‘মানুষের সাথে মানুষের পাশে, আপনিও আসুন আমার সাথে অসহায়দের স্বার্থে’! এই একটাই ট্যাগলাইন, হাতের জাদুতে সোশ্যাল মিডিয়ার আলোয় এনেছেন রানাঘাটের রানু মণ্ডল থেকে জোম্যাটো গার্ল পৌলমী অধিকারীকে। তাঁর দৌলতেই হাজার হাজার মানুষের মোবাইল স্ক্রিনে উঠে এসেছে একের পর এক সমাজের বঞ্চিত, অবহেলিত মানুষজন। তিনি আর কেউ নন, তিনি পৌলমী, রানু মণ্ডলের মত বেশ কয়েকজনের জীবন গড়ার কারিগর অতীন্দ্র চক্রবর্তী।
স্রেফ একটা মানুষের হাতের জাদুতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় রাতারাতি জনপ্রিয় হয়েছিলেন, রানাঘাটের রানু মণ্ডল। আর তারপর রানু মণ্ডলের জনপ্রিয়তা ঠিক কোন পর্যায়ে গিয়েছিল তা সকলেরই জানা। সালটা ২০১৯, নেহাতই শখের বশেই রানাঘাট স্টেশনের রানু মণ্ডলের গানের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করেন অতীন্দ্র, হাজারে হাজারে ভিউ, লাখ লাখ লাইকের বন্যায় মুহূর্তেই সোশ্যাল মিডিয়ার লাইম লাইটে আসেন রানু মণ্ডল। তারপর পেরিয়ে গিয়েছে তিনটি বছর কিন্তু সমাজের বঞ্চিত-অবহেলিত মানুষদের কণ্ঠস্বর সকলের সামনে তুলে ধরতে তার এই বৃহৎ প্রচেষ্টাকে দমিয়ে রাখেননি তিনি।
এখনও পর্যন্ত অতীন্দ্রর হাত ধরে উঠে এসেছে ২২ জন, যার সর্বশেষ সংযোজন জোম্যাটো গার্ল পৌলমী। রানু মণ্ডলের পর আরও একবার পৌলমীকে তাঁর স্বপ্নের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়ার পিছনেও সেই তিনিই। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অতীন্দ্র নিজেই জানালেন, এর পিছনে তার উদ্দেশ্য।
অতীন্দ্র বলেন, “সমাজে এমন অনেক মানুষ রয়েছেন যাদের মধ্যে এমন কিছু ট্যালেন্ট রয়েছে যা একবার দেখে বা শুনেই তাক লাগতে বাধ্য, অনেক সময় এঁদের কাছে ক্যামেরা, পৌঁছাতে পারেনা। আমার উদ্দেশ্য ক্যামেরা যেখানে পৌঁছাতে পারে না, আর যাদের মধ্যে সত্যিকরের প্রতিভা রয়েছে তাদের সেই প্রতিভা সমাজের সামনে তুলে ধরা। তিনি বলেন, নেহাতই ইচ্ছার বশেই, রানাঘাট স্টেশনে ২০১৯ সালে রানু মণ্ডলে গানের একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করি, মুহূর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যায়, আর তারপরের কাহিনী সকলেরই জানা। এরপর থেকেই সমাজের অন্ধকারে থাকা প্রতিভাসম্পন্ন মানুষজনদের প্রচারের আলোয় নিয়ে আসা আমার কাছে একটা নেশার মত। এখনও পর্যন্ত আমার হাতে ভাইরাল হয়েছেন মোট ২২ জন। কেউ যোগ্য সম্মান পেয়েছেন কেউ আবার পাননি। আমার মাধ্যমে কারুর জীবন গড়ছে এটা করতে পেরেই আমি খুশি”।
পৌলমী প্রসঙ্গে অতিন্দ্র বলেন, সোশাল মিডিয়ার যেমন খারাপ দিক রয়েছে, তেমন ভালো দিকও রয়েছে। যে মেয়েটা একদিন ভারতের হয়ে বিশ্বের মঞ্চে ফুটবলের প্রতিনিধিত্ব করেছে, সে এখন অভাবের তাড়নায় জ্যোমাটোর ডেলিভারি করছে। এটা তো আমাদের কাছে লজ্জার। ভিডিওটা সমাজ মাধ্যমে তুলে ধরার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষ ওঁর যন্ত্রণার কথা জানতে পারল। খোদ রাজ্যের ক্রিড়ামন্ত্রী সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। একটা ভিডিও পৌলমীর জীবন বদলে দিল, এর থেকে শান্তি আর কী হতে পারে”।
সাফল্যের পর অনেকেই অতীন্দ্র’র এই বৃহৎ কর্মকাণ্ডকে উপেক্ষা করে গিয়েছেন, সে প্রসঙ্গে অতীন্দ্র বলেন, “আমি যেটা করি স্রেফ নেশার বশেই করি, এর পিছনে আমার কোন উদ্দেশ্যে নেই। তবে সত্যি বলতে উপেক্ষিত হতে খারাপ লাগে। অনেকেই তাদের সাফল্যের পর আমাকে ন্যুনতম ক্রেডিট টুকু দেন না, একটা ক্রেডিট পেলে আজ করার উৎসাহ আরও বহুগণে বেড়ে যায়”।
পারিবারিক ব্যবসা, আর নিজের একটা এনজিও এই নিয়েই অতীন্দ্র’র সাদামাটা জীবন। অতীন্দ্র’র হাতের এমন জাদুকে সেলাম ঠুকেছেন, পড়শি থেকে পরিবার। মেলেনি কোন সরকারি পর্যায়ে স্বীকৃতি, অতীন্দ্র বলেন, সরকারি চাকরি পাওয়ার জন্য আমি এসব করিনা, সবাই যখন এঁদের নিয়ে মাতামাতি করেন সেটাই আমার প্রাপ্তি। রাতারাতি ভোলবদলে দেওয়া, প্রচারের আলোয় নিয়ে আসা এই মানুষটি আজও রয়ে গিয়েছে লাইম লাইটের বাইরেই। তবে অতীন্দ্র’র এই কর্মকাণ্ডকে কুর্নিশ জানিয়েছে সমাজের একটা বড় অংশের মানুষ।