ইউক্রেনে হামলা চালিয়ে বাকি প্রতিবেশীদের ভয় দেখাতে চেয়েছিল রাশিয়া। যাতে পরমাণু বোমার বলে মহাশক্তিধর হয়ে ওঠা রাশিয়ার বিরুদ্ধাচারণ প্রতিবেশীরা না-করে। যাতে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্ররোচনায় পা দিয়ে ন্যাটোয় যোগ না-দেয়। কিন্তু, সময় যত এগোচ্ছে, ততই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, রাশিয়ার এই কৌশল কোনও কাজেই লাগেনি। এবার যেমন ন্যাটোয় যোগ দিতে চলেছে রাশিয়ার অপর প্রতিবেশী ফিনল্যান্ড। বেশ কিছুদিন ধরেই এমনটা শোনা যাচ্ছিল। তা নিয়ে বেশ চাপানউতোরও চলছিল দুই দেশের মধ্যে। কিন্তু, প্রতিবেশী ইউক্রেনকে রাশিয়া আক্রমণ করায় আর মস্কোর ওপর ভরসা রাখতে পারছেন না ফিনিশরা। ফিনল্যান্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তারা ন্যাটোয় যোগ দেবে।
এই ব্যাপারে ফিনিশ প্রেসিডেন্ট সাউলি নিনিসটো পরিষ্কার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে জানিয়েও দিয়েছেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। সেই কারণেই যে ফিনল্যান্ড তাদের নিরপেক্ষ অবস্থান বদলাচ্ছে। ন্যাটোয় যোগ দিতে চাইছে, ফোনে পুতিনকে সেকথাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন ফিনিশ প্রেসিডেন্ট। ফিনল্যান্ডের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের ইতিহাস এই দুই দেশের লম্বা সীমান্তের (১,৩৪০ কিলোমিটার) মতোই দীর্ঘ। বর্তমানে ন্যাটোর সদস্যসংখ্যা ৩০।
নিনিসটো ২০১২ থেকে ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট পদে রয়েছেন। গত ১০ বছর ধরে ইউরোপের যে নেতারা পুতিনের সঙ্গে নিয়মিত কথাবার্তা বলেন, নিনিসটো তাঁদের একজন। ন্যাটোয় যোগদানের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে নিনিসটো জানিয়েছেন, 'পুতিনের সঙ্গে সোজাসাপটা আলোচনা হয়েছে। সহজবোধ্য এবং দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ফিনল্যান্ডের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছি। কোনওরকম বেশি কিছু বলিনি। কারণ, উত্তেজনা এড়ানোই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়েছে। ২০১২ সালে যখন পুতিনের সঙ্গে প্রথম বৈঠক হয়, তিনি নিজেই বলেছিলেন প্রত্যেক স্বাধীন দেশের উচিত, তার সুরক্ষা সর্বোত্তম জায়গায় নিয়ে যাওয়া। এক্ষেত্রেও তাই ঘটতে চলেছে। ন্যাটোয় যোগদানের মাধ্যমে ফিনল্যান্ড তার নিরাপত্তা বাড়াবে। সঙ্গে, দায়িত্বও গ্রহণ করবে। এর অর্থ কারও থেকে সরে যাওয়া নয়।'
আরও পড়ুন- আর্থিক সংকটে বিধ্বস্ত শ্রীলঙ্কার পাশে ভারত, দ্বীপরাষ্ট্রকে ইউরিয়া পাঠাচ্ছে দিল্লি
তবে, রাশিয়া যে বিষয়টি মোটেও খোলামনে নেয়নি, তা স্পষ্ট করে দিয়েছে। রাশিয়ার সরকারি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান রাও নরডিক জানিয়েছে, তারা আর ফিনল্যান্ডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে না। কারণ, ফিনল্যান্ডের গ্রিড অপারেটর প্রতিষ্ঠান ফিনগ্রিড এখনও বিদ্যুতের মূল্য শোধ করেনি। আর, ফিনল্যান্ডের ভূমিকায় যথারীতি খুশি আমেরিকা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রতিক্রিয়ায় বলেন, 'ন্যাটোর মুক্ত দরজা নীতি আর ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের নিজেদের ভবিষ্যৎ, বিদেশনীতি এবং নিরাপত্তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারের প্রতি সমর্থন জানাই।'
Read story in English