বিশ্বের একাধিক দেশে করোনা সংক্রমণ কমতে শুরু করেছে। আর পাঁচটা সাধারণ ফ্লু’র মতই করোনা হয়ত থেকে যাবে আজব মানব সভ্যতার সঙ্গেই। ইউরোপের একাধিক দেশ অন্তত তেমনটাই মনে করছে। বিশ্বের তামাম জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, ওমিক্রনের হাত ধরেই করোনা শেষের শুরু হতে চলেছে। এদিকে এই পরিস্থিতিতে যখন সকল বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে, গনপরিবহন স্বাভাবিক, মেলা বিয়েবাড়ি সবক্ষেত্রেই মিলছে অনুমতি, তখন স্কুল বন্ধ কেন? প্রশ্ন তুলেছেন, বিশ্ব ব্যাঙ্কের কর্তা।
তাঁর অভিমত, করোনার চোখরাঙানিকে অতীত ভেবে এবার স্কুল খুলে দেওয়াই উচিত বলেই মনে করেন, বিশ্ব ব্যাঙ্কের শিক্ষা সংক্রান্ত ডিরেক্টর জাইম সাভেদ্রা। তাঁর সাফ কথা যেখানে রেস্তোরাঁ, পানশালা, জিম, স্যালন পার্লার সব খোলা সেখানে স্কুল বন্ধ রেখে কি লাভ? আখেরে ক্ষতি তো পড়ুয়াদের। করোনা আঘাত হানার পর থেকেই তাঁর নেতৃত্বাধীন একটি টিম শিক্ষাক্ষেত্রে করোনার প্রভাব সংক্রান্ত তথ্যের উপর নজর রাখছে। সেই তথ্য নিয়ে কাটাছেঁড়া চালিয়ে যাচ্ছে তারা। দেখা গিয়েছে, স্কুল খোলার ফলে সংক্রমণ বেড়েছে—এমন কোনও তথ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পরিসংখ্যান থেকে পাওয়া যায়নি।
এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘অনেকে মনে করছেন, পড়ুয়াদের করোনা ভ্যকসিন না দেওয়া পর্যন্ত স্কুল খোলা যাবে না। এই দাবির পক্ষে কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। স্কুল অবশ্যই খুলে দেওয়া প্রয়োজন। আর সংক্রমণের নতুন ঢেউ এলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত শেষ পদক্ষেপ। স্কুল খুললে শিশুদের যতটা শারীরিক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা, বন্ধ রাখলে তার থেকে অনেক বেশি মূল্য চোকাতে হবে।’
প্রথম দফায় করোনা নিয়ে সেভাবে আমাদের কাছে সুস্পষ্ট কোন ধারণা ছিল না, সেই সময় সবকিছু বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে স্কুলগুলিইও বন্ধ রাখা হয়েছিল, তার পর একে কে সব কিছু খুলে,গেলেও স্কুল আর সেভাবে চালু হচ্ছে না এতে তিনি তার ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সংক্রমণ বৃদ্ধিতে স্কুল খোলা বা বন্ধ রাখার কোনও ভূমিকা নেই। এখন ঢেউ ওমিক্রনের। শিশুরা এতে আক্রান্ত হলেও ক্ষতির পরিমাণ খুবই কম। জীবনের ঝুঁকিও নগণ্য।
ভারতে স্কুল খোলা নিয়ে তাঁর দাবী, ‘যা ভাবা হয়েছিল, ক্ষতি হয়েছে তার তুলনায় অনেক বেশি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দরজা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত শিশুদের দক্ষতায় সরাসরি প্রভাব ফেলেছে। ‘লার্নিং পভার্টি’ বা শিক্ষায় দৈন্য বেড়েছে। ১০ বছরের পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে একটি সহজ পাঠ্য বিষয় পড়া ও বোঝার ক্ষমতা কমেছে। স্কুল বন্ধ থাকার ফলে ভারতে এই লার্নিং পভার্টি ৫৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭০ শতাংশ হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। এর প্রভাব ভবিষ্যতে রাষ্ট্রের সামগ্রিক আয় বা বৃদ্ধির উপরও পড়বে। ২০২০’তে বিশ্ব ব্যাঙ্কই কিন্তু জানিয়েছিল, স্কুল বন্ধ থাকায় ভারতের আয় কমবে ৪০ হাজার কোটি ডলার।