Lok Sabha Polls 2024: ভোট দিতে গিয়ে ভোটার তালিকা দেখে জানতে পারলেন তিনি নাকি মৃত। আর প্রিজাইডিং অফিসারের এমন কথা শুনে কেঁদে ভাসালেন ৩২ বছরের এক গৃহবধূ। এই ঘটনায় এবার রাখি দাস নামে ওই মহিলার নতুন করে NRC আতঙ্ক জেঁকে বসেছে। ঠিক একইভাবে ওই বুথের আরও আরও ১০ জন ভোটারকেও তালিকায় মৃত হিসেবেই দেখানো হয়েছে। এই ঘটনা সামনে আসতেই রীতিমতো শোরগোল শুরু পড়ে যায় মালদার ইংরেজবাজার পুরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের গয়েশপুরে।
দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে যাওয়ার সময় প্রায় ১০ জন ভোটার জানতে পারেন তাঁদের তালিকায় মৃত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই ভুল কার, তা নিয়ে শুরু হয় সংশ্লিষ্ট ভোটকেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ। যদিও কর্তব্যরত প্রিসাইডিং অফিসার জানিয়ে দেন ভোটার তালিকায় তাঁদের নাম মৃত থাকায়, এবারের মতো ভোট দিতে পারবেন না তাঁরা। নতুন করে ভোটার কার্ডের নাম তুলতে হবে। ইংরেজবাজারের এই ঘটনাকে ঘিরেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক।
BJP-র অভিযোগ, শাসকদল তৃণমূলের কারচুপিতে এই নামগুলি বাদ গিয়েছে। পাল্টা জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব ভোটার তালিকায় নাম ভুল থাকার ক্ষেত্রে বিজেপিকে দোষারোপের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার মালদার দুটি লোকসভা কেন্দ্রে নির্বাচন হয়। এদিন দক্ষিণ মালদা লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ইংরেজবাজার পুরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের গয়েশপুরের ৮৭ নম্বর বুথে ভোট দিতে গিয়ে গৃহবধূ রাখি দাস (৩২) জানতে পারেন, ভোটার তালিকায় তাঁর নাম নেই, তিনি 'মৃত'। এই ঘটনা জানতে পেরে রীতিমতো ভোট কেন্দ্রের সামনে অসন্তোষ প্রকাশ করেন ওই গৃহবধূ।
ঠিক একইভাবে পরপর আরও বেশ কয়েকজন ভোটার যাদের মধ্যে রয়েছেন গয়েশপুর এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধা অনিমা পোদ্দার (৬২) এবং চিত্তরঞ্জন কুণ্ডু (৮০) তাঁরাও নিজেদের ভোটার তালিকায় মৃত জানতে পেরে রীতিমত কান্নায় ভেঙে পড়েন। পাশাপাশি আরও ১০ জনকে ভোটার তালিকায় মৃত বলে জানানো হয়। এরপরেই শুরু হয় ওই ভোটকেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ।
গৃহবধূ রাখিদেবী বলেন, "আমার স্বামী সরকারি কর্মচারি। ভোটের ডিউটিতে বাইরে রয়েছেন। আমি এদিন ভোট দিতে এসে অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। বুথে ঢুকে ভোট দিতে যাওয়ার সময় প্রিসাইডিং অফিসার আমাকে বলেন ভোটার তালিকায় আমাকে মৃত দেখানো হয়েছে। তাই ভোট দিতে পারব না। অথচ গত বিধানসভা নির্বাচনে ভোট দিয়েছি। হঠাৎ করে এমনটা কেন হল কিছুই বুঝতে পারছি না। ভোট কেন্দ্র থেকে পরিষ্কার বলে দেওয়া হল, নতুন করে ভোটার কার্ড করতে হবে।" আর এই ঘটনার পরেই NRC-আতঙ্ক তৈরি হয়েছে গৃহবধূ রাখিদেবীর মনে।
গয়েশপুর এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধ চিত্তরঞ্জন কুণ্ডুর কথায়, "৮০ বছর বয়সেও আমি ভোট দিতে আসছি। কোনও বার এমন ঘটনা ঘটেনি। এবারই দেখছি ভোট দিতে এসে আমাকে মৃত দেখানো হয়েছে। এটা প্রশাসনের ভুল। বয়সজনিত কারণে ঠিকমতো হাঁটাচলা করতে পারি না। এই পরিস্থিতিতে এখন কীভাবে নতুন করে ভোটার কার্ড করব বুঝতে পারছি না, এব্যাপারে নজর দেওয়া উচিত।"
এপ্রসঙ্গে জেলা BJP-র সাধারণ সম্পাদক অম্লান ভাদুড়ি বলেন, "ওই এলাকায় বিজেপির ভালো ভোট রয়েছে। তাই ইচ্ছাকৃতভাবে অনেক ভোটারের ভুলভাল তালিকা করা হয়েছে। দশ জনেরও বেশি ভোটারকে মৃত দেখানো হয়েছে। এই ঘটনার পিছনে শাসকদল তৃণমূল রয়েছে।"
জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি বাবলা সরকার বলেন, "ভোটার তালিকায় সম্পূর্ণ তদারকি চালিয়েছে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন। বিজেপি যে অভিযোগ করছে তার কোনও ভিত্তি নেই। এই ঘটনার পিছনে বিজেপিরই মদত আছে।"