এ কী সত্যি না স্বপ্ন! ভারতীয় ক্রিকেট যেন এখনও আবেশে আচ্ছন্ন! শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশদের মুখের উপর জবাব জিতে পারল ভারত? সত্যি অবিশ্বাস্য। চতুর্থ দিনের শেষে তো বটেই, পঞ্চম দিনের শুরুতেও রীতিমতো ব্যাকফুটে ছিল ভারত। তবে সময় গড়াতেই বদলে গেল সবটা। প্রথমে শার্দূল, তারপর বুমরাহ চমক। শেষমেশ ঐতিহাসিক জয়। ওভালে নতুন এক অধ্যায় লিখলেন কোহলিরা।
চতুর্থ দিনের শেষেও বোঝা যায়নি ভারতের সামনে এভাবে অসহায়ভাবে আত্মসমর্পণ করে বসবে। পঞ্চম দিনে ইংল্যান্ড ৭৭-০ থেকে খেলা শুরু করে সেঞ্চুরি পার্টনারশিপ করে ফেলেছিল। তারপরে শার্দূলের ব্রেক থ্রু এবং মালানের রান আউট। প্ৰথম সেশনে জোড়া উইকেট হারালেও বোঝা যায়নি ম্যাচ সময় গড়ানোর সঙ্গে এভাবে একপেশে হয়ে যাবে। দ্বিতীয় সেশনে জাদেজা এবং বুমরার স্পেলের ধাক্কা আর সইতে পারেনি ইংল্যান্ড। পরপর উইকেট হারিয়ে ইংল্যান্ড ২১০ এ গুটিয়ে যায়।
আরও পড়ুন: কোহলির কুৎসিত অঙ্গভঙ্গি ইংরেজদের উদ্দেশে! জয়ের মঞ্চেই বেনজির বিতর্কে মহাতারকা
ভারতের এই ঐতিহাসিক জয়ের দুই কাণ্ডারি অবশ্যই জসপ্রীত বুমরা এবং স্পিন জাদুকর রবীন্দ্র জাদেজা। দুজনের দুরন্ত বোলিংযের ওপর দাড়িয়েই ভারত এই জয় ছিনিয়ে আনে। ৫০ বছর পর কোহলি অ্যান্ড কোং ওভালে এই জয়ের মধ্য দিয়ে সূচনা করে এই নতুন ইতিহাস। সেই সঙ্গে ভারতীয় ক্রিকেটকে বিশ্ব দরবারে এক নতুন আঙ্গিকে চিত্রিত করেন।
ওভাল ইংল্যান্ডের প্রাচীনতম আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম। টিম ইন্ডিয়া প্রথম ১৯৩৬ সালে ওভালে তাদের প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলে। ভারত এর আগে ১৯৭১ সালে অজিত ওয়াদেকারের নেতৃত্বে প্রথম ওভালে জয়ের মধ্য দিয়ে ক্রিকেট বিশ্বে নিজেদের জাত চিনিয়েছিল। তার পর কেটে গিয়েছে ৫০ বছর। সোমবার কোহলি অ্যান্ড কোং দুরন্ত জয়ের মধ্য দিয়ে সেই স্মৃতিকেই যেন বারেবারে উস্কে দিয়েছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৫৭ রানের ব্যবধানে বিশাল জয় কাজটা মোটেও সহজ ছিলনা। এটা টিম ইন্ডিয়ার কাছে এখনও যেন এক স্বপ্নের মত। ভারতের দলগত পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করলে উঠে আসছে তিন পয়েন্ট যা মাত করে দেয় ইংরেজদের।
আরও পড়ুন: ভারতের মহা-গৌরবের দিনে মাঠেই কলুষিত তেরঙা! ক্ষোভে ফুঁসে উঠলেন গাভাসকারও
রোহিত শর্মার ব্যাটিং:
সব ফরম্যাটেই রোহিত শর্মা আক্রমণাত্মক ব্যাটিং স্টাইলের জন্য বিশ্বক্রিকেটে হিটম্যান পরিচিত। তারকা এই ওপেনার দারুণ ব্যাটিং ফর্ম চলতি ইংল্যান্ড সিরিজে ভারতের প্লাস পয়েন্ট। ওভালে রোহিত নিজের টেস্ট কেরিয়ারের প্ৰথম বিদেশে শতরান হাঁকিয়ে যান। ১২৭ রানের দুরন্ত ইনিংস খেলে ভারতকে পাহাড় প্রমাণ রানে পৌঁছে দেন তারকা। ইংল্যান্ডে সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি করার রেকর্ড এখন রোহিতের। ওভালেই টেস্ট কেরিয়ারে ৩০০০ পূর্ণ করে ফেলেন তিনি।
