/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2021/09/Untitled-design-20-1.jpg)
প্রাক্তন শিক্ষিকা ইরা বসু।
বছরখানেক ধরেই ডানলপের ফুটপাথে এক শীর্ণকায় বৃদ্ধার উপস্থিতি চোখে পড়েছে স্থানীয়দের। কতই তো এমন থাকে! এই ভেবে অনেকেই সর্বহারা সেই বৃদ্ধাকে পাশ কাটিয়ে চলে গিয়েছে। সাদা উসকো চুল, পরনে জীর্ণ রাতের পোশাক। সেই অবস্থায় ডানলপ পেট্রোল পাম্প এলাকায় ঘুরতেন তিনি। অন্যদের মতো চেয়ে নয়, বরং টাকা দিয়েই চা এবং খাবার খেতেন তিনি। কেউ এগিয়ে এসে অর্থ কিংবা খাবার দিলে কিছুটা রাগান্বিত ভাবেই এড়িয়ে যেতেন। পথচলতি মানুষদের বলতেন কিছু চাই না। আমার ব্যাঙ্কে টাকা আছে।
পাগলের প্রলাপ ভেবে অনেকে সেই ব্যবহার হেসে উড়িয়ে দিতেন। এখানেই শেষ নয়, রীতিমতো নিয়ম করে পড়তেন বাংলা ও ইংরাজি দৈনিক সংবাদপত্র। মানুষজন কথা বলতে গেলে পিছনে সরে আসতেন, বলতেন দূর থেকে বলুন। এভাবেই চলছিল। কিন্তু গোটা ডানলপ জনপথের হুঁশ ফিরল শিক্ষক দিবসের দিন। যখন কয়েকজন তরুণী এসে সেই বৃদ্ধাকে সংবর্ধনা দিয়ে যায়। স্থানীয় এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আর্তজনও শিক্ষক দিবসে তাঁকে সংবর্ধনা দেয়। এই একটিবার কেঁদে ভাসান তিনি। তখনই কী ব্যাপার! খবর নিয়ে জানা যায় শীর্ণ এই বৃদ্ধা রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শ্যালিকা। রহড়া প্রিয়নাথ বালিকা বিদ্যালয়ের জীব বিজ্ঞানের প্রাক্তন শিক্ষিকা ইরা বসু। ভাইরোলজিতে পিএইচডি, ইংরাজি এবং বাংলা, দুই ভাষাতেই সমান দখল ইরা দেবীর। এখানেই শেষ নয় রাজ্য ক্রীড়ায় বিশেষ করে টেবিল টেনিসে বিশেষ সুনাম ছিল এই বৃদ্ধার। হইচই পড়ে যায় এলাকায়। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম মারফৎ খবর যায় খড়দহ পুরসভায়।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2021/09/ira-basu-1.jpg)
করোনাকালে তাঁকে উদ্ধার করতে গাড়ি পাঠায় খড়দহ পুরসভা। গাড়িতে তুলে তাঁকে পাঠানো হয় বরানগর থানায়। সেখান থেকেই স্থানীয় হাসপাতালে শারীরিক পরীক্ষার পর আপাতত তাঁর ঘর-বাড়ি তিলজলার লুম্বিনী পার্ক মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র।
জানা গিয়েছে, ১৯৭৬ সালে রহড়ার সেই স্কুলে শিক্ষক হিসেবে ঢোকেন ইরা দেবী। ২০০৯ পর্যন্ত সেখানেই কাজ করেছেন তিনি। অবসরের সময়েও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ভগ্নীপতি। কিন্তু কোনওদিন ভিআইপি ট্রিটমেন্ট কিংবা এগিয়ে এসে পরিচয় জানাতে দেখা যায়নি এই বৃদ্ধাকে। স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্বের দাবি, ‘বরানগর, খড়দহ কিংবা কামারহাটি এলাকায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জনসভায় তাঁকে বেশ কয়েকবাড় দেখা গিয়েছে। ব্যস এটুকুই।‘
শিক্ষিকা থাকাকালীন দাদুর বাড়িতেই থাকতেন ইরা দেবী। অবসর নিয়ে প্রথমে বরানগর এবং পরে লিচুবাগানে থাকতে শুরু করেন ইরা দেবী। সেখান থেকেই হঠাৎ একদিন উধাও হয়ে যান। তারপরই গত দু’বছর ডানলপের ফুটপাথ এবং পেট্রোল পাম্প এলাকাই তাঁর ঘরবাড়ি। শিক্ষিকা এবং উচ্চশিক্ষিত হয়েও তাঁর এমন দুর্দশা কেন? সেই প্রশ্নের জবাব পেতে তাঁর স্কুলে খবর নিলে প্রিয়নাথ স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা কৃষ্ণকলি চন্দ বলেন, ‘শুনেছি উনি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর আত্মীয়। একটা সময় আমাদের স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষিকার সঙ্গেই থাকতেন। অবসরের পর পিএফ-এর টাকা পেলেও পেনশন আটকে রয়েছে নথির জন্য। কিছু কাগজ তাঁকে জমা দিতে বলা হলেও এখনও জোগাড় করে উঠতে পারেননি।‘
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2021/09/ira-2.jpg)
সে নয় সরকারি কাজে নথি বড় বিষম বস্তু। কিন্তু উনি তো প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আত্মীয়। সেই সুত্রেও তো কিছু সুযোগ-সুবিধা পাওউয়া উচিত। সে ব্যাপারে প্রশাসনিক স্তরে তাঁকে বোন এবং ভগ্নিপতি প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে খানিকটা বিরক্ত হন ইরা দেবী। ‘ওরা আমার কেউ নয়’, এমন মন্তব্য শোনা যায় তাঁদের মুখে।
কাগজ পড়েই জেনেছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং তাঁর স্ত্রী অসুস্থ। এই দাবি করে বলেন, ‘এনাফ! ওই দুই অসুস্থ মানুষকে নিয়ে এখন টানাটানি কেন।‘ এরপরেই বোন ও ভগ্নিপতির প্রসঙ্গ এড়িয়ে তিনি বলেছেন, ‘অনলাইন শিক্ষায় পড়ুয়াদের কোনও বিকাশ সম্ভব নয়।‘
ইন্ডিয়ানএক্সপ্রেসবাংলাএখনটেলিগ্রামে, পড়তেথাকুন