গত ১৩ মার্চ কেরালার কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রেজিস্ট্রারের সই করা একটি নির্দেশিকা (সার্কুলার নাম্বার CUK/ACA/728/2018-2019/878) জারি করেন। সেই নির্দেশিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত বিভাগীয় প্রধানদের উদ্দেশ্যে জানানো হয় যে গবেষণার বিষয় এমনভাবে নির্বাচন করতে যা জাতীয় স্বার্থের সহায়ক হয়। নির্দেশিকায় পরিষ্কার ভাবে বলা ছিল:
All the Heads of the Department are hereby directed to convene the meeting of faculties and to prepare a shelf of projects to be taken for research study pertaining to their subject considering national priorities.
নির্দেশিকায় এও জানানো হয় যে গবেষণা করতে যখন নতুন ছাত্র/ছাত্রীরা আসবেন তখন তাঁরাও যেন গবেষণার বিষয়বস্তু হিসেবে এমন বিষয়ই বেছে নেন যা ওই নির্দেশিকার পরিপন্থী না হয়। ওই নির্দেশিকায় এমনকি `অপ্রাসঙ্গিক' বিষয়ে গবেষণা না-করার কথাও বলা হয়। যদিও বিশুদ্ধ জ্ঞানের ক্ষেত্রে কোন বিষয় প্রাসঙ্গিক এবং কোনটি নয়, কিসের ভিত্তিতে তা ঠিক করা যাবে এরকম কোনো ইঙ্গিত কোথাও ছিল না। ফলত এই অনুমিতি অন্যায় নয় যে কর্তৃপক্ষের বিচারে, যা-ই `জাতীয় স্বার্থের' পরিপন্থী, তাই অপ্রাসঙ্গিক।
এই অদ্ভুত নির্দেশিকা জারির প্রতিবাদে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর কালচারাল স্টাডিজের অধিকর্তা অধ্যাপিকা মীনা পিল্লাই ২১ মার্চ বোর্ড অফ স্টাডিজ থেকে পদত্যাগ করেন। পরে একটি সাক্ষাৎকারে পদত্যাগ করার কারণ হিসেবে তিনি জানান যে তাঁর বিবেচনা অনুযায়ী এই নির্দেশিকা অগণতান্ত্রিক, কারণ গবেষণার বিষয়বস্তু বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা একজন গবেষকের সবসময় থাকা উচিৎ। অধ্যাপিকা পিল্লাইয়ের পদত্যাগ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে কর্তৃপক্ষ মুখরক্ষা করার চেষ্টা করে কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের একটি উক্তি উল্লেখ করে, যদিও বিজয়ন টুইট করে পরে জানান যে উক্তিটি ইচ্ছাকৃত ভাবে বিকৃত করা হয়েছে। কোনও একটি সাক্ষাৎকারে বিজয়ন বলেছিলেন সমাজ ও মানুষের উপকারে আসবে এমন বিষয়ে আরও গবেষণা হওয়া বাঞ্ছনীয়, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশিকাটিতে পরিষ্কারভাবে জাতীয় স্বার্থের সহায়ক বিষয়ে গবেষণার ওপরেই জোর দেওয়া হয়েছে। সমাজের উন্নতিকল্পে গবেষণার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে করা গবেষণার যে আকাশপাতাল তফাৎ, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহের অবকাশ থাকতে পারে না। এই ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর পরই ভারত সরকারের মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক তড়িঘড়ি ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামো, এবং ২৫ মার্চ সকাল দশ টা কুড়ি মিনিটে একটি অনলাইন নির্দেশিকার মাধ্যমে ঘোষণা করে যে মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক গবেষণার বিষয়বস্তু স্থির করে দেওয়ার কোনো নির্দেশিকা জারি করেনি।
মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক এই নির্দেশিকা জারি না করে থাকলে এটা ধরে নিতে হবে যে কেরালা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে এরকম কোনো নির্দেশ ইউ জি সি থেকে আসেনি। ইউ জি সি, অর্থাৎ ইউনিভার্সিটি গ্র্যান্টস কমিশন, ভারত সরকারের মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের অধীনে থাকা একটি প্রতিষ্ঠান, অর্থাৎ স্ট্যাটিউটরি বডি। ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি গ্র্যান্টস কমিশনের (যা কিনা ইংলন্ডের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কী ভাবে আর্থিক অনুদান বিতরণ করা হবে সে বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারকে উপদেশ দিয়ে থাকে) আদলে, ১৯৫৬ সালে ইউজিসি অ্যাক্ট মেনে এটি তৈরি হয়। ভারতবর্ষের উচ্চশিক্ষায় ইউজিসির আইনগত গুরুত্ব অপরিসীম। ইউজিসি র কাজই হল দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বীকৃত দেওয়া এবং বিভিন্ন খাতে সরকারি অনুদান কী ভাবে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে (বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অধীনস্ত কলেজে) যাবে তা ঠিক করা। ইউনিভার্সিটি এবং কলেজগুলির টিকে থাকার ব্যাপারে ইউজিসি-ই যে সর্বেসর্বা, এরকম মন্তব্য করলে তাই খুব একটা ভুল কিছু বলা হবে বলে মনে হয় না। ইউজিসির যাবতীয় কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। সুতরাং সেই মন্ত্রক সরাসরি সার্কুলার জারি না করলে কেরালা বিশ্ববিদ্যালয় সেই সার্কুলার জারি করে কোন অধিকারে সেই প্রশ্ন তোলাই যায়। এছাড়াও, যদি ইউজিসি (বা মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক অর্থাৎ মিনিস্ট্রি অফ হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট, সংক্ষেপে এমএইচআরডি) সেই সার্কুলার জারি করে তাহলে তা সুষমভাবে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে জারি না করে শুধু মাত্র কেরালার একটি বিশ্ববিদ্যালয়েই করা হল কেন, এটিও একটি বৈধ প্রশ্ন বৈকি।
এর উত্তর খুঁজতে গেলে আপাতদৃষ্টিতে দুটি সম্ভাবনা মাথায় আসে।
হয়তো অতি উৎসাহী হয়ে এই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ, উদ্দেশ্য ছিল কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলের গুড বুকে থাকা এবং সেই সূত্রে (রাজনৈতিক সহ) বিশেষ কিছু ক্ষমতা আদায় করা। অথবা, রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে, সরকারি ভাবে নয়, গোপনে, এই ঘটনাকে `টেস্ট বেড' হিসেবে ব্যবহার করার জন্য - যাতে দেখা যায় এই ধরনের ঘটনা সরকারি ভাবে ঘটালে কী ধরণের প্রতিক্রিয়া আসতে পারে, এবং রাষ্ট্র কতখানি বাধার সম্মুখীন হতে পারে শিক্ষানুরাগীদের থেকে। দুটি সম্ভাবনার অনুমিতিরই মূলে রয়েছে দুটি বৈঠক। প্রথমটি (ন্যাশনাল কনফারেন্স) অনুষ্ঠিত হয় গতবছর ২৬ থেকে ২৮ জুলাই, মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী শ্রী প্ৰকাশ জাভড়েকর এবং মিনিস্টার অফ স্টেট, হায়ার এডুকেশন, শ্রী সত্য পল এর সাথে দেশের সমস্ত কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, রাজ্য বিশবিদ্যালয়, ডিমড ইউনিভার্সিটি আইআইটি আইআইএম সহ যাবতীয় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সাথে। দ্বিতীয় বৈঠকটি হয় গত বছর ১৫ ডিসেম্বর, দেশের ১১ টি `গবেষণায় পিছিয়ে পড়া' (এমএইচআরডি র সার্কুলারে এই শব্দবন্ধটি ব্যবহার করা হয়েছিলো ) কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে। দুটি সভাতেই দেশের গবেষণা কোন পথে গেলে ভালো হয় তার `রোড ম্যাপ' নিয়ে আলোচনা হয়। তারই ফলশ্রুতি হিসেবে কেরালা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শাসকঘনিষ্ঠ পদক্ষেপ, এ কথা ভাবলে হয়তো খুব একটা ভুল ভাবা হবে না।
