খড়গপুর লোকাল থানার তিন নম্বর লজমাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের গোবিন্দনগর মৌজার মহিষা গ্রামে রয়েছে মা মনসা দেবীর মন্দির। অনেকে এই মন্দিরকে মাদপুরের মনসা দেবীর মন্দির বলেও ডাকেন। খড়গপুর থেকে হাওড়াগামী রেললাইনের পাশে মাদপুরের কাছে ফাঁকা মাঠে মনসা দেবীর অবস্থান। মাদপুরের এই মনসা দেবীর মন্দিরকে নিয়ে বহু অলৌকিক কাহিনি প্রচলিত রয়েছে।
কথিত আছে, এই মন্দিরে ভক্তদের মনস্কামনা দেবী মনসা পূরণ করেন। তা সে সন্তান লাভ হোক অথবা বেকারত্ব দূরীকরণ, কিংবা সাংসারিক কষ্টই হোক না-কেন, অথবা অসুস্থতা থেকে মুক্তি- সবকিছুই। অনেক সময় বাড়ির গোরু-ছাগল হারিয়ে গেলে ওই গোরু-ছাগলের ব্যবহার করা গলার দড়ির টুকরো নিয়ে দেবীর কাছে খুঁজে দেওয়ার মনস্কামনা জানালেও দেবী তা পূরণ করেন।
আর এসব কারণেই দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা দেবীর কাছে ছুটে আসেন মানত করতে। আবার, অনেকে আসেন মানত পূরণ করতে। এমনকী, ওই অঞ্চলের পাশ দিয়ে যাওয়া ট্রেনগুলোওই অনেক সময় গতি কমিয়ে দেয়। কারণ, দেখা যায় যে ট্রেনের চালক ট্রেন থেকেই দেবীর উদ্দেশ্যে প্রণাম করছেন। অতীতে এই অঞ্চলটি জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। যা মা মনসার জঙ্গল নামেই পরিচিত ছিল।
আরও পড়ুন- জীবন্ত কালী, যেখানে প্রতিমার পায়ে কাঁটা ফোটানোয় বের হয়েছে রক্ত
প্রায় ৪০০ বছর আগে এই মহিষা গ্রামটি ছিল জমিদার যোগেশ্বর রায়ের তালুক। কথিত আছে, একদিন ভোরে জমিদার স্বপ্নাদেশ পান যে ওই জঙ্গলে দেবী মনসা রয়েছেন। স্বপ্নাদেশে জমিদারকে দেবীর পূজার ব্যবস্থা করতে বলেন দেবী। সেই স্বপ্নাদেশ পেয়ে জমিদার জঙ্গল পরিষ্কার করে ওই অঞ্চলে দেবীর নিয়মিত পুজোর ব্যবস্থা করেন।
বর্তমানে মা মনসার স্থান বলে যেখানে ভক্তরা পুজো করেন, সেখানে আগে ছিল এক বিরাট উইয়ের ঢিপি। কথিত আছে, ওই ঢিপির নীচে প্রচুর সাপ থাকত। আজ আর সেখানে জঙ্গল নেই। নেই পুরোনো গাছগাছালিও। বর্তমানে, ওই উইয়ের ঢিপিকে কংক্রিটে মুড়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে তৈরি করা হয়েছে পদ্মফুল। এই পদ্মফুল দেবী মনসার প্রতীক।