শার্দুল ঠাকুরের ব্যাটে-বলে ম্যাজিক:
প্রথম ইনিংসে ভারতের হয়ে পেসার শার্দুল ঠাকুর যখন ব্যাট হাতে মাঠে নামেন তখন কোহলি অ্যান্ড কোং মিডল অর্ডারের ব্যাটিং বিপর্যয়ের সম্মুখীন। সেই সময় শক্তিশালী ইংল্যান্ড বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে পাল্টা লড়াই হাজির করেন শার্দুল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগেই শার্দূলের ব্যাটিং ফর্মকে স্বস্তিতে রাখবে টিম ইন্ডিয়াকে। ৩১ বলে ৫০ রানের অসাধারন ইনিংস খেলে ইংল্যান্ড বোলিং লাইনআপকে কার্যত কোণঠাসা করেন তিনি। ইয়ান বোথামের রেকর্ড ভেঙে তিনি ইংল্যান্ডের মাটিতেই দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরি করে যান।
শুধু প্রথম ইনিংসেই ৫৬-ই নয়। শার্দূলের ব্যাটিং ম্যাজিক দেখাল দ্বিতীয় ইনিংসেও। লোয়ার অর্ডারে ৬০ করে শার্দুল ভারতের লিড কার্যত ইংল্যান্ডের ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যান। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে আট নম্বর পজিশনে দুই ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি হাঁকানোর বিরল কীর্তি গড়েন তিনি।
দুই ইনিংসেই অর্ধশতরান করার পাশপাশি ওভালে বল হাতেও দুরন্ত শার্দুল। তিনটি উইকেট শার্দুলের পকেটে।
আরও পড়ুন: কোহলি নিন্দুকদের কড়া বার্তা এবিডির! ওভাল কীর্তির পরেই সপাটে জবাব মহাতারকার
দুই ইনিংসে জো রুটসহ তাঁর নেওয়া তিনটি উইকেটই ক্রিজে সেট হয়ে যাওয়া ব্যাটসম্যানের। ফলে সমর্থক থেকে বিশেষজ্ঞ, সকলেই শার্দুলের পারফরম্যান্সে অভিভূত। সেই তালিকায় সামিল তাঁর সতীর্থরাও।
বুমরা-র বারুদ স্পেল:
দ্বিতীয় ইনিংসে পঞ্চম দিনে বুমরার স্পেল না থাকলে ঐতিহাসিক জয় ভারত পেত কিনা, তা নিয়ে জোরালো সংশয় রয়েছে। বুমরার বোলিং আসলে এক্স ফ্যাক্টর। ইংল্যান্ড যখন ম্যাচ নিশ্চিত ড্রয়ের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে, সেই সময়েই বুমরা ভারতকে জয়ের রাস্তা দেখান অনবদ্য এক স্পেলে। রিভার্স সুইং হচ্ছে দেখে লাঞ্চের পরে কোহলির হাত থেকে বল চেয়ে নিয়েছিলেন। বাকিটা ইতিহাস। প্রথমে অলি পোপ। তারপর জনি বেয়ারস্টো। বুমরার মারণাস্ত্র সামলানোর ক্ষমতা ছিল না ইংরেজ ব্যাটসম্যানদের।
আর দ্বিতীয় ইনিংসে জনি বেয়ারস্টোর উইকেট তুলে নিয়ে এক অনন্য নজির স্থাপন করলেন জসপ্রীত বুমরা। ওভালে রুটদের দ্বিতীয় ইনিংসে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের ডানহাতি পেসার জনি বেয়াস্টোকে বোল্ড করে ভারতীয় পেস বোলারদের মধ্যে দ্রুততম হিসেবে ১০০ উইকেট নেওয়ার নজির গড়ে ফেলেন তিনি। পিছনে ফেলেন কিংবদন্তি কপিলদেবকে।
আরও পড়ুন: ভারতের ঐতিহাসিক জয়ে সৌরভের টুইট ‘ওড়ালেন’ ভন! বিস্ফোরক মন্তব্যে বিতর্ক বাড়ালেন শতগুন
আর বুমরার দেখানো রাস্তা ধরেই শার্দূল, উমেশ যাদব, জাদেজারা ইংল্যান্ডের ব্যাটিং প্রতিরোধ কার্যত গুঁড়িয়ে দেন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন