Awas Plus Scheme 2024: পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও আবাস প্লাসের তালিকায় জ্বলজ্বল করছে তৃণমূল বিধায়কের মা, শাশুড়ি ও তৃণমূলের এক পঞ্চায়েত প্রধানের নাম। তা নিয়েই এখন তোলপাড় পড়ে গিয়েছে পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষে। নড়েচড়ে বসেছে ব্লক প্রশাসনও। বিষয়টি জানার পর জেলাশাসক আয়েশা রানী স্পষ্ট করে দিয়েছেন, "কোন ব্যক্তি কী পদে আছেন, সেটা বিবেচ্য বিষয় হবে না। যেখানে অভিযোগ আছে ,সেখানেই সুপার চেকিং হচ্ছে। কারও পাকা বাড়ি থাকলে তাঁদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে।"
খণ্ডঘোষের তৃণমূল বিধায়ক নবীনচন্দ্র বাগের শ্বশুরবাড়ি খণ্ডঘোষের তাঁতিপাড়ায়। সেখানেই বিধায়কের শাশুড়ি এবং শ্যালকরা বসবাস করেন। তাঁদের পাকা দোতালা বাড়ি থাকলেও বিধায়কের শাশুড়ি সুমিত্রা রায়ের নাম আবাসের তালিকায় জায়গা পেয়েছে। শুধু তাঁর শাশুড়িই নয়, বিধায়কের নিজের মা নন্দরাণী বাগের নামও জায়গা করে নিয়েছে আবাস প্লাসের তালিকায়। যা সম্প্রতি জানাজানি হয়ে যায়।তারপর থেকেই ক্ষোভে ফুঁসতে থাকেন এলাকার লোকজন।
ক্ষোভ-বিক্ষোভের বিষয়টি জানতে পেরেই 'সুপার চেকিংয়ে' নেমে পড়েছে ব্লক প্রশাসন। এ ব্যাপারে বিধায়কের শাশুড়ি তাঁর সাফাইয়ে বলেন, "যখন আমাদের বাড়ি ছিল না তখন আবাসের বাড়ির জন্য আবেদন করেছিলাম। এখন আমার ছেলেরা পাকা বাড়ি করেছে। আমার দুই ছেলে ওই পাকা বাড়িতে থাকলেও আমি মাটির বাড়িতেই থাকি।" যদিও বিধায়কের এক শ্যালক বলেন, "আমরা নাম বাদ দেওয়ার আবেদন করব।"
তবে অনেক চেষ্টা করেও বিষয়টি নিয়ে বিধায়কের মা নন্দরাণী বাগের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। এদিকে এমন কাণ্ডে বেজায় প্যাঁচেপড়ে গিয়েছেন বিধায়ক নবীন চন্দ্র বাগ। তিনি তাঁর মায়ের নাম আবাসের
তালিকায় থাকা নিয়ে কিছু না বললেও শাশুড়ির নাম আবাসের তালিকায় থাকার কোনও দায় নিতে চাননি। বরং ক্ষুব্ধভাবেই তিনি বলেন, "আমার সঙ্গে আমার শ্বশুরবাড়ির কোনও সম্পর্ক নেই। আইনে যা হবে তাই হবে।"
শুধু বিধায়কের মা কিংবা শাশুড়ি’ই নয়, তৃণমূল পরিচালিত খণ্ডঘোষ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মালতি সাঁতরার নামও আবাস প্লাসের তালিকায় রয়েছে। মালতীদেবীর স্বামী হারু সাঁতরা খণ্ডঘোষ পঞ্চায়েতের পূর্বতন বোর্ডের প্রধান ছিলেন। সেই সময় গীতাঞ্জলি প্রকল্পে আর্থিক অনুদান পেয়ে তিনি পাকা বাড়ি করেন। এখন নতুন যে আবাসের তালিকা প্রকাশ হয়েছে তাতে প্রধান মালতী দেবীর নাম দেখা যায়। তাতেই অস্বস্তিতে পড়েছে শাসক শিবির।
এ নিয়ে প্রধান মালতী সাঁতরা দাবি জানান, ২০২২ সালে যে সার্ভে হয়েছিল তাতে তাঁদের নাম ছিল না।তা সত্ত্বেও নতুন তালিকায় কী করে তাঁদের নাম উঠল সেটা তাঁদেরও প্রশ্ন। সেই প্রশ্নেই এখন মহা ফাঁপড়ে পড়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব। প্রধান মালতী সাঁতরা বলেন, "আমার স্বামী যখন প্রধান ছিলেন না তখন পার্টি থেকে আমাদের গীতাঞ্জলি প্রকল্পের ঘর দিয়েছিল। এখন আমার বাড়ি আছে, আমি আবাসের বাড়ি নেব না। আমার নামের বাড়ি অন্য কেউ পাক সেটাই আমি চাই।"
আরও পড়ুন- Crime News: মেয়ের বীভৎস পরিণতি দেখে আঁতকে উঠলেন বাবা! নৃশংস-কাণ্ডে পুলিশের জালে অভিযুক্ত
মিতালী দেবীর স্বামী হারু সাঁতরা বর্তমানে খণ্ডঘোষ অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি। তিনিও দাবি করেন, "আবাসের বাড়ির জন্য আমি আবেদনই করিনি। তবুও কী করে নাম উঠল আমি জানি না। বিষয়টি জানতে পেরেই আমি বিডিও-র কাছে নাম বাদ দেওয়ার জন্য আবেদন করি।"
বিষয়টি নিয়ে জেলা বিজেপির সহ-সভাপতিমৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, “আবাসে অস্বচ্ছতা এবারেও যে কাটেনি এসব ঘটনাই প্রমাণ করে দিচ্ছে। গরিবরা নয়, তৃণমূলের রাজত্বে তৃণমূলীরাই ভোগ করবে আবাসের ঘর। তাই আবাসের তালিকায় তৃণমূল বিধায়কের মা ,শাশুড়ি এবং তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধানের নাম জায়গা করে নিয়েছে।"
যদিও তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, "ভুল ভ্রান্তি হয়তো কিছু রয়েছে। তার জন্যই তো এখনও সার্ভে হচ্ছে।"