ভারত এমনিতেই আফগানদের কাছে দ্বিতীয় ঘর। বারবার আফগান ক্রিকেটাররা সর্বসমক্ষে সেই কথা স্বীকার করেছেন। আইপিএলে আফগান তারকাদের রমরমা। রশিদ খান, মুজিব উর রহমান, রহমনুল্লাহ গুরবাজ, নূর আহমেদ, মহম্মদ নবিরা আইপিএলে কাঁপান বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজির জার্সিতে।
আফগানিস্তানে কার্যত ক্রিকেট পরিকাঠামোই নেই। এর আগে যুদ্ধে দীর্ণ আফগান ক্রিকেট দল ভারতের মাটিতেই হোম ম্যাচ খেলত। বিসিসিআইয়ের তরফে আফগানিস্তানের হোম ম্যাচের জন্য বরাদ্দ করে দেওয়া হয়েছিল গ্রেটার নয়ডার শহিদ বিজয় সিং পাঠক স্পোর্টস কমপ্লেক্স, দেরদুনের রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামকে।
ভারতে বরাবর আফগানিস্তান ব্যাপক জনসমর্থন পেয়ে থাকে। দিল্লিতে ইংল্যান্ড বধের পর 'দিল-ওয়ালা' দিল্লিকে প্রশংসায় ভাসিয়ে দিয়েছিলেন আফগান তারকারা। এবার চেন্নাইয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষেও একই চিত্র। পুরো স্টেডিয়ামই এককাট্টা হয়ে সমর্থন করল আফগানিস্তানকে। সমর্থক-শূন্য পাকিস্তানকে হারিয়ে রশিদ খানরা ভারতীয়দের ধন্যবাদ দিতে ভুললেন না।
পাকিস্তানকে ঐতিহাসিক ম্যাচে হারানোর পর আফগানিস্তানের স্পিন মাস্টার বলে দিলেন, "ম্যাচে আমাদের সমর্থনের জন্য ভারতকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। জয়ের জন্য ভারতীয়দের সমর্থন অনুঘটকের কাজ করেছে। সমর্থকরা সবসময়েই আমাদের পিছনে ছিলেন। ভারতে যে জনসমর্থন পাচ্ছি, তা ব্যাপক উপভোগ করছি আমরা।"
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে এর আগে সাতটা ওয়ানডেতে একবার-ও হারাতে পারেনি। সেই পরিসংখ্যান থেকে রশিদ খানরা মুক্তি পেলেন একদম বিশ্বকাপের মত মঞ্চে। আর এতেই উদ্দাম সেলিব্রেশন চলছে আফগান শিবিরে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ম্যাচের পরেই এক ভিডিও ভাইরাল হয়, যেখানে রশিদ খানদের দেখা যাচ্ছে টিম বাসেই বলিউডি গানে লাগামছাড়া উদযাপন পর্ব চলছে। 'লুংগি ডান্স' গাইতেও দেখা যায় রশিদকে। এমনকি জয়ের পর মাঠে ইরফান পাঠানের সঙ্গেই নাচানাচি করতে দেখা গিয়েছিল আফগান তারকাকে।
আফগানিস্তানের জয়ে এতটাই উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন পাঠান যে ধারাভাষ্যকারের কাজ স্থগিত রেখে সরাসরি আফগানিস্তানের উদযাপন পর্বে সামিল হন। পরে পাঠান নিজের সঙ্গে রশিদের নাচের ভিডিও পোস্ট লড়ে ক্যাপশনে লেখেন, "রশিদ খান নিজের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছে। আমি নিজেরটা রক্ষা করেছি। ওয়েল ডান ছেলেরা!"
এমনকি পাকিস্তানকে হারানোর আনন্দে উদ্বেল হয় গোটা আফগানিস্তান। কাবুলের রাস্তাতেই চলে গোটা রাত সেলিব্রেশন।
চেন্নাইয়ের স্পিন সহায়ক পিচে রশিদ খান, মহম্মদ নবি, মুজিব-উর রহমান তো ছিলেন-ই ফজলহক ফারুখিকে বসিয়ে চতুর্থ স্পিনার হিসাবে আফগানিস্তান খেলিয়ে দেয় নূর আহমেদকে। আর ১৮ বছরের নূর-ই ম্যাচের ট্রাম্পকার্ড হয়ে দাঁড়ান। তিন উইকেট নিয়ে যান তিনি। ১০ ওভারে মাত্র ৪৯ রানের বিনিময়ে ৩ উইকেট তুলে নেন তিনি। আউট করেন হাফসেঞ্চুরিয়ন ওপেনার আব্দুল্লা শফিক, মহম্মদ রিজওয়ান এবং শেষে বাবর আজমকে। প্রতিপক্ষের সেরা তিন ব্যাটারকে ফিরিয়ে আফগানিস্তানকে লড়াইয়ে রেখেছিলেন তিনি।
আফগানিস্তান স্পিনারদের দিয়ে ৩৮ ওভার-ই বোলিং করিয়ে দেয়। রশিদ খান উইকেট না পেলেও মাত্র ৪১ রান দিয়েছেন। অভিজ্ঞ মহম্মদ নবি মাত্র ৩১ রান খরচ করে ১ উইকেট তুলে নিয়েছেন। একমাত্র মুজিব-উর রহমানকেই একটু বিবর্ণ লেগেছে।
পাকিস্তানকে ২৮২ রানে আটকে রাখার পর আফগানিস্তানের লক্ষ্য ছিল পার্টনারশিপ গড়ে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে সেরা স্কোর চেজ করা। সেটাই করলেন আফগান ব্যাটাররা। পাওয়ার প্লে-তে শাহিন আফ্রিদি, হাসান আলি, হ্যারিস রউফদের ছাতু করে দেন দুই আফগান ওপেনার রহমনুল্লাহ গুরবাজ এবং ইব্রাহিম জাদরান। দুজনে ১৩০ রানের পার্টনারশিপ গড়ে দলকে রান চেজের শক্ত পাটাতন দিয়ে যান। এরপরে দ্বিতীয় উইকেটে রহমত শাহকে সঙ্গে নিয়ে ইব্রাহিম জাদরান আরও ৬০ রান যোগ করেন। তবে হাসান আলি ইব্রাহিমকে ফেরানোর পর অল্প সময়ের জন্য চাপে পড়ে গিয়েছিল আফগানিস্তান। তবে ক্যাপ্টেন হাসমাতুল্লাহ শাহিদি এবং রহমত শাহ অপরাজিত থেকে ৯৬ রানের জুটি গড়ে পাকিস্তানকে পরাজয়ের স্বাদ দেন।
ইংল্যান্ডের পর পাকিস্তানকে বধ করে হঠাৎ করেই সেমিফাইনালের পৌঁছনোর ক্ষীণ সম্ভবনাও জাগিয়ে তুলেছে আফগানিস্তান। অন্যদিকে, হারের হ্যাটট্রিকের সঙ্গেই বিশ্বকাপ থেকে আগাম বিদায়ের মুখে দাঁড়িয়েছে পাকিস্তান। সেমি ফাইনাল অনেকটাই দূরের রাস্তা মনে হচ্ছে সোমবারের অপ্রত্যাশিত হারের পর। নেদারল্যান্ডস এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কঠিন পরিস্থিতিতে থেকে জয় পেয়েছিল পাকিস্তান। তবে ভারত, অস্ট্রেলিয়া এবং সোমবার আফগানিস্তানের কাছে হারের হ্যাটট্রিক করতেই সেমিফাইনালে পৌঁছনো নিয়ে পাকিস্তানের চূড়ান্ত সংশয় তৈরি হয়েছে।