/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2023/11/Soumendranath-Mukherjee.jpg)
সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল। ছবি- পার্থ পাল
পশ্চিমবঙ্গের অ্যাডভোকেট জেনারেল পদ থেকে সৌমেন্দ্রনাথ মুখার্জি গত ১০ নভেম্বর পদত্যাগ করেছেন। তিনি দুই বছর দুই মাস পশ্চিমবঙ্গের অ্যাডভোকেট জেনারেল ছিলেন। মুখার্জি ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে কিশোর দত্তের কাছ থেকে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সরকারি আধিকারিকদের একাংশের মতে, সৌমেন্দ্রনাথ মুখার্জির জমানায় সরকার আদালতে বেশ কয়েকবার ধাক্কা খেয়েছে। যার জেরেই তাঁর প্রস্থান ত্বরান্বিত হল। এক ই-মেইল সাক্ষাৎকারে, মুখার্জি তাঁর পদত্যাগের কারণ এবং সরকারের শীর্ষ আইন উপদেষ্টা হিসেবে তাঁর কার্যকাল নিয়ে আলোচনা করেছেন। রাজ্য প্রশাসনের থেকে তিনি যথেষ্ট সহযোগিতা পেয়েছেন কি না, সেই প্রশ্নেরও উত্তর দিয়েছেন সদ্যপ্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল।
প্রশ্ন:- হঠাৎ পদত্যাগের কারণ কী? গভর্নরের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠানোর সময় আপনি কি বিদেশে ছিলেন?
সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়:- যদিও আমি রাজ্য সরকার বা সরকারের কোনও আধিকারিককে বলিনি যে পদত্যাগ করতে চাই, কিন্তু, দেশে আমার অনুপস্থিতির সময়ই একটি নিউজ ওয়েবসাইট জানায় যে আমি সরকারকে বলেছি, পদত্যাগ করতে চাই। বেশ কয়েকজন আইনজীবী আমাকে জানান যে, ওই নিউজ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত খবর সরকারই ছড়িয়েছে। যেহেতু সরকার এই প্রতিবেদনের বিরোধিতা করেনি, তাই আমি মাননীয় রাজ্যপালের কাছে অবিলম্বে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়া যথাযথ বলে মনে করেছি।
প্রশ্ন:- আপনার কাজের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং অংশ কী ছিল, সরকার কেন এত মামলার সম্মুখীন হচ্ছে? চাকরিতে কী ধরনের চাপের মুখে পড়েছেন?
সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়:- সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং অংশটি ছিল রাজ্যের দৈনন্দিন প্রশাসনে উদ্ভূত বিভিন্ন বিরাট আকারের সমস্যার ব্যাপারে আমার কাছে পরামর্শ চাওয়া হয়েছিল। রাজ্যের বিভিন্ন মামলার বিভিন্ন সমস্যা। সেই ব্যাপারেও আমার পরামর্শ চাওয়া হয়েছিল। সাংবিধানিক পদের চ্যালেঞ্জ এবং চাপের কথা আমি জানতাম। আমি ঠিক করে নিয়েছিলাম যে অ্যাডভোকেট জেনারেল হিসেবে নির্বিঘ্নে দায়িত্ব পালন করব। আর, আদালতের একজন আধিকারিক হিসেবে আমার ভূমিকায় সত্যতা থাকতে হবে। আমার প্রচুর মামলার চাপ ছিল। পর্যাপ্ত সহায়তা পাইনি। কিন্তু, কখনও দায়িত্ব এড়াইনি। রাজ্যের জনকল্যাণমূলক প্রকল্প যাতে প্রভাবিত না-হয়, সেই চাপ ছিল। সেই চাপও আমি নিয়েছিলাম।
প্রশ্ন:- আপনি কি আপনার প্রত্যাশা অনুযায়ী রাজ্য সরকারের থেকে সহযোগিতা পেয়েছেন?
সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়:- সবসময় নয়। অবশ্যই, কিছু আইনজীবী এবং আধিকারিক ছিলেন, যাঁরা পরিশ্রমী, সক্ষম এবং নিবেদিতপ্রাণ। তাঁরা, আমাকে সাহায্য করার জন্য সর্বদা ছিলেন। কিন্তু, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কোটি কোটি টাকা জড়িত এমন বিষয়, যা রাজ্যের স্বার্থকে প্রভাবিত করতে পারে, এমন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারেও আমি প্রায়ই দেখতাম যে আমাকে সাহায্য করার জন্য কোনও সরকারি আইনজীবীদের প্যানেল নেই। অথবা, আমার সঙ্গে কোনও পরামর্শ না-করেই, কোনও খবর না-দিয়েই প্যানেল বদলে দেওয়া হয়েছে। সময়মত এবং সম্পূর্ণ নির্দেশাবলি পাওয়া ছিল একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আমাকে একাধিকবার রাজ্য সরকারের কাছে তথ্য চাইতে হয়েছে। রাজ্য সরকারও আদালতে সমালোচনার মুখে পড়েছে। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে কলকাতা হাইকোর্ট ভর্ৎসনা করেছে। কারণ, বিভিন্ন ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় হাইকোর্টের নির্দেশ মানা হয়নি। সেখানে তো এরকম ঘটবেই।
প্রশ্ন:- সরকারের প্রধান আইনি উপদেষ্টা হিসাবে, আপনি কি মনে করেন যে সরকার প্রত্যাশা অনুযায়ী আপনার পরামর্শ মেনে চলেছে?
সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়:- এটা আশা করা যায় না যে রাজ্য সরকার সব ক্ষেত্রে আমার পরামর্শ মেনে চলবে। আমি একজন আইনজীবী এবং আমার পরামর্শ সর্বদা আইন অনুযায়ী হবে এবং শাসকের পছন্দ-অপছন্দ নির্বিশেষে আমার মতামত জানাব। অবশ্যই, সরকারের অগ্রাধিকার থাকতে পারে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখতে এই অগ্রাধিকার জরুরি হতে পারে। তাই, কিছু ক্ষেত্রে আমার পরামর্শ চাওয়া হলে, অথবা দেওয়া হলেও তা সম্পূর্ণভাবে অনুসরণ করা হয়নি।
প্রশ্ন:- ২০১১ সাল থেকে, বেশ কিছু এজি তাঁদের মেয়াদ শেষের আগেই পদত্যাগ করেছেন…?
সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়:- আগের অ্যাডভোকেট জেনারেলরা তাঁদের পদত্যাগের বিভিন্ন কারণ দেখিয়েছেন এবং উল্লেখ করেছেন। আমি সঠিক কারণ গোপন করিনি। আমি জানিয়েছি, যে কোনও পেশায় পেশাদারের মর্যাদা এবং আত্মসম্মান বজায় রাখা উচিত। এটি নিশ্চিত করার জন্যই আমি পদত্যাগ করেছি।
প্রশ্ন:- অনুরোধ করা হলে আপনি কি সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবেন?
সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়:- না, আসলে আমি গত সপ্তাহে পশ্চিমবঙ্গের মাননীয় রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠকে এটি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছি।
আরও পড়ুন- এবার হিরণ-রুদ্রনীলের তুমুল বিতণ্ডা! চোর-চিটফান্ড নিয়ে কাদা ছোড়াছুড়ি
প্রশ্ন:- পশ্চিমবঙ্গের অ্যাডভোকেট জেনারেল হিসেবে আপনার মেয়াদ কীভাবে মনে রাখবেন?
সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়:- আমার কর্মজীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে মনে রাখব। তবে আমি মনে করি যে রাজ্য সরকারের পূর্ণ সহযোগিতা থাকলে আরও অনেক কিছু করা যেত। আমি বার অ্যাসোসিয়েশন এবং বিচার বিভাগের থেকে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছি। আমি সর্বদা প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা ধরে রাখার চেষ্টা করেছি। সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছি।