Lok Sabha elections 2019: ১১ এপ্রিল রাজ্যে প্রথম দফার ভোট। চলছে বৈঠকের পর বৈঠক। তবু মিলছে না রফাসূত্র। আদি অকৃত্রিম প্রশ্ন, এই লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী কারা হবেন? এখনও প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতে পারল না ভারতীয় জনতা পার্টি, রাজনৈতিক মহলে এটাই এখন সবচেয়ে বড় চর্চার বিষয়। কেন এই বিলম্ব? বিজেপি নেতৃত্ব মনে করেন, তাঁদের দাবিদারের সংখ্যা বেশি, তাই ঘোষণা করতে একটু দেরি হচ্ছে। সূত্রের খবর, লবি নিয়ে দড়ি টানাটানি এবং "আরও ভাল" প্রার্থীর আশায় দেরি হচ্ছে ঘোষণায়। কিন্তু জুতসই প্রার্থী এখনো পাওয়া যাচ্ছে না কেন, তাও একটা প্রশ্ন বটে।
বিজেপির লক্ষ্য পশ্চিমবঙ্গে ২৩টি আসনে জয়। তারপর লক্ষ্য ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে ক্ষমতা দখল। কিন্তু আপাতত এরাজ্যে প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে অন্যদের চেয়ে কয়েক যোজন পিছিয়ে পড়েছে গেরুয়া বাহিনী। বাকি তৃণমূল, কংগ্রেস ও সিপিএম প্রার্থী দিয়ে প্রচার শুরু করে দিয়েছে। উত্তরবঙ্গে বিজেপির সাংগঠনিক কাঠামো অপেক্ষাকৃত মজবুত, তাই সেখানে ভাল ফল করবে তারা, এই ধারনা রয়েছে গেরুয়া শিবিরে। সেখানে ভোট হতে বাকি আর মাত্র ২১ দিন। এখনও ভোটাররা বিজেপি প্রার্থীর নাম জানতে পারলেন না।
বিজেপি সূত্রে খবর, কারা প্রার্থী হবেন তা নিয়ে বারবার সংশয় তৈরি হয়েছে। বিজেপি কর্মসমিতির সদস্য মুকুল রায় বলে আসছিলেন, তৃণমূলের এক ঝাঁক সাংসদ তৃণমূলে যোগ দেবেন। স্বাভাবিকভাবে তাঁরা পদ্মশিবিরের প্রার্থী হবেন, তা নিয়ে সংশয় নেই। বিষ্ণপুর ও বোলপুরের দুই প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ বিজেপির টিকিট পাচ্ছেন তা অনেক আগেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বাকি যাঁদের তৃণমূল টিকিট দেয়নি, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কোচবিহারের সাংসদ পার্থপ্রতিম রায়, রানাঘাটের সাংসদ তরুণ মন্ডল। এমন অনেক তৃণমূল সাংসদ রয়েছেন, বিজেপির প্রার্থী তালিকা প্রকাশ পেলে যাঁদের অবস্থান স্পষ্ট হবে।
রাজনৈতিক মহলের মতে, শুধু তৃণমূল সাংসদ নয়, তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশকে ভাঙিয়ে আনা বা তাঁদের রাজি করানো সময়সাপেক্ষ হয়ে যাচ্ছে। অতএব অনর্থক দেরি হচ্ছে প্রার্থীদের নাম ঘোষণায়। এও শোনা যাচ্ছে, সেলিব্রিটিদের প্রার্থী করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিজেপি। সেক্ষেত্রে ওই তারকাদের রাজি করাতে, বা তাঁদের পছন্দমত আসন দিতে কালঘাম ছুটছে নেতৃত্বের। আবার এই জগাখিচুড়ির মধ্যে রয়েছেন কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতৃত্বের পছন্দের প্রার্থীরা। তাঁদেরও পছন্দের লোকসভা কেন্দ্র রয়েছে। সেই আসন না ছাড়লে গোঁসা হবেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। প্রার্থী ও আসন ম্যানেজমেন্ট করতেই সময় পার হয়ে যাচ্ছে বলে সূত্রের খবর।
আরও পড়ুন: প্রার্থী তালিকা নিয়ে সংশয়, ‘আমাদের কবে হবে?’ প্রশ্ন বিজেপি কর্মীদের
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় এর আগে জানিয়েছিলেন, তাঁদের ৪২টি আসনের জন্য ৮৪ জন যোগ্য ব্যক্তির নাম রয়েছে। তাই সেখান থেকে প্রার্থী বাছতে দেরি হয়ে যাচ্ছে। ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পাল প্রার্থী হবেন বলে বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে কথা হয়েছে। আরও কিছু পরিচিত মুখের সঙ্গে বিজেপি যোগাযোগ করেছে। কিন্তু কোন নেতাকে সরিয়ে কোথায় কাকে প্রার্থী করা হবে তা বাছতে গিয়েই হিমসিম অবস্থা।
রোজ নতুন নতুন প্রার্থীর নাম নিয়ে আলোচনা হচ্ছে গেরুয়া শিবিরে। অবস্থা এমনই, যে রাজ্য নেতৃত্বের একটি বড় অংশ টিকিট না-ও পেতে পারেন এবারের লোকসভা নির্বাচনে। একই নেতার নাম দু-তিনটি কেন্দ্রে প্রার্থী হিসাবে আলোচিত হয়েছে। আবার জেলা থেকে অনেকের নাম জমা পড়েছিল প্রার্থী হিসাবে। তাঁদের অনেকেরই জোরালো দাবি ছিল। চতুর্দিকের এই চাপেই প্রার্থী ঘোষণার দফারফা হচ্ছে বলে দাবি করছেন দলের একাংশ।
১১ এপ্রিল কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারে প্রথম দফার নির্বাচন। কিভাবে প্রচার চলছে? কোচবিহার জেলা বিজেপি সভানেত্রী মালতি রাভা রায় বলেন, ''আমরা সাংগঠনিকভাবে বুথ স্তর পর্যন্ত প্রচার করছি।'' কে প্রার্থী জানা নেই, অসুবিধা হচ্ছে না প্রচারে? মালতি দেবীর স্পষ্ট জবাব, ''নরেন্দ্র মোদী আমাদের প্রার্থী, প্রতীক পদ্মফুল। নরেন্দ্র মোদীর হাত শক্ত করতে পদ্মফুল চিহ্নে ভোট দিতে আবেদন জানিয়ে প্রচার করছি।''