Advertisment

করোনাতঙ্ক কাটিয়ে দোল উৎসবে মেতে বঙ্গবাসী, বেলাগাম না হতে পরামর্শ চিকিৎসকদের

রেকর্ড ব্যবসায়ে খুশি বড়বাজারের পাইকারী ব্যবসায়ীরাও।

author-image
Sayan Sarkar
New Update
NULL

কলেজে বসন্ত উৎসব উদযাপন। ফটো- শশী ঘোষ

মাঝে দু বছরের বিরতি! করোনার দাপট কমার সঙ্গে সঙ্গে দোলের আগের দিন, বৃহস্পতিবার থেকেই বেপরোয়া রং খেলায় মাতলেন শহরের অধিকাংশ। দু বছরের না পাওয়াকে যেন চেটেপুটে উপভোগ করতে তৈরি শহরবাসী। রঙ খেলার নামে পাড়ায় পাড়ায় ডিজে বক্সের তাণ্ডব ছিল চোখে পড়ার মতই। মাস্ক স্যানিটাইজারের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে সকলেই ব্যস্ত আগাম রঙের উৎসবে নিজেকে রাঙিয়ে নিতে। শহরের একাধিক আবাসনে এদিন সকাল থেকে চলে বিরামহীন রঙ খেলা।

Advertisment

সেই সঙ্গে পাড়ার মোড়ে মোড়ে বসন্ত উৎসবে সামিল হাজারো মানুষ। স্কুল কলেজেও রঙ খেলার আয়োজনেও কোন ত্রুটি ছিল না। কেউ কেউ মাস্ক-স্যানিটাইজ়ার ভুলে জোর করে একে অপরের চোখে-মুখে রং মাখাতে ব্যস্ত। শোভাবাজার এবং দক্ষিণ কলকাতার হাজরা মোড়ের কলেজে আবার দোল উৎসবের মধ্যে ‘ডিজে’র আয়োজন করা হয়েছিল। পুরনো বিতর্কের জেরে এ বার আর আলাদা করে দোল উৎসবের আয়োজন করেননি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

publive-image
দোলযাত্রা উপলক্ষে আবীর খেলা। ছবি- শশী ঘোষ

এদিকে আবির বা রঙের চাহিদা এবছর আকাশছোঁয়া। রেকর্ড ব্যবসায়ে খুশি বড়বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা। হোলির আগে দু’বছর ধাক্কা খেয়েছে তাদের ব্যবসা। এবারের ব্যবসাতে কিছুটা ঘাটতি মেটানো গিয়েছে বলেই তাদের দাবি।

“গত দু বছরে প্রায় ৯০% স্টক থেকে গিয়েছিল। এবারের চিত্রটা একেবারেই আলাদা। এ বছর করোনা সংক্রমণ কম থাকার কারণে মানুষের মধ্যে দোল উৎসবের উন্মাদনা ছিল তুঙ্গে। গত দু বছর আমরা সেভাবে লাভের মুখ দেখতে পাইনি আর এই বছরের চিত্রটা একেবারেই আলাদা। এই বছর রঙ আবীরের চাহিদা এতটাই বেশি যে অনেক জায়গাতেই চাহিদা অনুযায়ী সাপ্লাই দিতে পারিনি”, বললেন বড় বাজারের পাইকারী ব্যবসায়ী সমীরণ পাল। তার কথায় “এবারের চাহিদা বেশি থাকায় দাম কিছুটা বেশি। তবে প্রাকৃতিক আবিরের দাম প্রতি কেজি ১৫০ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়”,।

publive-image
দু বছর পরে রঙ খেলা। ছবি- শশী ঘোষ

অপর দিকে একটি ধূলাগড়ের একটি রঙ তৈরির কারখানার মালিক সিদ্ধার্থ দত্ত বলেন, “গত দু বছরে প্রায় ১০ লাখা টাকা লোকসান হয়েছে। এই দু বছরের শুধুমাত্র নির্বাচনের জন্য কিছু আবীর বিক্রি হয়েছিল তাছাড়া দোলে সেভাবে আবীর বিক্রি হয়নি। তবে এবারের চিত্রটা আলাদা। তবে এবারের ভেষজ আবীরের চাহিদা অনেক বেশি। তার দাম তুলনায় কিছুটা বেশি। যদিও বড়বাজারে পাইকারী এবং শহরের একাধিক খুচরো বাজারে রাসায়নিক আবীরই বেশি বিক্রি হয়। তবে এবার ভেষজ আবীরের চাহিদাও বেড়েছে”। কোন রঙের আবীরের চাহিদা এবারের বেশি প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন “এই বছর গোলাপি আবীরের চাহিদাই বেশি। তারপর হলুদ, সবুজ আবীরও বিক্রি হচ্ছে রমরমিয়ে”।

রং খেলতে গিয়ে এই নিয়মভঙ্গ নিয়েই চিন্তায় চিকিৎসকদের বড় অংশ। চিকিৎসক মানস গুমটার কথায়, ‘‘করোনা কৃপা করে চরিত্র পাল্টেছে বলে কিছুটা নিশ্চিন্তে আছি। দিনকয়েকের মধ্যে ফের চরিত্র পাল্টে করোনা ভয়াবহ কোনও আকার নিলে আক্ষেপের সীমা থাকবে না। তাই এই মুহূর্তে যতটা সতর্ক থাকা যায়, ততই ভাল।’’

publive-image
'প্রেসিডেন্সির বসন্ত উৎসব'। ছবি- শশী ঘোষ

চিকিৎসক ইন্দ্রনীল চৌধুরীর মন্তব্য, ‘‘করোনা কিন্তু রয়েছে। তাকে নতুন করে ডালপালা মেলার সুযোগ না দেওয়াই ভাল। তা ছাড়া, আমার বেলাগাম উৎসব যাপন যেন অন্যের দুঃখের কারণ না হয়, সেটাও তো দেখা দরকার!’’ চিকিৎসক অতীন বন্দোপাধ্যায় বললেন, ‘‘যে কোনও উৎসবে এটা মনে রাখতে হবে, আমরা যতটা বেলাগাম হব, নিজেদের পিছিয়ে দেওয়ার ঝুঁকিও ততই বাড়াব।’’

রং মেখে ফেরার পথে উত্তরপাড়া স্টেশনে, মাস্কহীন এক তরুণীর অবশ্য মন্তব্য, ‘‘মুখে তো রং মেখেইছি, মাস্কও রঙিন হয়ে গিয়েছে। তাই খুলে রেখেছি। যা কিছু করোনার নিয়ম আবার দোলের পরে মানব। আর এমনিতেই এখন করোনা নেই। মাঝে দু বছর রঙ খেলতে পারিনি। তাই এই বছর রঙের উৎসবে গা ভাসিয়ে দিতে আমরা সকলেই তৈরি"।

Advertisment