বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছের লোক বলে পরিচিত ছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব। আচমকা তাঁকে অপসারণ করেছে বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্ব। মুখ বাঁচাতে বিপ্লব অবশ্য বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্বের শেখানো বুলি আউড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ। প্রকাশ্যে বলছেন, 'দায়িত্বশীল কর্মীদের দল সংগঠনে আনতে চেষ্টা চালাচ্ছে। সংগঠন ঠিক থাকলে সরকার টিকবে। আমার মত লোকেদের দলের জন্য কাজ করা উচিত। তাতেই বিজেপির উপকার হবে।' যদিও বিপ্লবের এই মন্তব্যে প্রশ্ন উঠছে, মানিক সাহার মতো নেতারা যাঁরা এতদিন ত্রিপুরা বিজেপিকে সামলাচ্ছিলেন, তাঁরা কি তাহলে যথেষ্ট দায়িত্বশীল ছিলেন না?
ত্রিপুরা বিজেপির অন্দরে কান পাতলে অবশ্য শোনা যাচ্ছে অন্য গল্প। আর, সেটা উপজাতি ভোটের গল্প। দলের প্রাক্তন নেতা সুদীপ রায়বর্মণ বিজেপি ছেড়েছেন বিপ্লব দেবের সঙ্গে মনোমালিন্যের জেরে। সুদীপ বেশ কিছুদিন তৃণমূলের সঙ্গে মাখামাখি করে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। তার চেয়েও বড় অভিযোগ, দলের উপজাতি নেতাদের সঙ্গে বিপ্লব দেবের সম্পর্ক ভালো ছিল না। অথচ আগামী বছর ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচন।
ত্রিপুরার ১৯টি জেলায় উপজাতি ভোটেই নির্ধারণ হবে ফলাফল। তার ওপর ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে ত্রিপুরার রাজবাড়ির কর্তা প্রদ্যোৎকিশোর মানিক দেববর্মার ত্রিপ্রা মোথা পার্টি। যার সঙ্গে রয়েছে ১৪টি উপজাতি সংগঠন। ত্রিপ্রা মোথা ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে, তারা আগামী বছর ৩৫টি আসনে প্রার্থী দেবে। তার মধ্যে ২০টি তপশিলি উপজাতি সংরক্ষিত। বাকিটা ১৫টি সাধারণ।
এই পরিস্থিতিতে তড়িঘড়ি বিপ্লবের অপসারণ ছাড়া বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে উপায় ছিল না। বর্তমানে মানিক সাহার নেতৃত্বে ত্রিপুরা মন্ত্রিসভায় রয়েছেন পাঁচ জন ক্যাবিনেট উপজাতি মন্ত্রী। তার মধ্যে উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মা ত্রিপুরার রাজবাড়ির সদস্য। এছাড়াও আছেন রামপদ জামাতিয়া, প্রেমকুমার রিয়াং, এনসি দেববর্মা ও সান্ত্বনা চাকমা। পরিস্থিতি দেখে বিপ্লবের অপসারণের পর দলের অনেকে মনে করেছিলেন, কোনও উপজাতিকেই হয়তো মুখ্যমন্ত্রী পদে বসানো হবে। অনেকে জিষ্ণু দেববর্মার কথা ভেবেছিলেন। কারণ, জিষ্ণু দেববর্মা বিজেপির শরিক ইন্ডিজেনাস পিপলস ফ্রন্ট অফ ত্রিপুরা (আইপিএফটি)-র প্রধান। কিন্তু, তাতে বিজেপির হাত থেকে ক্ষমতা বেরিয়ে যেত। আর, বিপ্লব জমানায় বিজেপির সঙ্গে আইপএফটির মতপার্থক্য বাড়ছিল।
আরও পড়ুন- ‘তল্লাশির সময়টা আকর্ষণীয়’, CBI-কে নিশানা করে কীসের ইঙ্গিত পি চিদাম্বরমের
এই পরিস্থিতিতে বিপ্লবের অপসারণই শ্রেয় মনে করেছেন শীর্ষ নেতৃত্ব। এমনটাই মত ত্রিপুরা বিজেপির একাংশের। তবে, শুধু বিপ্লবকে সরিয়েই ক্ষান্ত থাকেননি বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা। দলের আদিবাসী সংগঠন জনজাতি মোর্চার রাজ্য সভাপতি পদেও তাঁরা বদল এনেছেন। লোকসভা সাংসদ রেবতী ত্রিপুরার বদলে জনজাতি মোর্চার রাজ্য সভাপতি করা হয়েছে বিকাশ দেববর্মাকে। কিন্তু, ত্রিপ্রা মোথা যেভাবে আদিবাসীদের সমর্থন পাচ্ছে, তাতে এত বদলের পরও স্বস্তি পাচ্ছেন না নাড্ডা-শাহরা।
Read full story in English