"অন্য দেশে হওয়া যুদ্ধ সংক্রান্ত বই" কেন তিনি বাড়িতে রেখেছেন, এই নিয়ে বুধবার বম্বে হাইকোর্টের বিচারকের প্রশ্নের মুখে পড়লেন এলগার পরিষদ মামলায় অভিযুক্ত এক কর্মী। সুবিখ্যাত সেই বইটির নাম? 'ওয়ার অ্যান্ড পিস', লেখক, প্রবাদপ্রতিম রাশিয়ান সাহিত্যিক লিও টলস্টয়। আপাতত এই প্রশ্ন করার জন্য ওই বিচারকের সমালোচনায় মুখর হয়েছে দেশের বিভিন্ন মহল।
অভিযুক্ত ভার্নন গনজালভেজের জামিনের আবেদনের শুনানি চলাকালীন ওই প্রশ্ন করেন বিচারপতি সারঙ্গ কোতোয়াল। গত বছরের ২৮ অগাস্ট সিপিআই-মাওইস্ট সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুণে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন গনজালভেজ।
তবে এতেই নিরস্ত থাকেন নি বিচারপতি কোতোয়াল। গনজালভেজের বাড়ির তল্লাশি নিয়ে যেসব বই, নথিপত্র এবং সিডি পাওয়া গিয়েছে বলে পুলিশের দাবি, সেই তালিকায় রয়েছে 'আরসিপি রিভিউ', 'মারক্সিস্ট আর্কাইভস' এবং কবীর কলা মঞ্চের 'রাজ্য দমন বিরোধী', এবং 'জয় ভীম কমরেড' শীর্ষক একটি তথ্যচিত্র। সেই তালিকার প্রেক্ষিতে কোতোয়াল বলেন, "এসবের নাম দেখেই বোঝা যাচ্ছে এগুলি রাষ্ট্রবিরোধী।"
আরও পড়ুন: ভীমা-কোরেগাঁও মামলায় ফের স্বস্তিতে নওলাখা-তেলটুম্বড়ে-স্বামী
'ওয়ার অ্যান্ড পিস' নিয়ে বিচারপতি কোতোয়ালের প্রশ্ন, "নিজের বাড়িতে অন্য দেশে হওয়া যুদ্ধ সংক্রান্ত বই কেন রাখবেন?" এছাড়াও আদালত গনজালভেজের উকিলকে নির্দেশ দেয় যে আজ, অর্থাৎ বৃহস্পতিবার শুনানি চলাকালীন যেন তিনি তল্লাশিতে পাওয়া বই এবং নথিপত্রের বিষয়টি উদ্দেশ করেন।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, ১৮৬৯ সালে প্রকাশিত 'ওয়ার অ্যান্ড পিস' উপন্যাসের মূলে রয়েছে ফ্রান্সের রাশিয়া আক্রমণ এবং তার পরবর্তী সময়ের কাহিনী। প্রভূত জনপ্রিয় এবং অসংখ্য ভাষায় অনূদিত বইটি বিশ্বসাহিত্যের একটি 'মাস্টারপিস' হিসেবে ধরা হয়।
গতবছরের অগাস্টেই গ্রেফতার হন আরও চার কর্মী, সুধা ভরদ্বাজ, ভারভারা রাও, অরুণ ফেরেরা এবং গৌতম নওলাখা। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা সরকারের পতন ঘটাতে সিপিআই-মাওইস্ট সংগঠনের 'অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট ফ্রন্ট' গঠন করার বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ ছিলেন।
আরও পড়ুন: এলগার পরিষদ: সোমা সেন সহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে পাঁচহাজার পৃষ্ঠার চার্জশিট
ওই কর্মীদের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, ভীমা-কোরেগাঁও যুদ্ধের ২০০ বছর পূর্তির একদিন আগে, অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭ সালে যে এলগার পরিষদের আয়োজন হয়, তার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন তাঁরা। পুণে পুলিশের দাবি, পরিষদে দেওয়া কিছু ভাষণ ২০০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান চলাকালীন হিংসার জন্য অনেকাংশে দায়ী, যে হিংসায় একজনের মৃত্যুও হয়।
গনজালভেজের সিনিয়র কৌঁসুলি মিহির দেসাইয়ের সওয়াল চলাকালীন বিচারপতি কোতোয়াল ওই কর্মীর বাড়ি থেকে পাওয়া একটি ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস এবং কিছু সিডি-তে কী কী রয়েছে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান। অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর অরুণা পাই বলেন এখন পর্যন্ত ওই ডিভাইসে কিছু পায় নি তদন্তকারী সংস্থা, অপেক্ষা চলছে ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির রিপোর্টের। সিডি নিয়ে বিচারপতি কোতোয়ালের প্রশ্ন, "সিডিগুলি দেখেছেন? কী রয়েছে সিডিতে? যদি ব্ল্যাঙ্ক সিডি হয়? আপনার কি মনে হয় না যে সিডি-তে কী আছে তা দেখা জরুরি?"
চার্জশিটে যে সিডি-তে কী আছে তার উল্লেখ নেই, সেকথা মনে করিয়ে দিয়ে বিচারপতি কোতোয়াল বলেন, "অপরাধমূলক কিছু সিডি-তে থাকলে তা দেখানো জরুরি। যদি তা না পারেন, তবে সিডি বাজেয়াপ্ত করে কী লাভ?"