরা মনে করেন, ২০০৬ সাল থেকে সংসদীয় রাজনীতিতে থাকলেও রাজনীতির কূট-কৌশলে তিনি সিদ্ধহস্ত ছিলেন না। তিনি কোনও বিষয়টাই 'ম্যানেজ' করতে পারেননি। সারদা-নারদায় জড়িয়েও দিব্যি রাজনীতিতে টিকে রয়েছেন অনেকেই। এমনকী অভিনয় জগতের অনেকের নাম চিটফান্ডকাণ্ডে জড়ালেও তাঁরাও দাপটে রাজনীতি করছেন। কেউ অভিনয়ও করছেন।
আরও পড়ুন: ‘কুকথা বলায় লজ্জিত বোধ করতেন তাপস, বলেছিলাম রাজনীতি ছেড়ে দিন’
তাপস পালের মৃত্যুর পর ইতিমধ্যেই বিজেপি ও তৃণমূল নেতৃত্বের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়ে গিয়েছে। অভিজ্ঞ মহলের মতে, যখন তিনি বিপদে পড়েছিলেন দলের কাউকেই তিনি পাশে পাননি।