এই ঘটনার ফলাফল হতে পারে সুদূরপ্রসারী। প্রথমত বৌদ্ধিক দৃষ্টিভঙ্গিটির কথা ভেবে দেখা যাক। কোন বিষয়ে গবেষণা প্রয়োজনীয় এবং কোন বিষয়ে নয়, তা একমাত্র ঠিক করবেন গবেষক এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবিদরা। কারণ একমাত্র তাঁরাই বুঝবেন কোন গবেষণার কী গুরুত্ব, যেটা কোনও আমলা বা রাজনৈতিক নেতার পক্ষে বোঝা অসম্ভব। বর্তমানের আপাতদৃষ্টিতে `অপ্রয়োজনীয়' কোনও গবেষণার ফলাফল যে ভবিষ্যতে বিপুল গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারবে না, তেমনটাও বলা সম্ভব নয় কিছুতেই। দ্বিমূল সংখ্যাতত্ত্ব (বাইনারি নাম্বার সিস্টেম) নিয়ে যখন গবেষণা করেছিলেন টমাস হ্যারিয়েট, হুয়ান লবকোভিৎস বা গটফ্রিড লাইবনিৎস, অথবা বহু আগে (আনুমানিক ১০০০ - ৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) চীনা গণিতজ্ঞদের কাজে (দ্য বুক অফ চেঞ্জেস, মান্দারিনে আই চিং বা ই-জিং) প্রথম যখন উঠে এসেছিলো দ্বিমূল সংখ্যাতত্ত্বের খুব প্রাথমিক ধারণা, তখন কি কেউ ভাবতে পেরেছিলো এই বিশুদ্ধ তাত্ত্বিক জ্ঞানই একদিন পৃথিবীর সমস্ত যন্ত্রগণকের প্রধান চালিকা শক্তি হয়ে দাঁড়াবে? আলবার্ট আইনস্টাইন যখন সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করছিলেন, তখন কারো পক্ষে বলা সম্ভব ছিল কি, যে, সেই অতি জটিল গাণিতিক তত্ব একদিন কাজে লাগবে ওলা বা উবের ট্যাক্সির নেভিগেশনে, গুগল ম্যাপ দেখে বেড়াতে যেতে এবং আরো বিভিন্ন স্যাটেলাইট নির্ভর নেভিগেশনে?
কোনও বিষয়ে গবেষণা কীভাবে একদিন সমাজের কাজে লাগবে, সে নিয়ে ভবিষ্যৎবাণীর চেষ্টা করা অতএব বাতুলতার নামান্তর, বিশেষ করে যদি সেই (অপ)চেষ্টা করেন একজন আমলা বা রাজনৈতিক নেতা।
এবং যদি রাষ্ট্রের হাত থাকে সেই `ভবিষ্যৎবাণীর' পেছনে, তাহলে তা শুধু অবৈজ্ঞানিক এবং অনৈতিকই নয়, চূড়ান্ত ভাবে অগণতান্ত্রিকও বটে, একে স্বৈরতান্ত্রিক বললেও বোধহয় অত্যুক্তি হবেনা। জ্ঞানের জগতে মুক্তচিন্তা বন্ধ করার এই নিন্দনীয় প্রচেষ্টাকে যে কোনো মূল্যে আটকানো প্রয়োজন দেশ, জাতি ও সমাজের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থেই।
দুঃখের বিষয়, শিক্ষাজগতের অনেকেই কিন্তু এই মুক্তচিন্তাবিরোধী ফরমানের বিরোধিতা করছেন না, বরং তার সমর্থনে কথা বলছেন - যেমন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু অধ্যাপক বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে সরাসরি সমর্থন করেছেন `জাতীয় স্বার্থের' দিকে তাকিয়ে গবেষণা করার এই পরিকল্পনাকে। পদক, উপাধি, খেতাব ও উত্তরীয়র লোভে শিক্ষাজগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা যদি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার সামনে মাথা নোয়ান, তা দুর্ভাগ্যজনক বৈকি। যদিও রাষ্ট্রর গুড বুকে থেকে পেশাগত উন্নতির রাস্তা সুগম করে নেওয়ার এই প্রবণতা এই পোড়া দেশে নতুন কিছু নয়।
গবেষণার বিষয় জোর করে ঠিক করিয়ে দেওয়ার এই প্রবণতা সুদূরপ্রসারী বিপদের ইঙ্গিতবাহী। সার্বিক শিক্ষাকে ধ্বংস করে দেওয়ার প্রচেষ্টার এটা প্রাথমিক রূপ। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে গবেষণার ফতোয়া জারি করার পরবর্তী ধাপ হিসেবে বলা হতে পারে পুরোহিততন্ত্র বা জ্যোতিষ না পড়ালে অনুমোদন পাবে না কলেজগুলো, বা প্রার্থনাসংগীতে হীরকের রাজা ভগবান না গাইলে জুটবে না মিড ডে মিল। এই আশঙ্কা অমূলক নয়। ভারতীয় সংবিধানের সপ্তম তফসিলভুক্ত সহগামী তালিকায় (কংকারেন্ট লিস্ট) বাহান্নটি দফার মধ্যে পঁচিশ নম্বরে আছে শিক্ষা। অর্থাৎ শিক্ষা বিষয়ে সিদ্ধান্তগ্রহনে কেন্দ্র ও রাজ্যের উভয়পক্ষের অধিকার থাকা সত্বেও, কেন্দ্র-রাজ্য বিবাদে (কনফ্লিক্ট) দেশের সংসদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। শিক্ষা বিষয়টির সাথে যেহেতু সার্বিকভাবে জড়িত কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক, কেরালা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফতোয়াকে সার্বিক শিক্ষার গৈরিকীকরণের গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে মনে করলে তা খুব ভুল হবে কি?
সুতরাং এখনই সাবধান হাওয়া প্রয়োজন। দেরি করলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যেতে পারে। মুক্তচিন্তার গণতান্ত্রিক কাঠামো আজ আক্রান্ত, এবং তাকে বাঁচানো প্রয়োজন। এ বিষয়ে এই মুহূর্তে এগিয়ে আসতে হবে শিক্ষাজগতের বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং বুদ্ধিজীবীদের। কিন্তু এগিয়ে কি তাঁরা আসবেন?
বুদ্ধিজীবী কাদের বলব আমরা? এই প্রশ্নের সবথেকে সাহসী উত্তর সম্ভবত দিয়ে গেছেন বিশিষ্ট মানবতাবাদী, দার্শনিক, প্রাচ্যবিদ এবং কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ও তুলনামূল ভাষাতত্ত্বের প্রাক্তন অধ্যাপক প্রয়াত এডওয়ার্ড সেইড। ১৯৪৮ সাল থেকে বিবিসি রেডিও ফোর আয়োজন করে আসছে রিথ ভাষণমালা(Reith Lecture Series), যার প্রথমটি দেন বার্ট্রান্ড রাসেল। ১৯৯৩ এ অধ্যাপক সেইড সেখানে ছটি ভাষণ দেন, যা পরে বই আকারে প্রকাশিত হয় রিপ্রেজেন্টেশন অফ দ্য ইন্টেলেকচুয়াল নামে। আন্তোনিও গ্রামসি, জঁ পল সার্ত্রে, ইউলিয়েন বেন্দা, থিওডোর এডর্নো এবং আরো বিভিন্ন খ্যাতনামা দার্শনিক ও সোশ্যাল এক্টিভিস্টদের তাত্ত্বিক গবেষণা বিশ্লেষণ করে সেইড সেখানে দেখিয়েছেন বর্তমানের বুদ্ধিজীবীদের অধিকাংশের নৈতিক ক্রমাবনতির একটি পরিষ্কার `ট্র্যাক' থাকে, তাঁরা নিরপেক্ষ সমালোচক হয়ে জীবন শুরু করে ক্রমশই ক্ষমতা ও খ্যাতির ফাঁদে জড়িয়ে রাষ্ট্রের ধামাধরা হয়ে পড়েন। সেইডের মতে, বুদ্ধিজীবীদের একটি নির্দিষ্ট সামাজিক দায়িত্ব থাকা প্রয়োজন, তা হলো যে কোনো মূল্যে নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানো। যিনি তা না করবেন, তাকে প্রকৃত বুদ্ধিজীবী বলতে সেইড রাজি নন। কেমন হবেন বুদ্ধিজীবীরা? যাঁরা কিনা "speak the truth to power"!
সেইডের (এবং ফরাসি দার্শনিক ইউলিয়েন বেন্দা`র) ভাষায় বলতে গেলে - Real intellectuals...are supposed to risk being burned at the stake, ostracized, or crucified.
সেইড আরো বলছেন: The hardest aspect of being an intellectual is to represent what you profess through your work and interventions, without hardening into an institution or a kind of automaton acting at the behest of a system.
ভারতবর্ষের শিক্ষার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি অটুট রাখতে, গৈরিকীকরণ রুখতে, মুক্ত চেতনার মানুষকে উৎসাহিত করতে, এবং অবশ্যই গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে পারবেন তাঁরাই, যাঁরা সেইডের সংজ্ঞানুযায়ী বুদ্ধিজীবীর দলে পড়েন। বর্তমান সময়ের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল, আমরা কি বিপদের সময় তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর সাহস রাখি?
(তাপস কুমার দাস মহাকাশবিজ্ঞানী। বর্তমানে ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যুক্ত।মতামত ব্যক্তিগত))