/indian-express-bangla/media/media_files/2025/09/06/jail-2025-09-06-10-26-09.jpg)
Political prisoner: জেলে বসেই অনশন আন্দোলন একদা শীর্ষ মাওবাদী নেতার।
PhD scholarship:একদা শীর্ষ মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম এবার তাঁর PHD গবেষক হিসেবে স্কলারশিপের দাবিতে জেলেই অনশন আন্দোলন শুরু করেছেন। তাঁর অভিযোগ, তাঁর মেধাকে গুরুত্ব দিতে চাইছে না সরকার। এমনকী বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর স্কলারশিপ নিয়ে স্বজনপোষণেরও অভিযোগ উঠেছে। এই ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকেও চিঠি লিখেছেন অর্ণব। তাতেও কোনও কাজ হয়নি বলে দাবি তাঁর। এবার অর্ণব দামের পাশে দাঁড়িয়েছে মানবাধিকার সংগঠন APDR।
সংগঠনের তরফে সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত শূর একটি প্রেস বিবৃতিতে লিখেছেন, "রাজনৈতিক বন্দি অর্নব দাম গতকাল (০৫/০৯/২৫) সকাল থেকে বর্ধমান জেলে অনির্দিষ্ট কালের জন্য অনশন শুরু করেছে। তার দাবি, পিএইচডি গবেষক হিসাবে তার প্রাপ্য স্কলারশিপ তাকে দিতে হবে। রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণে কাউকে স্কলারশিপ থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ নিয়ে স্বজনপোষণ হচ্ছে, মেধা বা পরীক্ষার রেজাল্টকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না।"
ওই বিবৃতিতে আরও লেখা হয়েছে, "তার এই প্রতিবাদ অনশনের কথা বিশ্ববিদ্যালয়কেও জানিয়ে দিয়েছে। অনেকেই জানেন রাজনৈতিক বন্দি অর্নব দাম জেল বন্দি অবস্থায় ইতিহাসে ৭০-৭৫% নম্বর সহ বিএ, এমএ পাশ করেছেন। 'সেট' পাশ করেছেন। পুলিশ যেতে দেয়নি বলে 'নেট' পরীক্ষায় বসতে পারেননি। বর্তমানে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছেন। পিএইচডি-র এডমিশন টেস্টে ফার্স্ট হয়েছিলেন। সম্প্রতি প্রথম সেমিস্টার কোর্স ওয়ার্ক পরীক্ষায়ও অর্নব ফার্স্ট হয়েছেন। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসের গবেষকদের জন্য দুই ধরণের স্কলারশিপ আছে। একটি নন্-নেট বিবেকানন্দ ফেলোশিপ। আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব স্কলারশিপ।"
আবেদন জানিয়ে চললেও অর্ণবকে স্কলারশিপ কিছুতেই দেওয়া হচ্ছে না বলে দাবি রঞ্জিত শূরের। বিবৃতিতে তিনি লিখেছেন, "সম্প্রতি এই দুটি স্কলারশিপের জন্য আবেদনপত্র চাইলে অর্নব আবেদন করে। কিন্তু অর্নবকে কোন স্কলারশিপই দেওয়া হয়না। অথচ সব পরীক্ষায় ফার্স্ট হওয়া অর্নবেরই স্কলারশিপ সবার আগে পাওয়ার কথা। অর্নব জানিয়েছেন, নন-নেট স্কলারশিপ প্রাপকদের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। অর্নবের নাম নেই। মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে, মাওবাদী সাজাপ্রাপ্ত বন্দি বলে অর্নবকে স্কলারশিপ দেওয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব স্কলারশিপও নাকি কোন এক প্রভাবশালীর সুপারিশকৃত প্রার্থীকে দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ বিভাগের সেরা ছাত্র, সবচেয়ে ভাল রেজাল্ট করা ছাত্র, কোন স্কলারশিপ পাবে না। অথচ গবেষণা চালাতে স্কলারশিপের প্রয়োজন ওরই সবচেয়ে বেশি। দীর্ঘ জেল জীবনে কপর্দক শূণ্য অর্নবের বইখাতাকলম কেনার টাকাও নেই। অর্নব তার প্রতি চরম অবিচারের প্রতিবাদ জানিয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত মাওবাদী বন্দি জেনেই তাকে পিএইচডি তে ভর্তি নেওয়া হয়েছিল। ছাত্র তো ছাত্রই। কে মাওবাদী আর কে খাওবাদী এই প্রশ্ন কেন তোলা হচ্ছে!"
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীকে চিঠি লিখেও কোন লাভ হচ্ছে না বলে দাবি এপিডিআর-এর। সংগঠনের তরফে সংবাদমাধ্যমে দেওয়া ওই বিবৃতিতে আরও লেখা হয়েছে, "অর্নবের অভিযোগ স্কলারশিপ নিয়ে বড় ঘোটালা হচ্ছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং উচ্চ শিক্ষা দপ্তরে। মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী,উপাচার্যকে চিঠি লিখে অর্নব দামের প্রতি অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ জানিয়েছে এপিডিআর। অবিলম্বে অর্নবকে প্রাপ্য স্কলারশিপ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণে অর্নবকে বঞ্চিত না করার কথা বলেছে। অর্নব জানিয়েছে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সে লড়বে । জেলবন্দি হিসাবে যতদূর লড়া যায় লড়বে সে। দরকারে কোর্টেও যাবে। বন্ধুদের মাধ্যমে এই লড়াইয়ে সংবাদমাধ্যমের সহযোগিতা চেয়েছে রাজনৈতিক বন্দি অর্নব দাম। এপিডিআর অর্নবের এই ন্যায় সঙ্গত দাবি ও লড়াইকে সর্বোতভাবে সমর্থন জানাচ্ছে।"
আরও পড়ুন- Baruipur Incident: টিকিট পরীক্ষকের মুখে গরম ঘুগনি ছুঁড়লেন রেলযাত্রী, কারণ জানলে চমকে যাবেন!
এদিকে, বিষয়টি নিয়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শঙ্কর কুমার নাথ বলেন, “অর্ণব দাম অনশন করছেন কিনা, তা আমার জানা নেই। তবে এটা বলতে পারি স্কলারশিপ দেওয়ার এক্তিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই। এই বিষয়ে রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নেয়। আমরা নাম পাঠাতে পারি মাত্র। আমরা কাউকে আর্থিকভাবে সাহায্য করতে না পারলেও ফিস কমাতে পারি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আমরা আমাদের মতো করে অর্ণবকে ইতিমধ্যেই সাহায্য করছি। প্রথমে অর্ণবকে লাইব্রেরি থেকে বই দেওয়া হচ্ছিল না। এখন তিনি বই পাচ্ছেন।"
তিনি আরও বলেন, "অর্ণবের রেজিষ্ট্রেশন ফিস ১০ হাজার টাকা আমরা মকুব করে দিয়েছি। তার বইপত্র, খাতা পেন দিয়েও তাকে আমরা সাহায্য করছি। থিসিস পেপার জমা দেওয়ার সময় একটা ফিস জমা দিতে হয় সেটাও আমরা মকুব করে দেব। বিশ্ববিদ্যালয়ের আগামী কার্যনির্বাহী বৈঠকে আমরা একটি ল্যাপটপ অর্ণবকে দেওয়ার বিষয়টি অনুমোদন করিয়ে নেব।"
আরও পড়ুন- Tehatta Incident: নিখোঁজ শিশুর দেহ উদ্ধারে ক্ষোভের আগুন! সন্দেহেই স্বামী-স্ত্রীকে পিটিয়ে মারল জনতা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক তানভীর নাসরিন বলেন, “অর্ণব পড়াশোনায় খুব ভালো। ভালো রেজাল্টও করেছে। শুক্রবার বর্ধমান জেলা সংশোধনাগারের সুপারিন্টেণ্ডেন্ট আমাকে ইমেল করে অর্ণবের অনশনের বিষয়টি জানিয়েছেন।"