আলোর উৎসবেই আঁধার নেমেছে নদিয়ার তেহহট্টের রঘুনাথপুরের ঘোষ পরিবারে। দেশের জন্য শহিদ হয়েছেন এ বাড়ির ছেলে সুবোধ। দেশের রক্ষার কাজে বছর ২৪-এর ছেলেটির লড়াইয়ে গর্বিত আত্মীয়, পাড়া-প্রতিবেশীরা। কিন্তু, এত কম বয়সে তাঁর শহিদ হওয়ার বিষয়টা যেন কিছুতেই মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। রবিবার রাত ১১টার পর যখন গ্রামের বাড়িতে সুবোধ ঘোষের কফিনবন্দি নিথর দেহ এল তখন চারদিকে শুধু কান্নার রোল। উপচে পড়ছে ভিড়।
ভারতে জঙ্গিদের অনুপ্রবেশের চেষ্টায় উরি, দাওয়ার, নওগাঁও, তাংধার, সৌজিয়ান, কেরান, মাচিল, গুরেজ- একের পর এক সেক্টর জুড়ে শুরু হয় নিরন্তর গুলির লড়াই। আর তাতেই সুদূর কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা এলাকায় পাক সেনার গুলিতে প্রাণ হারান বাংলার ছেলে সুবোধ ঘোষ।
সুবোধকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে সকলা থেকেই প্রস্তুত ছিল রঘুনাথপুর। তাঁর স্কুলের মাঠেই বাঁধা হয়েছিল অস্থায়ী মঞ্চ। সেখানেই ফুল, মালা ও চোখের জলে ভারতমাতার বীর সন্তানকে শেষ শ্রদ্ধা জানান এলাকার মানুষজন। দেওয়া হয় গান স্যালুট। স্লোগান ওঠে, 'ভারত মাতা কি জয়, সুবোধ ঘোষ অমর রহে।' এইসময়ই স্বামীর কফিনের উপর কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর স্ত্রী অনিন্দিতা।
কয়েক বছর আগেই সুবোধ অনিন্দিতার বিয়ে হয়েছিল। তাঁদের সন্তানের বয়স মাত্র ছয় মাস। সীমান্ত সুরক্ষার গুরু দায়িত্বে থাকায় এখনও মেয়েকে নিজের চোখের দেখা হয়নি সুবোধের। আর কোনওদিন হবেও না। তার আগেই চির নিদ্রায় একরত্তির বাবা। কাঁদতে কাঁদতে আক্ষেপ ঝড়ে পড়ছিল স্ত্রী অনিন্দিতার।
বৃহস্পতিবার স্ত্রীর সঙ্গেই শেষ ফোনে কথা বলেছিলেন সুবোধ। কান্নাভেজা গলায় বোন পলি বলছিলেন, 'ডিসেম্বরে বাড়িতে আসার কথা ছিল দাদার। মেয়ের মুখেভাতের অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যেই আসত দাদা। কিন্তু, সে আর হল কই? তার আগেই সব শেষ। আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না।' হাসি মুখের সুবোধের বদলে রঘুনাথপুরের বাড়ি এল তাঁর কফিনবন্দি নিথর দেহ।
রবিবার বিকেলে পানাগড়ে এসে পৌঁছায় শহিদ জওয়ান সুবোধ ঘোষের দেহ। সেখান থেকেই সড়ক পথে দেহ আনা হয় রঘুনাথপুরে। পানাগড়েই সুবোধকে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয় ভারতীয় সেনা ও বায়ুসেনার পক্ষ থেকে।
৩ বছর ১ মাস আগেই সেনাবাহিনীর ৫৯ মেডিক্যাল রেজিমেন্ট ইউনিটে যোগ দেন সুবোধ ঘোষ। তাঁর মৃত্যুর খবর শোনার পরই টুইটে সমবেদনা জানান রাজ্যপাল।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন