চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশনের সাধারণ বিধি মোতাবেক কলকাতা পুলিশের কমিশনার হিসেবে বিদায় নেন রাজীব কুমার। তাঁর পরবর্তী পোস্টিং হয় সিআইডি-র অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল হিসেবে। কিন্তু মার্চের প্রথম দিনেই রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের জারি করা এক বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)-এর শীর্ষেও বসানো হয়েছে তাঁকে। এতেই শেষ নয়, ডিরেক্টরেট অফ ইকনমিক অফেন্সেস বা আর্থিক অপরাধ দমন শাখার দায়িত্বও দেওয়া হয় তাঁকে, যে পদে এর আগে ছিলেন বিশাল গর্গ, যিনি বর্তমানে হাওড়ার পুলিশ কমিশনার নিযুক্ত হয়েছেন।
এবার এলো নাটকে নয়া মোড়। সূত্রের খবর অনুযায়ী, বুধবার রাতে নবান্ন থেকে জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, কলকাতা পুলিশের এসটিএফ এবং আর্থিক অপরাধ দমন শাখার প্রধান হিসেবে রাজীব কুমারের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছে রাজ্য সরকার।
আরও পড়ুন: সিআইডির পর এবার এসটিএফের শীর্ষেও রাজীব কুমার
কলকাতা পুলিশের উচ্চপদস্থ মহলের বক্তব্য, প্রক্রিয়াগত সমস্যার কারণেই এই ত্রিস্তরীয় পোস্টিং টিকিয়ে রাখা সম্ভব হতো না। নজিরবিহীনভাবে, এই প্রথম রাজ্য পুলিশের উচ্চপদস্থ কোনও আইপিএস অফিসারকে সমান্তরালভাবে কলকাতা পুলিশের কোনও দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই ধরনের নিয়ম বহির্ভূত ব্যবস্থার নির্বাচন কমিশনের অনুমোদন পাওয়ার কথা নয়। এই মর্মে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার আরিজ আফতাবের কাছে অভিযোগও জানান বিজেপি নেতা মুকুল রায়।
এছাড়াও পুলিশ মহলের বক্তব্য, এসটিএফ যেহেতু কলকাতার পুলিশেরই অধীনস্থ একটি শাখা, সেই শাখার দায়িত্ব নিলে রাজীব কুমারকে কলকাতার নতুন নগরপাল অনুজ শর্মার অধীনে কাজ করতে হতো, যিনি পদমর্যাদায় তাঁর জুনিয়র। তা না হলে আবার আরেক ধরনের সমস্যা দেখা দিত, কারণ অনুজ শর্মাকে রাজীব কুুমারের কথামতো চলতে হতো। অর্থাৎ কলকাতা পুলিশের কমিশনার তাঁরই অধীনস্থ শাখা সংক্রান্ত কোনো স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন না।
আরও পড়ুন- মমতার দেওয়া মেডেল ফেরালেন ভারতী ঘোষ
এইসব নানা সমস্যার প্রেক্ষিতেই অতিরিক্ত দায়ভার থেকে তাঁকে মুক্তি দিয়ে আপাতত শুধু সিআইডি-তেই রাখা হয়েছে রাজীব কুমারকে।
উল্লেখ্য, ফেব্রুয়ারির গোড়ায় রাজীব কুমারকে কেন্দ্র করেই নির্বাচন কমিশনের চোখ রাঙানির মুখে পড়তে হয় রাজ্য সরকারকে। ভোট প্রস্তুতি নিয়ে শহরে কমিশনের ফুল বেঞ্চের বৈঠকে যোগ না দিয়ে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের রোষ অর্জন করেন কলকাতার তৎকালীন পুলিশ কমিশনার। নগরপালের অনুপস্থিতি নিয়ে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে জবাব তলব করে কমিশন। নগরপালের তিন বছরের মেয়াদ শেষ, তাই ছুটিতে থাকায় বৈঠকে যোগ দিতে পারেন নি বলে সে সময় সাফাই দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।