চাকরির দাবিতে সল্টলেকে করুণাময়ীর রাস্তায় শুয়ে-বসে অনশন করছেন ২০১৪-এর টেট উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীরা। আর ছেলের আন্দোলনের খবর শুনে দেড়শো কিলোমিটার দূরে বাঁকুড়ার ওন্দাতে বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন সমীরের মা বেলা দন্ডপাট। অনশনকারীরা নিয়োগে মুখ্য়মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। তাঁরা মানছেন না পর্ষদ সভাপতি বক্তব্য়, তীব্র প্রতিবাদ করছেন অনশনকারীরা।
নিয়োগের দাবিতে এক জামাকাপড়েই সোমবার বাড়ি থেকে সল্টলেকে এসেছেন বাঁকুড়ার ওন্দার সমীর দন্ডপাট। পকেটে নেই অর্থ। এদিকে তাঁর অনশনের খবর শুনে বাড়িতে মা বেলা দন্ডপাট চোখের জল ধরে রাখতে পারছেন না। বন্ধ করেছেন খাওয়া। সমীর বলেন, 'আমরা এখানে সবাই এক জামাকাপড়ে এসে আর বাড়ি ফিরিনি। নিয়োগের দাবিতে লাগাতার অনশনে বসেছি। এদিকে বাড়িতে মা কান্নাকাটি করছেন। অনশনের কথা শুনে মা কাল দুপুর থেকে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।'
সংসার কী করে চলছে? সমীরের কথায়, 'আমি টিউশনি পড়িয়ে নিজের হাতখরচ জোগাড় করি। বাড়িতে দুটো গাই আছে। বাবা দেখাশোনা করে। সেখান থেকে যা আয় হয়। কোনও জমিও নেই। কোনওরকমে দিনযাপন চলছে।' মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইছেন সমীররা।
সল্টলেকের করুণাময়ীতে কয়েকশো টেট উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রী সোমবার থেকে অনশনে বসেছেন। বুধবার অনশন তিন দিনে পড়ল। সেখানে রয়েছেন হুগলির অর্ণব ঘোষও। টানা প্রায় ৫০ ঘন্টা পার হতে চলেছে। এদিকে রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পালের মন্তব্যে যেন ঘৃতাহুতি পড়েছে। পর্ষদ সভাপতি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে রাজনীতির যোগের কথা বলেছেন, একইসঙ্গে তিনি তাঁদের অযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন। আন্দোলনকারীদের বক্তব্যে স্পষ্ট, পর্ষদ সভাপতির মন্তব্যের পর অনশনকারীদের জেদ আরও বেড়ে গিয়েছে।
সমীর বলেন, '২০১৪-তে টেট পরীক্ষা হয়। ২০১৬-তে নিয়োগ শুরু হয়। তখন ৪২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ হয়। সেই সময় নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছিল। ২০২০ সালের ১১ নভেম্বর মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ২০ হাজার ক্যান্ডিডেটের ইন্টারভিউ হয় ২০২১ সালে। তিনি জানিয়েছিলেন প্রথম পর্যায়ে সাড়ে ১৩ হাজার নিয়োগ করবেন, পরবর্তীতে সাড়ে ৩ হাজার নিয়োগ করবেন। আরটিআই করে জানতে পারলাম সাড়ে ১২ হাজার নিয়োগ হয়েছে।'
আরও পড়ুন ‘পরীক্ষায় বসুন, আশা রাখবেন না’, ২০২২ টেট পরীক্ষার্থীদের ‘সাবধানবাণী’ শুভেন্দুর
তাঁর প্রশ্ন, সেক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী আমাদের জন্য সাড়ে ৭ হাজার নিয়োগ বাকি আছে, সেই জায়গায় কেন আমাদের নিয়োগ করা হচ্ছে না? অনশনকারীদের দাবি, 'স্কোরের ব্রেকআপ সহ প্যানেল লিস্ট প্রকাশ করতে হবে। কোর্ট দুর্নীতি খুঁজছে, আমরা নিয়োগ চাই। মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইছি।' তৃতীয়বার ইন্টারভিউ দিতে চাইছেন না আন্দোলনকারীরা। তাঁদের যুক্তি, '২০১৭-এর প্রার্থীদের সঙ্গে অ্যাকাডেমিক স্কোরে পার্থক্য থাকবে।'
আরও পড়ুন রাস্তায় টেট উত্তীর্ণরা, মুখ খুলতে নারাজ মমতা, বললেন- ‘আদালতকে জিজ্ঞাসা করো’
হুগলী থেকে এক পোষাকে সোমবার করুণাময়ীতে এসেছেন অর্ণব ঘোষ। মুখ্য়মন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে রয়েছেন তাঁরা। অর্ণব বলেন, 'আমরা যদি অন্যায্য হই যাঁরা নিয়োগ পেয়েছে তাঁদেরসহ সকলের স্কোর প্রকাশ করা হোক। প্রথমে দুর্নীতির মাধ্যমে যারা নিয়োগ পেয়েছে তাদের বের করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত ছিল। তাছাড়া যে ভাবে আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে রাজনীতির যোগের কথা বলছেন পর্ষদ সভাপতি, আমরা এই মন্তব্যের তীব্র ধিক্কার জানাই। যে রাজনৈতিক নেতৃত্ব আসছেন তাঁরা স্বেচ্ছায় আসছেন। আমরা কাউকে এখানে ডাকিনি। এটা প্রমান করলে অনশন মঞ্চ তুলে দেব। এখানে ৭০ উর্দ্ধ প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক এসেছেন, আমাদের আন্দোলন সমর্থন করতে এসেছেন ৬০ বছরের প্রাইভেট পড়ানো শিক্ষিকাও।' টেট উত্তীর্ণদের অনেকে ৪০ বছর পার করে ফেলেছেন। তাঁদের কথাও ভাবতে হবে বলে অনশনকারীরা দাবি জানিয়েছেন।