Advertisment

সাইরেন শুনলেই আতঙ্কনগরী কিয়েভে পরস্পরকে 'চল পালাই' বলছেন ভারতীয় পড়ুয়ারা

অন্যান্য রাজ্যের মতো বাংলার পড়ুয়ারাও আটকে আছেন ইউক্রেনে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
students_1

কিয়েভের ভারতীয় দূতাবাসের বাইরে পড়ুয়াদের ভিড়।

আতঙ্কনগরী কিয়েভ। শুধু কিয়েভই না। দিনের আলো ফুটতে না-ফুটতেই গোটা ইউক্রেন বদলে গেছে এক আতঙ্কের দেশে। সকাল থেকে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র, গোলা আছড়ে পড়ছে ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলে। কিছুক্ষণ আগেই যা ছিল সাজানো গোছানো বাড়ি। মুহূর্তে গোলার আঘাতের পর মনে হচ্ছে তা যেন কোনও ধ্বংসস্তূপ। অথবা, সেখানে কোনও আগ্নেয়গিরি মুখ খুলেছে। যেখান থেকে লাভা উদগীরণের আগে কালো ধোঁয়া ঢেকে ফেলছে নীল আকাশ।

Advertisment

আর পাঁচ জন ভারতীয়র মতোই ইউক্রেনে পড়তে গিয়েছেন দিল্লির অনুরাগ পুনিয়া। বছর ২২-এর ছেলেটি মেডিক্যালের ছাত্র। এবার চতুর্থ বর্ষ। ইউক্রেনের মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির জন্য প্রতিবছরই বহু ভারতীয় পড়ুয়া চেষ্টা চালান। সেই তালিকায় ছিলেন দিল্লির অনুরাগও। চার বছর আগে তিনি চান্সও পেয়ে যান।

এতদিন ভালোই কাটছিল। যুদ্ধ শুরুর মুখে ভারতীয় দূতাবাসের বার্তা পেয়েছিলেন অবিলম্বে দেশে ফিরতে হবে ইউক্রেনের ভারতীয়দের। সেই বার্তা পাওয়ার পরই বিমানের টিকিট কেটেছিলেন অনুরাগ। বৃহস্পতিবারই তাঁর দেশে ফেরার কথা ছিল। দুপুর দুটোর সময় ছিল বিমানে ছাড়ার সময়। বিমান ধরতেই খারকিভ থেকে ছয় ঘণ্টা বাসযাত্রা করে কিয়েভে পৌঁছন অনুরাগ। কিন্তু, পৌঁছনোর পর দেখতে পান, রাশিয়ার হামলার চোটে বিমানবন্দর, বিমান চলাচল- সবই বন্ধ হয়ে গেছে।

বাস তাঁকে বিমানবন্দরের ঠিক সামনে নামিয়ে দিয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে কিয়েভ শহরের দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। ইতিমধ্যে হামলা বাড়তে থাকায় ইউক্রেনে পরিবহণ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে হেঁটেই অনুরাগকে পৌঁছতে হয় কিয়েভের প্রাণকেন্দ্রে ভারতীয় দূতাবাসে। পৌঁছে দেখেন, সেখানে তাঁর মতো আরও অনেকে। দূতাবাসের সামনে ভারতীয় পড়ুয়াদের লম্বা লাইন। তার মধ্যে যে মেডিক্যাল কলেজে তিনি পড়েন, সেখানকার পড়ুয়ারাও আছেন। সকলেই তাঁর মতো এখন নিরাপদে দেশে ফিরতে চান। কিন্তু, পারছেন না।

দূতাবাসের তরফে ওই পড়ুয়াদের আপাতত স্থানীয় এক স্কুলে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই অস্থির পরিস্থিতির মধ্যে বিকল্প উপায়ে কীভাবে ওই ভারতীয় পড়ুয়াদের দেশে ফেরানো যায়, তা খতিয়ে দেখছে কিয়েভের ভারতীয় দূতাবাস। বেলা যত এগোচ্ছে, কিয়েভের রাস্তা ক্রমশ শুনশান হয়ে পড়ছে। অন্ধকার নামার পর সময় যত এগোবে, সেই শুনশান ভাবটা আরও বাড়বে। তার আগে মাঝেমধ্যে শোনা যাচ্ছে সাইরেনের শব্দ।

সেই শব্দ শুনলেই ভারতীয় পড়ুয়ারা একে অন্যেকে বলে উঠছেন, 'চলো পালাই।' অনুরাগরা ছুটে আশ্রয় নিচ্ছেন স্কুলবাড়ির ভিতরে। বিদেশ মন্ত্রকের কর্তারা পইপই করে বলে দিয়েছেন, যেন কেউ দরজা বা জানালার সামনে না থাকে। কারণ, গোলা স্কুলবাড়িতে আছড়ে পড়লে, সবচেয়ে আগে দরজা বা জানালার সামনে আশ্রয় নেওয়া পড়ুয়াদেরই আহত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অনুরাগ ও তাঁর মতো ইউক্রেনে রয়ে যাওয়া অন্য ভারতীয়রা এখন নিজেদেরকেই প্রশ্ন করছেন, 'এই অবস্থা থেকে ফিরতে পারব তো!' তবে, জবাব দেওয়ার কেউ নেই। কারণ, প্রত্যেকেই একই দুর্দশার মধ্যে কাটাচ্ছে।

একই অবস্থা গোবরডাঙার স্বাগতা সাঁধুখারও। তিন বছর আগে কিয়েভ মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়তে ইউক্রেনে গিয়েছিলেন স্বাগতা। পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, কয়েকদিন আগে তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল। কিছু দিনের মধ্যেই বাড়িতে ঘুরে যাওয়ারও কথা ছিল। কিন্তু, ইউক্রেনের আকাশে অসামরিক বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। রাশিয়ার সাইবার আঘাতে নেটওয়ার্ক ব্যাহত। তাই ফোনেও বাড়ির মেয়েকে প্রথমে পাচ্ছিল না সাঁধুখা পরিবার। ভারতীয় দূতাবাসের সহায়তায় পরে অবশ্য কথা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত কী যে হবে! এই ভেবেই এখন ঘুম হচ্ছে না ইউক্রেনে আটকে থাকা ভারতীয় পড়ুয়াদের পরিবারের লোকেদের।

Read story in English

Ukraine Russia-Ukraine Conflict
Advertisment