Laxmi Puja 2025: দুর্গাপুজোই শুধু নয়, লক্ষ্মীপুজোতেও হয় কলাবউয়ের আরাধনা, জানেন কেন?

Laxmi Puja 2025: দুর্গাপুজোর সময় কলাবউয়ের পুজো আমরা জানি। কিন্তু জানেন কি কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোতেও কলাবউয়ের আরাধনা করা হয়? কেন এই রীতি, কীভাবে হয় পুজো, জানুন বিস্তারিত।

Laxmi Puja 2025: দুর্গাপুজোর সময় কলাবউয়ের পুজো আমরা জানি। কিন্তু জানেন কি কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোতেও কলাবউয়ের আরাধনা করা হয়? কেন এই রীতি, কীভাবে হয় পুজো, জানুন বিস্তারিত।

author-image
Chinmoy Bhattacharjee
New Update
Nabapatrika Puja

Laxmi Puja Kolabou Nabapatrika Pujo 2025: লক্ষ্মীপুজোতেও হয় কলাবউয়ের পুজো।

Laxmi Puja 2025: দুর্গাপুজো বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে কলাবউ। নবপত্রিকা স্নান করিয়ে, সিঁদুর পরিয়ে, শাড়ি জড়িয়ে কলাবউকে নিয়ে আসা হয় মণ্ডপে। বাঙালির মনে এই চিত্র যেন চিরচেনা। কিন্তু জানেন কি, কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোতেও কলাবউ পুজো করার প্রথা আছে বহু অঞ্চলেই?

Advertisment

কলাবউ কে?

'কলাবউ' শব্দের অর্থই হল কলাগাছ রূপী বউ। কলা গাছকে দেবী রূপে পুজো করা হয়। কেউ বলেন, কলাবউ আসলে দেবী দুর্গারই এক অঙ্গ, তাঁর শক্তির প্রতীক। আবার অন্য মতে, কলাবউ হলেন শ্রীগণেশের পত্নী, যিনি লক্ষ্মী রূপে পূজিতা হন। এই কলাবউ বা নবপত্রিকা হল নয়টি গাছের পাতা, ডাল, মূল দিয়ে তৈরি শক্তির প্রতীক। এর মধ্যে কলাগাছই প্রধান। এই নবপত্রিকা বা নয়টি উদ্ভিদের মধ্যে দেবী অধিষ্ঠান করেন।

আরও পড়ুন- কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো, পুজোর সময় এগুলো মিলিয়ে নেবেন ঠাকুরমশাই! কিছু বাদ পড়ল না তো?

Advertisment

এরমধ্যে, কলাগাছ-দেবী ব্রহ্মাণীর প্রতীক। কচু-দেবী কালিকার প্রতীক। হলুদ-দেবী উমার প্রতীক। জয়ন্তী- দেবী কার্তিকীর প্রতীক। বেল-দেবী মহেশ্বরীর প্রতীক। ডালিম-দেবী রক্তদন্তিকার প্রতীক। অশোক-দেবী শোকরহিতার প্রতীক। মানকচু-দেবী চামুণ্ডার প্রতীক। ধান-দেবী লক্ষ্মীর প্রতীক। দুর্গাপুজোয় দেখা যায় নবপত্রিকাকে নতুন শাড়ি পরানো হয়। পরে তাঁকে মণ্ডপে নিয়ে এসে গণেশের পাশে রাখা হয় এবং পুজো করা হয়।

আরও পড়ুন- কেন সরাতে হয় লক্ষ্মীপুজো? জানেন লক্ষ্মী পুজোর কতরকম সরা আছে?

লক্ষ্মীপুজোয় নবপত্রিকা পুজোর কারণ কী? 

এই ব্যাপারে পুরোহিত ফাল্গুনি চক্রবর্তী বলেছেন, 'লক্ষ্মীপুজোয় নবপত্রিকার পুজো সাধারণত পূর্ববঙ্গের লোকজন করে। দেবী লক্ষ্মীর একটি রূপ হল ধান্যলক্ষ্মী। দেবী দুর্গা গোধূলিতে রম্যঅধিষ্ঠাত্রী দেবী লক্ষ্মীর রূপ নিয়েছিলেন। কলাগাছে দেবী দুর্গা রম্যঅধিষ্ঠাত্রী লক্ষ্মীর রূপ নিয়েছিলেন। দেবী দুর্গাই নয়টি গাছের রূপ ধারণ করেছিলেন। তার মধ্যে ধানগাছে তিনি দেবী লক্ষ্মীর রূপ নিয়েছিলেন। কলাবউয়ের ধান, তারই প্রতীক। এই কারণেই কোজাগরী পুজোয় কলাবউয়েরও পুজো করা হয়। এটা মহারাজা লক্ষ্মণ সেনের সময় থেকেই চলছে।'

আরও পড়ুন- বৃহস্পতিবারের লক্ষ্মীপুজো থেকে কোজাগরী পূজা কেন আলাদা? জানুন তাৎপর্য

এ তো গেল শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা। বাস্তবসম্মত দিক থেকে লক্ষ্মীপুজো মানেই ধন, সমৃদ্ধি, শস্য ও পরিবারের মঙ্গল কামনা। কলা গাছকেও প্রাচীনকাল থেকে উর্বরতার প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। বলা হয়— কলা গাছ মাটিতে গভীরভাবে শিকড় গাঁথে, তাই এটি স্থায়িত্ব এবং সমৃদ্ধির প্রতীক। তার পাতা ও ফল দুটোই শুভ হিসেবে গণ্য হয়, তাই লক্ষ্মীপুজোয় কলাবউ পুজো মানে ঘরে লক্ষ্মীর স্থায়ী অবস্থান কামনা করা। 

আরও পড়ুন- কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোয় মানুন এই ১০ টোটকা, ঘরে উথলে উঠবে সুখ

লক্ষ্মীপুজোর দিন সকালে কলাবউ স্থাপন করা হয় বাড়ির পূর্বদিকে বা পূজার আসনে। প্রয়োজনীয় উপকরণ বলতে লাগে একটি তাজা কলা গাছ (পাতা-সহ), লাল বা হলুদ শাড়ি, সিঁদুর এবং আলতা, ফুল, চন্দন ও গঙ্গাজল। প্রথমে কলা গাছটি ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হয়। তারপর শাড়ি পরিয়ে সিঁদুর পরিয়ে দেবীর আসনের পাশে স্থাপন করা হয়। তারপর ঘট পূজার সঙ্গে কলাবউয়ের আরাধনা করা হয়।

আরও পড়ুন- কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর জন্য, বাড়িতেই সহজে বানান এই স্পেশাল নারকেলের লাড্ডু

প্রচলিত কাহিনি

একটি প্রচলিত কাহিনি রয়েছে যে, একবার দেবী লক্ষ্মী কলাবউ রূপে মর্ত্যে অবতীর্ণ হন। তিনি এক কৃষকের ঘরে এসে আশীর্বাদ করেন যে, 'যে আমাকে কলাবউ রূপে পূজা করবে, তাঁর ঘরে শস্য, ধন ও সুখ কখনও কমবে না।' 

আরও পড়ুন- কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো কেন রাতেই করা হয়? কারণ জানলে আশ্চর্য হবেন!

এই বিশ্বাস থেকেই বাংলার বহু পরিবারে লক্ষ্মীপুজোয় কলাবউয়ের পুজো আজও অটুট। গ্রামীণ বাংলায় কলা গাছকে এখনও “শুভ গাছ” হিসেবে দেখা হয়। নতুন ঘর তোলার সময় কলা গাছ দেওয়া হয় দরজায়। বিবাহ বা অন্নপ্রাশনেও কলা গাছ অপরিহার্য। এই ধারাবাহিকতা থেকেই কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোয় কলাবউয়ের পুজো মানেই বাঙালি সংসারের শিকড়ের সঙ্গে যুক্ত থাকা। 

আরও পড়ুন- আসছে বছর আবার হবে! কিন্তু আগামী তিন বছর কবে দুর্গা, লক্ষ্মী, কালীপুজো? দেখে নিন এখানে

কলাবউয়ের পুজো শেষে পরের দিন সকালে কলা গাছটি গঙ্গা বা পুকুরে বিসর্জন দেওয়া হয়। অনেকেই তার একটি পাতা রেখে দেন ঘরে। বিশ্বাস করা হয় যে এটি অশুভ শক্তি থেকে রক্ষা করে। এই ধারণার কারণ, দুর্গাপুজোর কলাবউ যেমন দেবী দুর্গার প্রতীক, তেমনি লক্ষ্মীপুজোর কলাবউ দেবী লক্ষ্মীর প্রতীক। উভয়েরই লক্ষ্য এক—ভক্তের ঘরে মঙ্গল, ধন ও সুখ প্রতিষ্ঠা করা। তাই কোজাগরী পূর্ণিমার রাতে কলাবউ পুজো মানে শুধু ধর্মীয় আচার নয়, এটি বাংলার ঐতিহ্য ও বিশ্বাসের এক চিরন্তন প্রতীক।

Laxmi Puja 2025