'ইন্ডিয়া' জোটের পক্ষে বারেবারেই মুখ খুলছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। বাংলায় 'কুস্তি' হলেও বাদল অধিবেশনে দিল্লিতে এই দুই দলের 'দোস্তি' পর্ব নজরে পড়েছে। বাংলার নানা ইস্যুতে কড়া কথা বললেও তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে আগের মত আখছাড় সুর চড়াতে দেখা যাচ্ছে না অঝধীর চৌধুরীকেও। যা নিয়ে বিরাট গোঁসা প্রদেশ কংগ্রেসের আইনজীবী নেতা কৌস্তভ বাগচীর। রাজ্যে আসন্ন লোকসভায় কোনও মতেই তৃণমূলের সঙ্গে জোট মানা হবে না বলে হুঙ্কার ছেড়েছেন তিনি। তাহলে বাংলায় 'ইন্ডিয়া' জোটের কী হবে? এ প্রসঙ্গেই মুখ খিলেছেন সর্বভারতীয় কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক দীপা দাশমুন্সী।
প্রয়াত কংগ্রেস নেতা তথা কেন্দ্রীয়মন্ত্রী প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির স্ত্রী দীপা দাশমুন্সী রায়গঞ্জের সাংসদ ছিলেন। ভয়ঙ্কর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল বিরোধী বলেই পরিচিত। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে ভবানীপুর থেকে দীপা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। তবে ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে লড়াননি ওই আসন সিপিআইএম-কে ছেড়ে দেওয়ায়। সম্প্রতি এ হেন দীপা দাশমুন্সীকেই অধীর চৌধুরীর মতো সর্বভারতীয় কংগ্রেসের নতুন ওয়ার্কিং কমিটি-র সদস্য করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, দীপাকে সর্বভারতীয় কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদকও করা হয়েছে। এবার থেকে ২৪ নম্বর আকবর রোডে দীপা দাশমুন্সীর একটি অফিস ঘর-ও হবে। আসন্ন লোকসভা ভোটে মোদী সরকারকে উৎখাতে হাইকমান্ড 'ইন্ডিয়া' জোটে তৃণমূলকে চাইছে। সনিয়া ও রাহুল গান্ধীর সঙ্গে হাসি মুখে কথা বলতে দেখা গিয়েছে মমতাকে। এবার দলের নীতি নির্ধারণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদে 'মমতা বিরোধী' দীপা। তৃণমূলের সঙ্গে জোট বা সমঝোতা কী মেনে নেবেন তিনি?
এ প্রসঙ্গের প্রশ্নে দীপা দাশমুন্সি বলেছেন, 'কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী বিরোধী একটা জোট তৈরি হয়েছে। সেখানে কংগ্রেস ও তৃণমূল দুই দলই শরিক। বৃহত্তর উদ্দেশ্য নিয়ে জাতীয় স্বার্থে এই জোট তৈরি হয়েছে। সুতরাং জোট যখন হয়েছে তখন আসন সমঝোতার প্রশ্ন উঠতেই পারে। তবে এ ব্যাপারে এখনও কোনও আলোচনা শুরু হয়েছে বলে জানা নেই।'
জোট বা সংঝোতা হলে কী তা মেনে নেবেন তিনি? উত্তরে দীপা বলেন, 'দলের সিদ্ধান্ত আমি বরাবর মেনে চলেছি। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে প্রথমে বামেদের সঙ্গে জোট করার ব্যাপারে কথা হয়েছিল। মহম্মদ সেলিম তখন রায়গঞ্জের সাংসদ ছিলেন। দল বলেছিল, রায়গঞ্জ আসন সিপিএমকে ছাড়তে হবে। আমি রাজি হয়ে গেছিলাম। সিপিএম নেপাল মাহাতোকে আসন ছাড়তে রাজি না হওয়ায় পরে অবশ্য জোট আলোচনা ভেস্তে যায়।'
নিজেকে দলের অনুগত বলে দীপা দাশমুন্সী যেন বার্তা দিলেন যে, 'ইন্ডিয়া' শিবিরে কংগ্রেস তৃণমূল জোট বা আসন সমঝোতা হলে কার্যত কোনও আপত্তি তাঁর নেই। হাইকমান্ড সিদ্ধান্তই মানবেন তিনি।
পশ্চিমবঙ্গের সরকার, শাসক দল নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেসের ভুরিভুরি অভিযোগ। পঞ্চায়েত ভোটে হিংসার জন্য তৃণমূলকেই দায়ী করা হয়েছে। তাঁর কী মূল্যায়ণ? দীপা দাশমুন্সী'র জবাব, 'ওটা ভোট হয়নি। পুলিশ দিয়ে, প্রশাসন দিয়ে, মস্তানি করে প্রহসন হয়েছে। বাংলায় তৃণমূল যতদিন ক্ষমতায় থাকবে, ততদিন পঞ্চায়েতে ভোট বলে কিছু হবে না।'
প্রচণ্ড মমতা বিরোধী বলে পরিচিত অধীর চৌধুরী'র সুর নরম। দীপাও বলছেন হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত মানবেন। এ হেন পরিস্থিতিতে বাংলায় কংগ্রেস-তৃণমূল জোট বা সমঝোতার বিরোধিতা করছেন কৌস্তভ বাগচীরা। জাতীয়স্বার্থ এড়িয়ে সেই দাবিতে অমল দেবে দিল্লি'র নেতৃত্ব? নজর এখন সেদিকেই।