লাল বেনারসি, রক্তচন্দনের টিপ, পায়ে আলতা, মাথায় ফুলের মুকুট নিয়ে আগামী দুর্গাষ্টমীর দিন পুজিতা হবেন কুমারী। শুনলে মনে হবে, এ আবার নতুন কী! ঠিকই, এ পর্যন্ত তো সত্যি কোনো অভিনবত্ব নেই। তবে দুর্গাপুজোর অষ্টমীর দিন চার বছর বয়সী যে বালিকা কুমারী রূপে পুজিতা হবে, তার নাম ফতেমা। হ্যাঁ, এই তুমুল সাম্প্রদায়িক অসহিষ্ণুতার সময়ে এক মুসলিম বালিকাকে কুমারী রূপে পূজা করার বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে বাগুইআটির অর্জুনপুরের দত্তবাড়ি। ফতেমাকে 'কালিকা' রূপে সিংহাসনে বসিয়ে আরাধনা ও পূজার্চনা করবেন দত্তবাড়ির কুলবধূ মৌসুমী দত্ত। তাঁর কথায়, "যে ধর্মের নামে বিদ্বেষ সঞ্চিত করে, ঈশ্বরের অর্ঘ্য থেকে সে বঞ্চিত হয়। আমরা ভগবানের আশীর্বাদ থেকে বঞ্চিত হতে চাই না। অষ্টমীর দিন তাই দুর্গা রূপে বরণ করে নেব ফতেমাকে।"
পেশায় আইনজীবি মৌসুমী দেবী জানান, তাঁদের পুজোর বয়স মাত্র পাঁচ বছর। ২০১২ সালে পাড়ার থিম পুজোয় কৃষ্ণনগর থেকে দুর্গা প্রতিমা বানিয়ে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু সেই প্রতিমায় পুজো করতে আপত্তি জানান পাড়া প্রতিবেশীরা। কথা কাটাকাটির মাঝে তখন সেই প্রতিমা বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। তার পরের বছর থেকে দত্ত বাড়িতে শুরু হয় তন্ত্রমতে দুর্গাপুজো।
আরও পড়ুন: খুঁটি পুজোয় মিষ্টি মুখ করালেন জিশান-রেহান-জুলফিকরেরা
মৌসুমী দেবী বলেন, "২০১২ সালে মহালয়ার আগের দিন আমি মা দুর্গার স্বপ্নাদেশ পাই। তিনি প্রবেশ করতে চান আমার বাড়িতে। আমার গুরুজিও বলেন পুজো করার কথা। তখন খুব চিন্তায় পড়ে যাই, দুর্গাপুজোর মতো এত বড় পুজো বাড়িতে করব কেমন করে? পাঁচদিন ধরে মাকে সেবা দেওয়া মুখের কথা নাকি! কিন্তু অবশেষে ঠাকুরের ইচ্ছায় সেইবছরই শুরু হয় দত্তবাড়ির পুজো।"
মৌসুমী দেবী আরও জানান, "প্রথম থেকেই দত্তবাড়িতে কুমারী পুজোর আয়োজন করা হয়। সেবছর এক ব্রাহ্মণকন্যাকে পুজো করি, তার পরের বছর অব্রাক্ষণ বাড়ির মেয়ে, ২০১৪ সালে ডোম পরিবারের এক শিশু কন্যা, আর গতবছর ফের একবার এক ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়েকে কুমারী হিসাবে পুজো করি। বাড়ির সকলের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্তে আসি যে দুর্গাপুজোয় কোনো জাতপাতের ভেদাভেদ রাখব না আমরা। সেইমতো এবছর আমরা মুসলিম শিশুকন্যাকে পুজো করার সিদ্ধান্ত নিই।"
আরও পড়ুন:নিজের কণ্ঠের উপর আস্থা আছে: রানু মন্ডল
কিন্তু সিদ্ধান্ত নিলেই তো হলো না, কোন মুসলিম পরিবার রাজি হবেন তাঁদের মেয়েকে দিতে? "খোঁজ করতে শুরু করি," বলেন মৌসুমী দেবী। অবশেষে কামারহাটির বাসিন্দা মহম্মদ ইব্রাবিমের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটে। তিনি এককথায় রাজি হয়ে যান। তাঁর এক ভাগ্নি থাকে আগরায়। বয়স চার, নাম ফতেমা। এই ছোট্ট খুদে এখন মামাবাড়ি ঘুরতে কলকাতায় এসেছে। তাকেই অষ্টমীর দিন বরণ করে নেবে দত্তবাড়ি। তারপর তাকে লাল টুকটুকে বেনারসি, চন্দন, ফুলের মালা দিয়ে দুর্গাপ্রতিমার মতো করে সাজিয়ে কুমারী পুজো করা হবে। সে দিনটির দিকেই তাকিয়ে দুই পরিবার।