বাংলা টেলিজগতের শিল্পী-কলাকুশলীরা কিঞ্চিৎ স্বস্তি পেয়েছিলেন যখন ১৮ মার্চ শুটিং বন্ধ রাখার ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। শুটিং মানেই একটি বদ্ধ জায়গায় বহু মানুষের সমাগম। তাই রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও বেশি। তাই এই সিদ্ধান্তে বেশ খুশিই ছিলেন বাংলা টেলিজগতের সকলে। কিন্তু বিষয়টা আর ১০-১২ দিন নেই, প্রায় একমাসে পৌঁছে গিয়েছে। লকডাউনের সিদ্ধান্তকে সকলেই সাধুবাদ জানিয়েছেন কিন্তু টেলিপাড়ার অন্দরে বেশ কিছু আশঙ্কা কাজ করছে।
প্রথমত, টেলিপাড়ার বেশিরভাগ শিল্পীই পার-ডে আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করেন। খুব কম অভিনেতা-অভিনেত্রীই রয়েছেন যাঁরা কনট্র্যাক্ট আর্টিস্ট অর্থাৎ প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করার মতোই এঁরা মাসের শেষে একটা থোক টাকা পান। সে তিনি যত ঘণ্টাই বা যত দিনই শুটিং করুন না কেন। বাকিদের দিন-প্রতি একটি নির্দিষ্ট পারিশ্রমিক আছে। যিনি ৫ হাজার টাকা প্রতিদিন পারিশ্রমিক নেন, তিনি যদি মাসে ১০ দিন কাজ করেন তবে তাঁর মাসে আয় হবে ৫০ হাজার টাকা।
আরও পড়ুন: করণ জোহর থেকে তাপসী, আয়ুষ্মান-টেকনিশিয়ানের পাশে বলিউড
এই শিল্পীদের সংখ্যাই প্রায় ৮০ শতাংশ। এঁদের অনেকেই এই আয়ের উপর ভিত্তি করেই গাড়ি-বাড়ির ইএমআই দেন। অনির্দিষ্টকাল বাড়িতে বসে থাকার অর্থ কোনও টাকাই উপার্জন হল না। এমনটা নয় যে এই বর্গের শিল্পীদের প্রতিদিনই শুটিং ডেট থাকে। কিন্তু স্টেজ শো, বিভিন্ন ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে যাওয়া ইত্যাদির মাধ্যমেও এঁদের অনেকটা আয় হয়। করোনার প্রকোপে সেই সুযোগও বন্ধ।
দ্বিতীয়ত, শুধুমাত্র পার-ডে আর্টিস্টরা নন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বেশ দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কনট্র্যাক্ট শিল্পীরাও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জনপ্রিয় টেলি-নায়িকা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে জানালেন, ''আমরা কনট্র্যাক্ট আর্টিস্টরাও এখন ভয় পাচ্ছি পেমেন্ট নিয়ে, কতদিন শুটিং বন্ধ থাকবে, আমাদের পেমেন্ট কতটা কী হবে জানি না।'' এই বর্গের শিল্পীদের আশঙ্কা দীর্ঘদিন শুটিং বন্ধের ফলে একটা সময় সম্প্রচারও ব্যাহত হবে, সেক্ষেত্রে প্রযোজকরা যেমন বড় ক্ষতির মুখে পড়বেন, বিনোদন চ্যানেলগুলিরও আয় হ্রাস পাবে। তাই যে টাকা প্রতি মাসে পাওয়ার কথা কনট্র্যাক্ট শিল্পীদের, সেই পরিমাণ টাকাই দেওয়া হবে তো নাকি তার চেয়ে কম টাকা পাবেন তাঁরা, এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে বহু অভিনেতা-অভিনেত্রীর মনে।
আরও পড়ুন: লকডাউনে বিনোদন পর্ব ২: হাতে রইল ৫টি বাংলা শর্ট ফিল্ম
তৃতীয়ত, টেকনিশিয়ানরা বেশিরভাগই প্রায় দিনপ্রতি হিসেবে কাজ করেন। খুব কম সিনিয়র টেকনিশিয়ানই রয়েছেন যাঁদের সঙ্গে প্রযোজনা সংস্থাগুলি কনট্র্যাক্ট করে কাজ করে। গড়ে টেকনিশিয়ানদের আয় শিল্পীদের আয়ের চেয়ে অনেকটাই কম। তাই একমাস শুটিং বন্ধ থাকলে অনেকেই চরম অর্থকষ্টে পড়বেন। যদিও প্রযোজকরা তাঁদের জন্য তহবিল গঠন করে অর্থসাহায্যের চেষ্টা করছেন কিন্তু তা হলেও যতটা টাকা হাতে আসবে তাঁদের তা যথেষ্ট অপ্রতুল।
চতুর্থত, যদি প্রধানমন্ত্রীর কথামতো আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন জারি থাকে, তবে আগামী সপ্তাহের মাঝামাঝি থেকেই আর কোনও ধারাবাহিকের নতুন এপিসোড দেখা যাবে না। অর্থাৎ প্রায় দিন দশেক প্রত্যেকটি চ্যানেলকেই নতুন করে প্রোগ্রাম শিডিউল করতে হবে। যদি ধারাবাহিকের পুরনো এপিসোডই দেখাতে হয়, তবে একই এপিসোড তো আর রোজ সম্প্রচার হবে না। অর্থাৎ চ্যানেলগুলিকে কিছু নতুন থিমে পুরনো এপিসোডের অংশগুলিকেই প্যাকেজিং করতে হবে। সেই প্যাকেজিং এমন হতে হবে যা দর্শক টানবে। তা যদি না হয়, তবে সব চ্যানেলেরই জিআরপি অনেকটা পড়ে যাবে যা চ্যানেলের ব্যবসার পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক।