জিয়াগঞ্জে শিক্ষক পরিবার খুনে গ্রেফতার রাজমিস্ত্রি উৎপল বেহেরা। খুনের নেপথ্যে বিমা সংক্রান্ত কোনও লেনদেন রয়েছে বলে মনে করছে পুলিশ। সূত্রের খবর, সোমবার রাতভর দফায় দফায় জিয়াগঞ্জ থানায় ডেকে জেরা করা হয় খুনের ঘটনায় সন্দেহভাজন কয়েকজন ব্যক্তিকে। রাতে সিআইডির প্রতিনিধিদল রামপুরহাটের একাধিক জায়গায় হানা দেয়। এদিন নিহত বন্ধুপ্রকাশ পালের স্ত্রী বিউটি পালের বাবাকে রামপুরহাটের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সৌভিক বণিকের সামনে বসিয়ে জেরা করা হয়।
আরও পড়ুন: ‘আমরা জানতাম, ও ভবিষ্যতে ভালো কিছু করবে’ ফিরে দেখলেন অভিজিতের মাস্টারমশাই
আর্থিক লেনদেন ও পারিবারিক শত্রুতার জেরে এই খুনের ঘটনা বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছে পুলিশ। এর আগে একাধিক ব্যক্তিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চালায় পুলিশ। একটা সময় পুলিশ মনে করছিল ঝাড়খণ্ড থেকে দুষ্কৃতীরা এসে খুন করেছে। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় উৎপল বেহেরাও। জেলা পুলিশ সুপার জানান, 'উৎপলের থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গিয়েছে। তদন্তে জানা গিয়েছে বন্ধুপ্রকাশের কাছে ২৪ হাজার ১৬৭ টাকা পেত উৎপল বেহরা। প্রিমিয়ামের ওই টাকা জমা করেনি বন্ধুপ্রকাশ। সেই টাকা ফেরত চাওয়াতে শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ নাকি গালিগালাজ করেন উৎপলকে। তার পরেই ওই খুনের পরিকল্পনা করে সে। দশমীর দিন বন্ধুপ্রকাশের বাড়ি যায় উৎপল। পূর্ব পরিচিত হওয়ায় তাকে বাড়ির মধ্যে আসতে বলা হয়। সেই সুযোগেই শিক্ষকের পরিবারকে খুন করে উৎপল।' জেরায় উৎপল কবুল করেছে দু সেট জামা নিয়ে গিয়েছিল সে। দুষ্কৃতীকে চিনতে যাতে অসুবিধা হয় তার জন্য খুনের পর এক সেট নিহত বন্ধপ্রকাশের বাড়ির কাছেই রেখে আসে সে।
মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, 'ধৃত জেরায় স্বীকার করেছে সে দোকান থেকে হাঁসুয়া কিনে নিয়ে গিয়ে খুন করেছে। জিয়াগঞ্জে তার দিদির বাড়ি। পুজোর সময় উৎপল সেখানেই ছিল।দিদির বাড়িতে বসেই শিক্ষক পরিবার খুনের নকশা বানায় সে। এরপর পরিকল্পনা মত খুন করে ওই রাজমিস্ত্রি।'
গত মঙ্গলবার, বিজয়া দশমীর দিন বেলা ১১টা নাগাদ জিয়াগঞ্জ শহরের লেবুবাগানে বাড়ির ভেতর থেকে ঢুকে খুন করা হয়েছিল প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পাল, তাঁর সন্তানসম্ভবা স্ত্রী বিউটি মণ্ডল পাল ও তাঁদের ৬ বছরের ছেলে বন্ধুঅঙ্গন পালকে। বাড়ির শোওয়ার ঘরের খাটের উপর দেহ মিলেছিল বন্ধুপ্রকাশবাবুর। মেঝেতে পড়েছিল তাঁর ছেলের রক্তাক্ত দেহ। পাশের ঘর থেকে পাওয়া গিয়েছিল বন্ধুপ্রকাশবাবুর স্ত্রী বিউটির ক্ষতবিক্ষত দেহ।
এই হত্যাকাণ্ড ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল গোটা রাজ্যজুড়ে। বন্ধুপ্রকাশবাবু রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবকের কর্মী হওয়াতেই তাঁর পরিবারকে শেষ করে দেওয়া হয়েছে বলে বিজেপির তরফে অভিযোগ করা হয়। হত্যাকাণ্ডের সিবিআই তদন্তের দাবিতে সরব হন বিজেপি নেতৃত্ব। তবে প্রথম থেকেই এই খুনের সঙ্গে রাজনীতির যোগ কার্যত উড়িয়ে দেন জেলার পুলিশকর্তারা। টাকা পয়সা নিয়ে গন্ডগোলের জেরেই এই খুন এমনটা আঁচ পেয়ে বীরভূমের সিউড়ি থেকে আটক করা হয়েছিল বন্ধুপ্রকাশবাবুর এক বন্ধু সৌভিক বণিককে। আটক করা হয়েছিল বন্ধুপ্রকাশবাবুর বাবা অমর পালকেও।
আরও পড়ুন: জন সুরক্ষা আইনেই আটক ওমর আবদুল্লা ও মেহেবুবা মুফতি: অমিত শাহ
উৎপল বেহেরার সঙ্গে অন্য কেউ এই হত্য়ার সঙ্গে যুক্ত কিনা তাও তদন্চতে খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
Read the full story in English